Advertisement
E-Paper

ভরসন্ধ্যার কম্পনে ফিরে এল সেই নেপাল-আতঙ্ক

সেন্টার টেবিলে রাখা ট্রে থেকে সবে চায়ের কাপটা তুলতে যাচ্ছিলেন সৌমেন নন্দী। হঠাৎই ঠকঠক করে কেঁপে উঠল চায়ের কাপ। দুলে উঠল বহুতলের সাততলার গোটা ফ্ল্যাটটাই! কলকাতা যে ভূমিকম্পে দুলে উঠেছে, তত ক্ষণে বুঝতে পেরেছিলেন সৌমেনবাবু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩৪
রাস্তায় নেমে এসেছে অফিসপাড়া। বুধবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ছবি দু’টি তুলেছেন রণজিৎ নন্দী ও শুভাশিস ভট্টাচার্য।

রাস্তায় নেমে এসেছে অফিসপাড়া। বুধবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ছবি দু’টি তুলেছেন রণজিৎ নন্দী ও শুভাশিস ভট্টাচার্য।

সেন্টার টেবিলে রাখা ট্রে থেকে সবে চায়ের কাপটা তুলতে যাচ্ছিলেন সৌমেন নন্দী। হঠাৎই ঠকঠক করে কেঁপে উঠল চায়ের কাপ। দুলে উঠল বহুতলের সাততলার গোটা ফ্ল্যাটটাই!

কলকাতা যে ভূমিকম্পে দুলে উঠেছে, তত ক্ষণে বুঝতে পেরেছিলেন সৌমেনবাবু। বাইরে থাকা মেয়ের খোঁজ নিতে তড়িঘড়ি মোবাইলে ডায়াল করেছিলেন। কিন্তু নেটওয়ার্ক বসে গিয়েছিল। লাইন মেলেনি!

বোতলের জল কাঁপছে দেখে আর অপেক্ষা করেননি সল্টলেকের বাসিন্দা আদৃতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিফ্‌টের বদলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে সামনের ফুটপাথে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের কম্পন। তাতেই যেন ফিরে এল এক বছর আগের সেই স্মৃতি! গত বছর ২৫ এপ্রিল ভরদুপুরে নেপালের ভূকম্পে কেঁপে উঠেছিল কলকাতা। এ বার কাঁপল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ, মায়ানমারের কম্পনে। হাজরা থেকে নিউ টাউন— দুলে উঠল বড় বড় বাড়ি। সেক্টর ফাইভের অফিস, বহুতল অফিসবাড়ি ছেড়ে নেমে এসেছিলেন তথ্যপ্রযুক্তির চাকুরেরাও।

এ দিন ফাটল ধরা পড়েছে বেহালায় জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোর নির্মীয়মাণ সেতুতেও। তবে হতাহতের খবর নেই।

বুধবার সন্ধ্যার ওই সময়টায় হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে নিজের বাড়িতেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কম্পনের তীব্রতায় আতঙ্কিত শহরের মতোই তাঁরও মনে হয়েছে, সাম্প্রতিক কালে কলকাতা শহরে এটাই সব চেয়ে বড় মাপের ভূমিকম্প।

এ দিন কম্পন টের পেতেই ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের সামনে মাইক হাতে নেমে পড়েছিলেন কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। ঘোষণা করা হতে থাকে, উড়ালপুলের যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তার তলায় কেউ যেন না থাকেন! এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘এমনিতেই উড়ালপুল নিয়ে ভয়ের শেষ নেই। তার উপরে আবার ভূমিকম্প!’’ এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের মতে, ভূমিকম্প হলে সেতুর কলাম এবং বিমের সংযোগস্থলে চিড় ধরার আশঙ্কা থাকে। এ দিন কলকাতায় যে মাত্রার কম্পন হয়েছে, তাতে সেই আশঙ্কা যথেষ্টই রয়েছে। বিবেকানন্দ সেতুর যা অবস্থা, তাতে বারবার ভূমিকম্পে সেই সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়তে পারে। রেল পরিষেবা না থমকালেও রেল সেতুগুলির হালও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

তবে ভূমিকম্পে থমকে যায় মেট্রোর গতি। কয়েকটি ট্রেন সুড়ঙ্গেও আটকে পড়েছিল। পরে সেগুলিকে ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা হয়। পরিষেবা চালু হওয়ার পরেও মেট্রোর গতি ছিল কম। মেট্রোর মুখপাত্র ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিষেবা চালু হওয়ার পরে যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই খুব ধীর গতিতে মেট্রো চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

ফোনের নেটওয়ার্ক বসে যাওয়া সৌমেনবাবুর মতোই এ দিন বিপাকে পড়েছিলেন অনেকে। ডালহৌসি এলাকার বেসরকারি সংস্থার কর্মী প্রতুল গঙ্গোপাধ্যায় যেমন ফুটপাথে দাঁড়িয়ে বারবার বাড়িতে ফোন করছিলেন। বললেন, ‘‘বাড়িতে আয়ার কাছে ছোট্ট ছেলে রয়েছে। স্ত্রী অফিস থেকে ফিরেছে কি না, জানি না। কিন্তু খবর নেওয়ার জো নেই।’’

মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ভূকম্পের পরে সকলেই একসঙ্গে ফোন করতে শুরু করায় নেটওয়ার্ক ‘জ্যাম’ হয়ে গিয়েছিল। মিনিট কয়েক পরেই অবশ্য তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।

তবে চালু ছিল হোয়্যাটসঅ্যাপ-ফেসবুক। তাতেই দ্রুত খবর ছড়িয়েছে। নিজেদের নিরাপদ ঘোষণা করতে ‘মার্ক সেফ’ চালু করে দেয় ফেসবুক। ছড়ায় গুজব-রসিকতাও। কেউ কেউ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে টিপ্পনী জুড়েছেন, ‘‘ভোটের উত্তাপেই কি কাঁপল ধরণী?’’

তবে এ সবের মধ্যেও আতঙ্কিত হননি এমন লোকও আছেন। যেমন গড়িয়াহাটের একটি বহুতলের বাসিন্দা অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। টিভি দেখতে দেখতে চেয়ার নড়ে উঠেছে বুঝেছিলেন। কিন্তু ফ্ল্যাট ছেড়ে নীচে নামেননি তিনি।

Kolkata Myanmar earthquake
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy