Advertisement
E-Paper

আইন আছে, প্রয়োগ করবে কে

মাস তিনেক আগে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার জন্য পুরসভার হাতে বিল্ডিং আইনে নতুন ধারা (৪১২এ) জুড়েছে সরকার। নয়া আইন অনুযায়ী বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে সংস্কারের জন্য পুরসভা নোটিস দেবে। কিন্তু শহরের কোনও বিপজ্জনক বাড়িই এখনও সেই নোটিস পায়নি

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০২:৪৪
বিপর্যয়: এ ভাবেই ভেঙেছে বাড়ির একাংশ।

বিপর্যয়: এ ভাবেই ভেঙেছে বাড়ির একাংশ।

আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। আর তার জেরে দশ মাসের মাথায় ফের শহরে ভাঙল বিপজ্জনক বাড়ি। মৃত্যু হল দু’জনের।

গত সেপ্টেম্বরে বাড়ি ভেঙেছিল পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে। আর মঙ্গলবারের ঘটনাস্থল পুর ভবন থেকে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বে ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিট। পাথুরিয়াঘাটার ক্ষেত্রে পুরসভার হাতে যুক্তি ছিল, ‘আইন নেই, তাই ওই বাড়ি বিপজ্জনক জেনেও ভাঙা যায়নি’। মাস তিনেক আগে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার জন্য পুরসভার হাতে বিল্ডিং আইনে নতুন ধারা (৪১২এ) জুড়েছে সরকার। নয়া আইন অনুযায়ী বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে সংস্কারের জন্য পুরসভা নোটিস দেবে। কিন্তু শহরের কোনও বিপজ্জনক বাড়িই এখনও সেই নোটিস পায়নি।

কেন পুরসভা এখনও প্রয়োগ করেনি নয়া আইন? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘আইন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা কার্যকর করতে গেলে একটা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’’

আসলে শহরে যে সব বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে, সেগুলিকে ভেঙে সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট বাড়িগুলির মালিক ও ভাড়াটেদের সম্মতি চাই। সেই কাজটাই এখনও করে উঠতে পারেনি পুরসভা। মেয়রের ব্যাখ্যা, ‘‘আইন কার্যকর করতে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেদের সহযোগিতা চাইছি।’’

বিতর্ক শুরু হয়েছে বাড়িটি বিপজ্জনক কি না, তা নিয়েও। বাসিন্দাদের দাবি, বাড়িটি যে বিপজ্জনক, পুরসভা তাদের জানায়নি। যদিও মেয়র স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিন বছর আগেই ‘বিপজ্জনক’ নোটিস লাগানো হয়েছিল।


বার করা হচ্ছে চাপা পড়ে মৃত এক ব্যক্তির দেহ। মঙ্গলবার তালতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

কিন্তু পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ঘটনার পরে যে তৎপরতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুর প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন, সে ভাবে কি কাজ হয়েছে? বিল্ডিং দফতর সূত্রের খবর, শহরে বিপজ্জনক বাড়ি প্রায় তিন হাজার। সেগুলির চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়াই এখনও শেষ হয়নি। এক পুর ইঞ্জিনিয়ার জানান, কোথায় কোন বাড়ির কী হাল — সবই দেখা হচ্ছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে শহরের বিশিষ্ট জন এবং নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সভা করেন মেয়র। সেখানেই স্থির হয়, হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক কমিটি বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে নতুন খসড়া বানাবে। গত পুজোর পরে ওই খসড়া পুরসভার হাতে তুলে দেয় কমিটি। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা, আইন বিভাগ এবং পদস্থ কর্তারা সেটি যাচাই করে রাজ্য সরকারের কাছে খসড়া বিল হিসেবে পাঠান। এপ্রিলে সেই বিল পাশ হয়ে বিল্ডিং আইনে ৪১২এ ধারা যুক্ত হয়।

ডিজি (বিল্ডিং) অনিন্দ্য কারফর্মা জানান, নতুন ধারায় বলা হয়েছে, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে প্রথমে সুযোগ দেওয়া হবে মালিকপক্ষকে। তিনি রাজি না হলে পুর প্রশাসন টেন্ডার করে কোনও সংস্থাকে বরাত দেবে। অন্তর্বর্তী সময়ে ওই বাড়ির বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিতে হবে। এর জন্য অবশ্য নতুন বাড়ি তৈরিতে বাড়তি ১০০% ছাড় (এফএআর) দেওয়া হবে বলে জানান অনিন্দ্যবাবু।

তবে পুরসভার এই নিয়মে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেরা সবাই সম্মত হবেন কি না, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। পুরসভা চাইছে দুই পক্ষকেই বুঝিয়ে রাজি করাতে। না হলে নতুন আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে পুরসভাকে আইনি সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই বিপজ্জনক বাড়ি হটানোর প্রক্রিয়া এখনও বহু দূরে।

Kolkata municipality Kolkata Old house কলকাতা পুরসভা কলকাতা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy