প্রতীকী ছবি।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ। এই দীর্ঘ সময়ে শহরাঞ্চলের স্কুলপড়ুয়ারা যে ভাবে অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পাচ্ছে, তা থেকে বঞ্চিত রাজ্যের একটি বড় অংশের পড়ুয়ারা। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া, গ্রাম বা শহরতলির পড়ুয়াদের বেশির ভাগেরই স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ বা সামর্থ্য নেই। তারা এক বছর ধরে পড়াশোনা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন।
রাজ্যে ফের কড়া বিধিনিষেধ বলবৎ হওয়ায় আরও তীব্র হচ্ছে বহু মানুষের আর্থিক সঙ্কট। চিকিৎসকদের মতে, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ফলে স্কুল খোলা এখনও বহু দিন অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে স্কুলছুটের হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তাই শিক্ষকদের মতে, ইন্টারনেট ছাড়াও বিকল্প মাধ্যমে পড়াশোনা চালু রাখা প্রয়োজন। গত বছর লকডাউনের সময় থেকেই প্রান্তিক শিশুদের কাছে পৌঁছনোর জন্য টেলিফোন, রেডিয়ো, টিভি ব্যবহার করা হচ্ছিল। সরকারি উদ্যোগও দেখা গিয়েছিল এ বিষয়ে। এ বছর কী ভাবে এমন পরিষেবা ফের শুরু করা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘টেলিফোনের মাধ্যমে পড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে কোনও পড়ুয়া তখনই ফোন করে শিক্ষকদের পড়া সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানাতে পারবে, যখন সে নিজে আগে পড়বে! বহু শিশুর পড়ার অভ্যেসই চলে গিয়েছে।’’ ফলে প্রাথমিক ভাবে তাদের ক্লাস করানোর জন্য ফোনেরও আগে রেডিয়ো ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তাঁর মত। তার একটা কারণ, রেডিয়োর দাম তুলনামূলক ভাবে কম। সৌগতবাবু বলেন, ‘‘প্রসার ভারতীর উদ্যোগে রেডিয়োয় ‘বিদ্যার্থীদের জন্য’ নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। সেটিকে আরও বড় আকারে করা যেতে পারে। ক্লাস রেকর্ড করার সময়ে যদি শিক্ষকেরা নিজেদের নম্বর দিয়ে দেন, তা হলে পরে কোনও সমস্যা হলে পড়ুয়ারা তাঁদের ফোন করতে পারবে।’’
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনও মনে করেন, প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের কাছে পৌঁছনোর জন্য রেডিয়ো, টিভি, টেলিফোন ব্যবহার করা যায়। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষা দফতরের কাছে সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের ঠিকানা রয়েছে। তাই এলাকাভিত্তিক ভাবে পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। একই এলাকার অল্প সংখ্যক পড়ুয়াকে নিয়ে রেডিয়োর মাধ্যমে ক্লাস চালিয়ে শোনানো যেতে পারে। এ ছাড়া শিক্ষা দফতর যদি বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যক্রমের কিছু প্রশ্নোত্তর তৈরি করে ছাপিয়ে দেয়, তা হলে মিড-ডে মিল বিলির সময়ে সেগুলিও দিতে পারি।’’ তিনি আরও জানান, তাঁদের সংগঠনের তরফ থেকে কিছু জেলায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য বাড়িতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দিয়ে বিনামূল্যে মক টেস্টের আয়োজন করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শিশুদের মনের খেয়াল রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মত হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্তের। তিনি বলেন, ‘‘চারপাশের পরিস্থিতি বাচ্চাদের মনের উপরে প্রভাব ফেলছে। ওদের বলেছি, পড়াশোনা ছাড়াও যে কোনও বিষয়ে কথা বলতে চাইলেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফোন করতে।’’ ফোনের মাধ্যমে পড়াশোনা ছাড়াও এমন উদ্যোগেরও প্রয়োজন বলে তাঁর মত। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর টিভির মাধ্যমে ক্লাসে প্রায় পুরো সিলেবাস পড়ানো হয়। সেই অনুষ্ঠান ফের সম্প্রচার করা যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy