বিমানবন্দরে উদ্ধার হওয়া ধনেশ পাখি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘ পথ পেরোনোর পরে বিধ্বস্ত ও ক্লান্ত তারা। যাত্রা শুরু হয়েছে দিন কয়েক আগে ব্যাঙ্কক থেকে। সেখান থেকে প্রথমে মায়ানমার। ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে মিজোরাম। তার পরে আইজল। আইজল থেকে বিমানে কলকাতা।
পাঁচটা খাঁচায় ৩১টি পাখি আর চারটি পশু ঠাসাঠাসি করে রাখা। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে চাপিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল পুণে। মানে আরও দু’দিনের পথ। তবে বিলুপ্ত প্রায় এই সব পশু-পাখি বেআইনি ভাবে, মিজোরামের জোকতাওয়ার সীমান্ত টপকে চুপিচুপি যে পুণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেই খবর পৌঁছে গিয়েছিল ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই)-এর কাছে। শনিবার সন্ধ্যায় তারাই বাজেয়াপ্ত করে ওই পশু ও পাখিগুলিকে। তাদের পাঠানো হয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানায়।
পুণের যে ব্যক্তির নামে আইজল থেকে বিমানে ওই পশু-পাখি পাঠানো হচ্ছিল, সেই ডমিনিক জ্যাকব সিকুয়েরা পুণে থেকে গাড়ি নিয়ে আগে থেকেই পৌঁছেছিলেন কলকাতা বিমানবন্দরে। ডিআরআই অফিসারেরা আগেভাগে বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলেও, ডমিনিকের হাতে সেই পশু-পাখি যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। শনিবার বিমানবন্দরের পণ্য বিভাগের বাইরে মহারাষ্ট্রের নম্বর লাগানো একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেটিতে পশু-পাখিদের তোলা হচ্ছিল। তখনই হাতেনাতে ধরা হয় ডমিনিককে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন গফ্ফর শেখ নামে এক জন। দু’জনকেই গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়েছে। তাঁদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ডিআরআই জানিয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে গাড়িটিও। পশু-পাখি ও গাড়ি মিলিয়ে বাজেয়াপ্ত করা সামগ্রীর বাজারদর ৮৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা। খাঁচাগুলি খুব হাল্কা সাদা কাপড়ে মোড়া ছিল। তবে তার জন্য পশু-পাখিগুলির শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়নি। আইজল বিমানবন্দরেই কেন খাঁচায় ভরা পশু-পাখিগুলি আটকানো হল না, সে প্রশ্ন উঠেছে। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্ত রবিবার জানিয়েছেন, পশু-পাখিগুলি বেশ ক্লান্ত। আতঙ্কিতও। এই অবস্থায় তাদের আলাদা করে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে।
উদ্ধার হওয়া পশুগুলির মধ্যে রয়েছে একটি বিড়াল, একটি শিশু মার্মোসেট ও দু’টি সাদা-কালো লেমুর। তা ছাড়াও ছিল চারটি সাদা কাকাতুয়া, একটি হলুদ ল্যাজবিশিষ্ট কালো কাকাতুয়া, পাঁচটি সবুজ টিয়া, ১২টি ধূসর টিয়া, একটি নীল ম্যাকাও, একটি রূপোলি ম্যাকাও, একটি ধনেশ, দু’টি প্যারাডাইস পাখি, চারটি ক্যাসুয়ারি পাখি। ডিআরআই জানিয়েছে, এগুলির বেশিরভাগই বিলুপ্ত প্রায় এবং কেনা-বেচা নিষিদ্ধ। তা ছাড়াও, এ ভাবে বিদেশ থেকে পশু-পাখি আনতে গেলে তা দেশের সরকারকে জানানো নিয়ম এবং তার জন্য করও দেওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy