Advertisement
১১ মে ২০২৪

থ্যালাসেমিয়া দিবসে জোর রক্তদানে

সোমবার রাতে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর জন্য চার ইউনিট ‘বি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্তের দরকার ছিল। কিন্তু, এক ইউনিটের বেশি রক্ত দিতে পারেননি সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০১:০১
Share: Save:

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হাওড়ার যুবকের প্রয়োজন ছিল ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের। গত সপ্তাহে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে রক্ত দেওয়ার সব ব্যবস্থা পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জানা যায়, সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে ওই গ্রুপের লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি) নেই। সে দিন আর রক্তের ব্যবস্থা করা যায়নি। এক দিন পরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে ওই গ্রুপের আরবিসি সংগ্রহ করে যুবককে দেওয়া হয়।

সোমবার রাতে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর জন্য চার ইউনিট ‘বি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্তের দরকার ছিল। কিন্তু, এক ইউনিটের বেশি রক্ত দিতে পারেননি সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ভোট আর গরমের জোড়া ফলায় রক্ত-সঙ্কট কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তা বোঝাতে এমনই তথ্য দিচ্ছেন থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।

আজ বুধবার বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসের আগে ভোটের ময়দানে বঙ্গ রাজনীতি যখন উত্তপ্ত, তখন রক্তের জোগানই বেশিরভাগ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর অভিভাবকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত, সে জন্যই সচেতনতা দিবসে অন্য সব বার্তাকে পিছনে ফেলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় স্তরে রক্তদান শিবিরের আয়োজনে জোর দিচ্ছেন থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, অভিভাবকেরা।

থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সভাপতি, চিকিৎসক রামেন্দু হোমচৌধুরী জানান, সারা দেশে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য প্রতি বছর ২৪ লক্ষ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। গ্রীষ্মের মরসুমে প্রতি বছর এমনিতেই ৩০ শতাংশ কম রক্ত সংগ্রহ হয়। এ বছর ভোটের জন্য সেই ঘাটতি অনেক বেশি। যার জেরে সব ক’টি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রামেন্দুবাবুর মতে, ‘‘প্রতি বছর দেশ জুড়ে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য যে পরিমাণ রক্ত লাগে, তাতে রাশ টানতে হলে স্কুলস্তরের পাঠ্যসূচিতে এই রোগ সম্পর্কে বিশদে বলা দরকার। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত নতুন শিশু যাতে না জন্মায়, তার জন্য বিয়ের আগে এইচপিএলসি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।’’

সল্টলেকের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ট্রাস্টি দ্বিজাশিস ভৌমিক বলেন, ‘‘যাঁরা মূলত রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন, নির্বাচনের জন্য তাঁরা প্রায় সকলেই ব্যস্ত। এর পরেও যত শিবির হচ্ছে, সেগুলিতে দাতার সংখ্যা হাতে গোনা।’’ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের সংগঠনের সম্পাদক গৌতম গুহ বলেন, ‘‘নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের চাহিদা সব সময়ে থাকে। কিন্তু পর্যাপ্ত শিবির না হওয়ায় এবি, এবি পজিটিভ, এমনকি বি পজিটিভ গ্রুপের রক্তেরও অভাব দেখা দিচ্ছে।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধান প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভোটের জন্য রবিবার সে ভাবে শিবির হয়নি। তাতে সমস্যা বেড়েছে।’’ এনআরএসের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সঙ্কট মেটাতে ডাক্তারির ছাত্র এবং হাসপাতালের কর্মীদের রক্ত দিতে বলা হয়েছে। সাধারণ গ্রুপের রক্ত পেতেও সমস্যা হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া দিবসে একটাই কথা বলতে চাই, রক্তদান করুন এবং পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিন বাহক কি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE