Advertisement
১৭ মে ২০২৪
এ বার বদলি তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা

স্বশাসনে হস্তক্ষেপের নালিশ প্রেসিডেন্সিতেও

সপ্তাহখানেক আগেই এক জন চেয়ার-প্রফেসর প্রেসিডেন্সি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার পরেই বুধবার প্রেসিডেন্সির তিন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বদলি করে দিল রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। এই সরকারি সিদ্ধান্তে দু’টি প্রশ্ন ও অভিযোগ বড় হয়ে উঠছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

সপ্তাহখানেক আগেই এক জন চেয়ার-প্রফেসর প্রেসিডেন্সি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার পরেই বুধবার প্রেসিডেন্সির তিন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বদলি করে দিল রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর।

এই সরকারি সিদ্ধান্তে দু’টি প্রশ্ন ও অভিযোগ বড় হয়ে উঠছে।

• ওই তিন শিক্ষক-শিক্ষিকাই প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রীতিমতো ইন্টারভিউ দিয়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছিলেন। তার পরেও উচ্চশিক্ষা দফতর এ ভাবে ওই তিন শিক্ষককে অন্যত্র বদলি করে দেওয়ায় আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে সরকারের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠছে, কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় হস্তক্ষেপের পরে প্রেসিডেন্সির ক্ষেত্রেও সরকারের তরফে স্বশাসনে নাক গলানো হচ্ছে কেন?

• দ্বিতীয় প্রশ্নটিও গুরুত্বে আদৌ পিছিয়ে নেই। সেটি হল, চূড়ান্ত শিক্ষক-ঘাটতির মধ্য দিয়ে চলা প্রেসিডেন্সি থেকে আবার তিন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বদলি করে দিলে ওখানে পঠনপাঠনের কী হবে?

শিক্ষক-শিক্ষিকা বদলির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছে উচ্চশিক্ষা দফতর। সেখানকার এক কর্তার যুক্তি, শুধু যে ওই তিন জনকে বদলি করা হয়েছে, তা তো নয়। গত কয়েক বছরে প্রেসিডেন্সি থেকে যে-সব শিক্ষককে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে, তাঁদের সকলেই সরকারি চাকরি থকে ‘লিয়েন’ নিয়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের বদলি করার এক্তিয়ার আছে উচ্চশিক্ষা দফতরের।

যে-তিন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে এ দিন বদলির নির্দেশ ধরানো হয়েছে, তাঁদের কারও ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করা হয়নি বলে দাবি করছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘এগুলো রুটিনমাফিক বদলি। ওঁরা সবাই সরকারি কর্মচারী। ওঁদের ব্যাপারে আমরাই সিদ্ধান্ত নেব।’’

এই অবস্থায় বদলি হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা তো বটেই, চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন প্রেসিডেন্সির অন্যান্য শিক্ষকও। প্রেসিডেন্সি কলেজে কর্মরত অবস্থায় যাঁরা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাঁদের একে একে বদলি করে দেওয়া হলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন ঠিকঠাক চালানো যাবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তো উঠেছেই। সেই সঙ্গে মর্যাদার প্রশ্নও তুলছেন এক শ্রেণির শিক্ষক-শিক্ষিকা। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘আমরা বায়োডেটা (জীবনপঞ্জি) জমা দিয়ে, রীতিমতো ইন্টারভিউ দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছিলাম। তা হলে কি ইন্টারভিউয়ে যাঁরা অসফল হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের কি কোনও পার্থক্য নেই?’’ এই ধরনের বদলির সিদ্ধান্তে তাঁরা কতটা বিচলিত, ওই শিক্ষকের বক্তব্যে সেটাও পরিষ্কার। ‘‘এখন যা অবস্থা, তাতে মন দিয়ে পড়াতেই পারছি না। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে গবেষণার জন্য বিভিন্ন গবেষণা সংস্থায় প্রজেক্ট জমা দেব কি না, সেটাও বুঝতে পারছি না,’’ বলেছেন ওই শিক্ষক। তাঁর বয়ানে স্পষ্ট, বদলির খাঁড়ার সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই পড়ানোর কাজে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। তাঁদের গবেষণা এবং শিক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

এটা ব্যক্তি-শিক্ষকের সমস্যা ঠিকই। সামগ্রিক বিচারে প্রতিষ্ঠানেরও সমস্যা। কারণ, শিক্ষক-শিক্ষিকারা কাজে মন বসাতে না-পারলে ক্ষতি পড়ুয়াদের। আখেরে বৃহত্তর ক্ষতি প্রতিষ্ঠানের। অন্যান্য বিতর্ক দূরে রাখলেও এই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, ওই তিন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে হঠাৎ বদলি করে দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্কট আরও বেড়ে গেল। শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ছাত্রছাত্রী— সব শিবিরের প্রশ্ন, প্রেসিডেন্সিতে এমনিতেই চরম শিক্ষক-সঙ্কট চলছে। এই অবস্থায় নতুন শিক্ষক নিয়োগ না-করে এ ভাবে একের পর এক শিক্ষককে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে কেন? প্রেসিডেন্সিকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার পর্বে সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ব মানে উন্নীত করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকারই এখন এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলছেন শিক্ষক-পড়ুয়াদের অনেকেই।

গত সপ্তাহেই শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রেসিডেন্সি ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু চেয়ার প্রফেসর সব্যসাচী ভট্টাচার্য। এ দিন যে-তিন জনকে অন্যত্র বদলি করা হল, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অঙ্কের বিভাগীয় প্রধান গৌরগোপাল রায়ও। অন্য দু’জন হলেন বায়েলজিক্যাল সায়েন্সের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ভাস্কর গুপ্ত ও কমলা গুপ্ত। গৌরবাবুকে গাইঘাটা কলেজে এবং অন্য দু’জনকে সিঙ্গুর কলেজে বদলি করা হয়েছে বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। কয়েক মাস আগে একই ভাবে প্রেসিডেন্সি থেকে বদলি করা হয়েছে বাংলা বিভাগের প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও দর্শন বিভাগের দায়িত্বে থাকা অনীক চট্টোপাধ্যায়কে। তাঁদের জায়গায় এখনও পর্যন্ত নতুন কোনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। শুক্লা সান্যাল চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ায় ইতিহাস বিভাগেও প্রধানের পদটি এখন শূন্য।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া এখন বিদেশে। তাই তিন শিক্ষক-শিক্ষিকার বদলি এবং বদলি-পরবর্তী পরিস্থিতির ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। আর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষা দফতরের নির্দেশ আমি যথাস্থানে পৌঁছে দিয়েছি।’’

কিন্তু এত শিক্ষক চলে যাওয়ায় পঠনপাঠন ব্যাহত হবে না কি?

এই প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে চাননি দেবজ্যোতিবাবু।

শিক্ষামন্ত্রীকে এ দিন প্রশ্ন করা হয়েছিল, পরপর এত শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বদলি করে দিলে প্রেসিডেন্সির পঠনপাঠনের কী হবে?

‘‘ওখানে একটি পদ পূরণের ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভায় আলোচনা করেছি। অন্য শূন্য পদেও তাড়াতাড়ি লোক নিয়োগের চেষ্টা হচ্ছে,’’ আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE