Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘হুমকি’ শিক্ষিকার, বিক্ষোভ স্কুলে

পুলিশ জানিয়েছে, সকাল ৯টা থেকে স্কুল চত্বরে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রধান শিক্ষক অজিতকুমার সাহু এবং অভিভাবকেরা একযোগে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনেন। তাঁকে অপসারণের দাবিও জানান।

প্রধান শিক্ষক অজিতকুমার সাহু এবং অভিযুক্ত শিক্ষিকা তুতুল বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার, বড়িশা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

প্রধান শিক্ষক অজিতকুমার সাহু এবং অভিযুক্ত শিক্ষিকা তুতুল বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার, বড়িশা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১০
Share: Save:

তাঁর আত্মীয়ের তালিকায় নাকি রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, বিধানসভার অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী। অভিযোগ, সেই ভিত্তিতেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অভিভাবকদের হুমকি দিতেন স্কুলেরই এক শিক্ষিকা। আরও অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক তাঁকে বিরত করার চেষ্টা করলে তিনি উল্টে শ্লীলতাহানির অভিযোগে তাঁকেই ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এ সবের জেরে সোমবার সকাল থেকে স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকেরা। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বড়িশা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যদিও অভিযুক্ত শিক্ষিকা তুতুল বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, সকাল ৯টা থেকে স্কুল চত্বরে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রধান শিক্ষক অজিতকুমার সাহু এবং অভিভাবকেরা একযোগে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনেন। তাঁকে অপসারণের দাবিও জানান।

অজিতবাবুর অভিযোগ, ওই শিক্ষিকা নিয়ম মেনে স্কুলে আসেন না। ইচ্ছে মতো স্কুল থেকে চলে যান। মাঝেমধ্যেই পড়ুয়াদের মারধর করেন। তাঁর আরও অভিযোগ, বাধা দিতে গেলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তুতুল। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে অন্য নেতা-মন্ত্রীদের নাম করে হুমকি দেন। প্রায় আড়াই মাস ছুটিতে থাকার পরে সোমবারই ওই শিক্ষিকা কাজে যোগ দিয়েছেন বলে জানান অজিতবাবু। তার পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ।

এমন পরিস্থিতিতে তুতুলের স্বামী ঘটনাস্থলে এলে তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। শেষমেশ বেলা ১২টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। কলকাতা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার থেকে ওই শিক্ষিকা স্কুলে আসতে পারবেন না। তদন্ত চলাকালীন তাঁকে রোজ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিসে হাজিরা দিতে হবে। সেই আশ্বাস পাওয়ার পরে গোলমাল থামে এবং পুলিশের গাড়িতে ওই শিক্ষিকাকে বার করে আনা হয়।

স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রসেনজিৎ সেনগুপ্তের অভিযোগ, ‘‘ওই শিক্ষিকা বলেন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পিসি, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মামা, ফিরহাদ হাকিম কাকা। এ ছাড়া আরও অনেক মন্ত্রীর কথা বলে ভয় দেখান। তাই যখন খুশি স্কুলে আসতেন, যখন খুশি চলে যেতেন। কেউ কিছু বলতে পারত না।’’ যদিও তুতুল বলেন, ‘‘আমি কাউকে ক্ষমতা দেখাইনি। সব অভিযোগ মিথ্যে।’’ মন্ত্রীদের সঙ্গে আত্মীয়তা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সব মিথ্যে কথা। আমার এ রকম কেউ নেই।’’

তবে গোলমাল আপাতত মিটলেও সমস্যার শিকড় যে অনেক গভীরে, তা মানছেন এলাকার বাসিন্দারা। ওই স্কুলে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে। কয়েক বছর আগেও যেখানে পড়ুয়া ছিল একশোর বেশি, সেটা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ৫৩-তে। প্রধান শিক্ষকের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষিকার দুর্ব্যবহার ও পড়ুয়াদের মারধর করার জন্য অনেকে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে।

কলকাতায় যেখানে পড়ুয়ার অভাবে একের পর এক স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে স্কুলশিক্ষা দফতর, সেখানে এই স্কুলের সমস্যা নিয়ে কেন আগেই তৎপর হয়নি তারা? দফতরের এক কর্তা জানান, বিষয়টি আগে তাঁদের কানে পৌঁছয়নি। এ বার তদন্ত শেষ হওয়ার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

East Barisha Primary School Barisha protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE