Advertisement
২১ মে ২০২৪

বাইপাসে বিপজ্জনক পারাপারের বলি ছাত্রী

ব্যস্ত বাইপাসে কোথাও কোথাও এখনও রয়ে গিয়েছে গার্ডরেল। মেট্রোর কাজের জন্য বসানো সেই গার্ডরেলের কারণে রাস্তার মধ্যেই তৈরি হয়েছে রাস্তা পারাপারের ব্যারিকেড। তবু গার্ডরেলের ফাঁক দিয়েই বিপজ্জনক ভাবে রাস্তা পেরোচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বুধবার সকালে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে তারই মাসুল গুনল বছর বারোর এক ছাত্রী।

দুর্ঘটনার পরে ওই জায়গায় রাস্তা ‘পার করানোর’ তৎপরতা। (ইনসেটে) রীতা সর্দার। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনার পরে ওই জায়গায় রাস্তা ‘পার করানোর’ তৎপরতা। (ইনসেটে) রীতা সর্দার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:১৫
Share: Save:

ব্যস্ত বাইপাসে কোথাও কোথাও এখনও রয়ে গিয়েছে গার্ডরেল। মেট্রোর কাজের জন্য বসানো সেই গার্ডরেলের কারণে রাস্তার মধ্যেই তৈরি হয়েছে রাস্তা পারাপারের ব্যারিকেড। তবু গার্ডরেলের ফাঁক দিয়েই বিপজ্জনক ভাবে রাস্তা পেরোচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বুধবার সকালে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে তারই মাসুল গুনল বছর বারোর এক ছাত্রী। বাইপাসের প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডগামী রাস্তার মোড়ের কাছাকাছি মন্দিরপাড়ায় এই ঘটনার জেরে বেলা ১০টা থেকে প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি দুর্ঘটনার দায় নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে পুলিশ ও মেট্রো প্রকল্পের ঠিকাদার সংস্থার মধ্যে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে খবর, অন্য দিনের মতো এ দিনও প্রাইভেট টিউশনে বেরিয়েছিল রীতা সর্দার (১২) নামে ওই কিশোরী। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা পেরোনোর সময়ে গড়িয়াগামী একটি সরকারি বাস বেপরোয়া গতিতে এসে ধাক্কা দেয় তাকে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় রীতা। ঘটনাস্থলের অদূরেই ছিলেন পূর্ব যাদবপুর থানার ট্রাফিক সার্জেন্ট দেবজিৎ অধিকারী। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি। পৌঁছয় কসবা ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ। কাছেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রীতাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পরে বাসটিকে আটক করে পুলিশ।

মৃতার মামা বাবুসোনা অধিকারী জানান, ছোটবেলা থেকেই মন্দিরপাড়ায় মামার বাড়িতে থাকত স্থানীয় সুচেতানগর বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী রীতা। বাইপাস পেরিয়ে সে একাই রাস্তার ওপারে পড়তে যেত। এ দিন হঠাৎই মামারবাড়িতে খবর যায়, রীতা বাসে চাপা পড়েছে। বাবুসোনার অভিযোগ, ‘‘এই রাস্তা দিয়ে অনবরত এলাকার মানুষ সকাল-সন্ধ্যা রাস্তা এপার-ওপার করছেন। অথচ এখানে পুলিশের কোনও নজরদারি নেই। ফলে দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। পুলিশি নজরদারি এবং সিগন্যালের ব্যবস্থার দাবিতে তাই অবরোধ করি।’’

গার্ডরেল খোলার ব্যাপারে ঠিকাদারি সংস্থাকে কী জোর করেছিলেন?

বাবুসোনা অধিকারী বলেন, ‘‘আমরা ঠিকাদারি সংস্থাকে চাপ দিই ঠিকই। কারণ এটাই আমাদের তাড়াতাড়ি যাওয়ার রাস্তা। তাঁরা একটা অংশ খুলেও দেন। কিন্তু পুলিশের নজরদারি বা সিগন্যালিংয়ের ব্যবস্থার জন্য আমরা এখনও দাবি জানাচ্ছি।’’ এ ভাবে পারাপারে যে বিপদ ঘটাতে পারে, তা নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।

ট্র্যাফিক পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, নজরদারি না থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওই এলাকায় পুলিশ থাকে, এ দিনও ছিল। তিনি আরও জানান, মন্দিরপাড়ার সামনে বাইপাস পেরিয়ে যাতায়াত করার নিয়ম নেই। কারণ এটি বাইপাসের গুরুত্বপূর্ণ মোড় নয়। বাইপাসে ‘বাম্পার’ থাকার কথাও নয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, বছর দুয়েক আগেই এখানে মেট্রো রেলের কাজ চলাকালীন গার্ডরেল দিয়ে সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার সংস্থা। বাসিন্দাদের বলা হয়, কাছেই অভিষিক্তার মোড় দিয়ে রাস্তার ওপারে ঘুরে যেতে হবে। তার পরেও গার্ডরেলের ফাঁক দিয়ে জায়গা করে যাতায়াত শুরু করেন এলাকাবাসীরা। পরে এই অংশে মেট্রোর স্তম্ভ বসানোর কাজ শেষ হওয়ার পরে মাত্র কয়েকটা গার্ডরেল খুলে দেয় ঠিকাদার সংস্থা। বেশির ভাগ গার্ডরেলই থেকে যায়। ফলে, খানিকটা জায়গা পাওয়ায় অবাধে যাতায়াত বাড়ে।

এলাকার বাসিন্দা নীতীশ দাস বলেন, ‘‘এই রাস্তা দিয়ে পার হওয়া বিপজ্জনক। অনেক দিন ধরেই এই রাস্তা বন্ধ ছিল। সম্প্রতি কয়েকটি গার্ডরেল খোলা হয়েছে। তাতেই সমস্যা আরও বেড়েছে। কেনই বা খোলা হল এবং পুলিশই বা অনুমতি দিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।’’

পুলিশের দাবি, গার্ডরেলের আড়াল দিয়ে কারা যাতায়াত করছে তাতে নজর রাখা সমস্যার। গার্ডরেল পুরোপুরি তুলতে বা পুরোপুরি রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকেও অনেক বার বলা হয়েছে। তাতেও কোনও কাজ হয়নি। বাইপাস অঞ্চলের মেট্রোরেলের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি সংস্থার পক্ষে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ পুলিশ চিঠি দিয়েছে কি না, আমি জানি না। পুলিশের নজরদারি অবশ্যই থাকবে। তবে, এই গার্ডরেল খোলার জন্য বাসিন্দারা চাপ সৃষ্টি করেছিল। নিয়মানুযায়ী, যেখানে কাজ হয় সেই অংশটি ঘেরা হয়। কাজ হলে তা খুলে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিছু কিছু গার্ডরেল এখনও সরানো হয়নি। সেগুলি সরানো হবে।’’

পুলিশ কেন বাসিন্দাদের এই বিপজ্জনক যাতায়াত আটকায় না?

লালবাজার সূত্রে বলা হয়েছে, ওই এলাকায় সমস্যা কিছু রয়েছে। মাইকে নিরাপদে রাস্তা পেরোনোর জন্য বাসিন্দাদের বারবার অনুরোধও করা হচ্ছে। কী ভাবে এই সমস্যা কাটানো যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তাও চলছে। যত দিন না সমস্যার সুরাহা হচ্ছে, তত দিন ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ দেওয়া যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন ট্র্যাফিককর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student road accident bypass lalbazar police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE