Advertisement
E-Paper

নেট-অপরাধের ফাঁদ হোয়াট্সঅ্যাপেও

ফোনে এক তরুণী কণ্ঠ জানিয়েছিল, সে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি। শুধু তার মুখের কথায় বিশ্বাস করেই নিজের ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য জানিয়ে দিয়েছিলেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি।

শান্তনু ঘোষ ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৫

ঘটনা ১: ফোনে এক তরুণী কণ্ঠ জানিয়েছিল, সে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি। শুধু তার মুখের কথায় বিশ্বাস করেই নিজের ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য জানিয়ে দিয়েছিলেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মোবাইলে এসএমএস আসে, তাঁর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কয়েক হাজার টাকার জিনিস কেনা হয়েছে! পুলিশ জানাচ্ছে, যথারীতি সাইবার জালিয়াতের খপ্পরে পড়েছিলেন ওই ব্যক্তি।

ঘটনা ২: তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার চাকুরে তরুণীর সঙ্গে অফিসে চত্বরে আলাপ হয় এক যুবকের। ফোন নম্বরও লেনদেন হয়। কিন্তু ওই যুবকের বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেননি তরুণী। দিন কয়েক পর থেকেই তাঁর কাছে কুপ্রস্তাব দিয়ে এসএমএস আসা শুরু হল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, তাঁর নাম, ছবি ও মোবাইল নম্বর দিয়ে ফেসবুকে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই তরুণী এক জন যৌনকর্মী।

পুলিশ বলছে, উপরের দু’টি ঘটনা বর্তমানে রাজ্যের সাইবার অপরাধের দুই উদাহরণ মাত্র। আদতে রোজই রাজ্যের নানা প্রান্তে নানা সাইবার অপরাধ ঘটে চলেছে, যা উদ্বেগে ফেলেছে তদন্তকারী এবং সাইবার অপরাধদমন বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের অনেকেরই অভিমত, এই ধরনের অপরাধ চুরি, ডাকাতির থেকে অনেকটাই আলাদা। তাই পুলিশি সক্রিয়তার পাশাপাশি ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের নিজেদের তথ্য সম্পর্কে সচেতনতা
থাকা জরুরি।

সম্প্রতি ‘আন্তর্জাতিক তথ্য নিরাপত্তা দিবস’ উপলক্ষে লিলুয়ার এমসিকেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আলোচনায় কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানার ওসি সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী জানালেন, শুধু ফেসবুক বা ই-মেল নয়, হোয়াট্‌সঅ্যাপেও এখন জাল বিছোচ্ছে অপরাধীরা। তাঁর কথায়, ‘‘অন্যের ছবি দিয়ে ভুয়ো প্রোফাইল হোয়াট্‌সঅ্যাপেও চালু হচ্ছে। ফোন নম্বর ঠিক মতো যাচাই না করে সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকে।’’ পুলিশ আরও জানাচ্ছে, এমনও ঘটছে, যেখানে অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ আসার পরে বন্ধুত্ব করছেন অনেকে। তার পরে সেই বন্ধুত্বের ফাঁদেই টাকা খুইয়েছেন, এমন অভিযোগও মিলছে।

সাইবার তদন্তকারীদের একাংশের মতে, নেট ব্যাঙ্কিং, অনলাইনে কেনাকাটার চল যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে এ ধরনের অপরাধ। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতি এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার মাধ্যম শহুরে জীবনের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে। তাই নেট ব্যাঙ্কিং বা অনলাইন কেনাকাটা বন্ধ করা যাবে না। ‘‘তাই নিজেদের বাঁচাতে সচেতন হতেই হবে। না হলে কিন্তু সমূহ বিপদ,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।

এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্ণধার অভিষেক রুংতা জানাচ্ছেন, তথ্য সম্পর্কে শুধু সাধারণ ব্যবহারকারী নন, সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থারও। তাঁদের একাংশের মতে, এখন বিপিও সংস্থাগুলিতে প্রচুর যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই কাজে বিশ্বে এ দেশের স্থান প্রথম সারিতে। কিন্তু সম্প্রতি সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে একাধিক সংস্থা থেকে তথ্যচুরির অভিযোগ মিলেছে। পুলিশ তদন্তে নেমে কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছে। এই ধরনের অপরাধ রোখা না গেলে বিপিও সংস্থাগুলির বদনাম হতে পারে। অর্থনৈতিক দিক থেকে ধাক্কা খেতে পারে সংস্থাগুলি। সাইবার-আইন বিশেষজ্ঞ এবং সাইবার মামলায় রাজ্য সরকারের বিশেষ কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘তথ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে সংস্থাগুলিকে সচেতন হতে হবে। যে সব কর্মী এই সব ক্ষেত্রে জড়িত, তাঁদের তথ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করতে হবে।’’

whatsapp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy