Advertisement
২৩ মার্চ ২০২৩
ইমারতি ব্যবসায় দাদাগিরি এখন কেমন চলছে? কলকাতা, দমদম, রাজারহাট ঘুরে দেখা গেল হালচাল।

‘আমাদের কাজ দিলে শান্তি থাকবে, না-হলে নয়’, সাফ কথা সিন্ডিকেটের

‘শান্তি’র কথা বলছেন সিন্ডিকেটের সব সদস্যই। যাত্রাগাছি মোড়ের কাছে নবদিশা সিন্ডিকেটের অন্যতম কর্ণধার সইফুল ইসলামের মতো অনেকেরই দাবি, এখন চার দিকে শান্তি বিরাজ করছে।

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৮ ০৪:১৬
Share: Save:

মোটরসাইকেল নিয়ে সিন্ডিকেটের দাদাদের দাপাদাপি নেই। নেই দুই গোষ্ঠীর প্রকাশ্যে মারপিট, বোমাবাজি।

Advertisement

তবু রাজারহাট আছে রাজারহাটেই। ইট, বালি সরবরাহ থেকে শুরু করে বাড়ি রং করা, গ্রিল বসানো, পরিচারিকা বা রক্ষী নিয়োগ— সব ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটই শেষ কথা বলে দাবি নির্মাণ শিল্পমহলের। স্থানীয় এক প্রোমোটারের ব্যাখ্যা, ‘‘এখন সব কিছুই বেশ সংগঠিত। তাই বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই।’’

নিউ টাউনের নারকেল বাগান মোড়ের কাছে সদ্য ফ্ল্যাট কিনেছেন বহুজাতিক আইটি সংস্থায় কর্মরত এক দম্পতি। তাঁরা জানান, ফ্ল্যাটে ঘর রং করানোর সময় স্থানীয় কয়েক জন যুবকের আবির্ভাব ঘটেছিল। দাবি ছিল, রং করার বরাত তাঁদেরই দিতে হবে। একই অভিজ্ঞতা নিউ টাউনের যাত্রাগাছি মোড়ের কাছে নতুন ফ্ল্যাটে আসা আবাসিকদের। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় যুবকরা জানিয়ে দিয়েছেন, নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে তাঁদেরই নিয়োগ করতে হবে। ওই এলাকায় সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত এক যুবকের সাফ কথা, ‘‘আমাদের দিয়ে কাজ করালেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পাওয়া যাবে। না-হলে নয়।”

এই ‘শান্তি’র কথা বলছেন সিন্ডিকেটের সব সদস্যই। যাত্রাগাছি মোড়ের কাছে নবদিশা সিন্ডিকেটের অন্যতম কর্ণধার সইফুল ইসলামের মতো অনেকেরই দাবি, এখন চার দিকে শান্তি বিরাজ করছে। ‘শান্তি’র আর
একটি ব্যাখ্যাও মিলেছে। সিন্ডিকেট সদস্যদের মতে, নির্মাণ কাজ কমেছে। তাই ব্যবসা বাঁচাতে গোষ্ঠীবাজি প্রায় নেই বললেই চলে। ইট-সিমেন্টের মতো ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী আফতাউদ্দিন বলেন, “নোট বাতিল, জিএসটি তো আছেই। সেই সঙ্গে রাজারহাট পুরসভা ভেঙে বিধাননগর কর্পোরেশন হওয়ার পরে বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনের সংখ্যাও অনেক কমে গিয়েছে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্তদের অনেকেই অন্য ব্যবসা করছেন।”

Advertisement

রাজারহাটের যাত্রাগাছি মৌজা, সুলুঙ্গরি মৌজা, থাকদারি মৌজা ঘুরে দেখা গেল, সিন্ডিকেটের ‘অফিস ঘর’-এর অধিকাংশই আর নেই। এখন তা চলছে নতুন মোড়কে। চায়ের দোকান, মুদির দোকানেই চলছে সিন্ডিকেটের কাজকর্ম। নাম বলতে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ‘‘ব্যবসা বাঁচানোর তাগিদেই এই ব্যবস্থা। এখন সব মৌজা আলাদা আলাদা সিন্ডিকেটের নামে ভাগ করা রয়েছে। কেউ কারও এলাকায় ঢোকে না।’’

এই ‘শান্তি’র আড়ালে পরিস্থিতি আদতে কেমন? থাকদারি এলাকার এক নির্মাণ সংস্থার বিল্ডিং ম্যানেজার বলেন, “পুলিশে অভিযোগ করে লাভ নেই। সিন্ডিকেট থেকেই ইট, বালি, সিমেন্ট কিনতে হয়, ওদেরই নির্ধারিত দামে। জিনিসের মান ঠিক রাখতে বাড়তি দাম দেওয়াই রীতি।”

ওই ম্যানেজারের আরও অভিযোগ, নির্মাণ কাজের পরে অব্যবহৃত জিনিসেও ভাগ বসাচ্ছে সিন্ডিকেট। যেমন কাঠের বোর্ড, ইলেকট্রিকের তার-সহ বিভিন্ন জিনিস বাড়তি থেকে যায়। সাধারণত, পরবর্তী প্রকল্পের জন্য ওই সব জিনিস গুদামে রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্মাণ শিল্পমহলের তরফে অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে কাজ শেষ হওয়ার আগেই এলাকার কয়েক জন যুবক হুমকি দিয়ে যান, অব্যবহৃত জিনিস তাঁদেরই নামমাত্র দরে বিক্রি করতে হবে। নচেৎ কোনও দাম না দিয়েই তাঁরা স্রেফ সেগুলো উঠিয়ে নিয়ে চলে যাবেন।

তবে স্থানীয় বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের বক্তব্য, যাবতীয় অভিযোগই মিথ্যে। তাঁর দাবি, “সিন্ডিকেট নিয়ে কোথাও কোনও গোলমাল ছিল না। আজও নেই। নিউটাউনের বাসিন্দারা এখন খুব খুশি।” এতটা নিশ্চিত এবং নিশ্চিন্ত হয়ে অবশ্য উত্তর দেননি বিধাননগরের ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ অমিত জাভলগি। তিনি বলেন “এখন পরিস্থিতি ঠিক কী রকম, তা সংশ্লিষ্ট থানার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে।” (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.