Advertisement
২৫ মার্চ ২০২৩

ইংরেজিতে লেখা অশ্রুত রবি-গান ভিক্টোরিয়ায়

রবীন্দ্রনাথের গান ইংরেজি ভাষান্তরের পরে অন্য কেউ সুর বসিয়েছেন এমনটা তাঁর জীবদ্দশাতেই বার বার হয়েছে।

‘দেয়ার আর নিউমেরাস’ গানটির স্বরলিপি। নিজস্ব চিত্র

‘দেয়ার আর নিউমেরাস’ গানটির স্বরলিপি। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৬
Share: Save:

তাঁকে জানাও ফুরাবে না যেন।

Advertisement

ইংরেজিতে লেখা রবীন্দ্রনাথের নিজের বাঁধা গানের কথা শুনে খানিকটা তেমনই মনে হয়েছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সচিব তথা কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্তের। বছর তিনেক আগে আমেরিকার পিটসবার্গ শহরের একটি দুপুরে তাঁর অভিজ্ঞতা জয়ন্তবাবুকে শোনাচ্ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী তথা গবেষক দেবাশিস রায়চৌধুরী। পিটসবার্গের ইউনিটারিয়ান গির্জায় ঈশ্বরের স্তবগান (হিম)-এর বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়, সুরে গান খুঁজে পাবেন তা ভাবেনইনি তিনি। ইংরেজিতে গানের লিরিক, স্টাফ নোটেশন (স্বরলিপি) সব রয়েছে। গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল দেবাশিসবাবুর।

রবীন্দ্রনাথের গান ইংরেজি ভাষান্তরের পরে অন্য কেউ সুর বসিয়েছেন এমনটা তাঁর জীবদ্দশাতেই বার বার হয়েছে। মূল ইংরেজিতে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, প্রবন্ধ অনেকেরই জানা। কিন্তু রবীন্দ্র সাহিত্যের যাবতীয় আর্কাইভেও মূল ইংরেজি গানের অস্তিত্ব নেই। আমেরিকার গির্জায় পরিচিত রবীন্দ্র গানগুলিও এত দিন বাঙালির অচেনাই ছিল।

আজ, বুধবার সন্ধ্যায় ভিক্টোরিয়া স্মৃতি সৌধের বাগানে তা মেলে ধরা হবে সাধারণের জন্য। ভিক্টোরিয়া-র ইস্টার্ন কোয়াড্রাঙ্গল প্রেক্ষাগৃহে এই গানের গল্প শোনাবেন দেবাশিসবাবু। ধ্রুপদী পাশ্চাত্য সঙ্গীত পরিবেশনের রীতি মেনে ১৭ জনের অর্কেস্ট্রা ও ১৯ জনের কয়্যার সহযোগে গানগুলি গাইবেনও দেবাশিস ও তাঁর কন্যা রোহিনী রায়চৌধুরী। জয়ন্তবাবুর মতে, ‘‘সদ্য আবিষ্কৃত এই গানগুলি হয়তো রবীন্দ্রচর্চার নতুন দিকের হদিস দেবে।’’ সঙ্গীত অনুষ্ঠানটিতে অতিথি হিসেবে থাকার কথা প্রবীণ কবি ও সাহিত্যিক শঙ্খ ঘোষ, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী প্রমিতা মল্লিকের। প্রমিতাদেবী বলছিলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ এক বার তাঁর একটি নাটকের ইংরেজি রূপান্তরের সময়ে ইংরেজিতে কয়েকটি গান লিখে দিয়েছিলেন। তবে তাতে ছায়া ছিল আগের দু’টি বাংলা গানের। নাটকের গানের সুরও রবীন্দ্রনাথের নয়।’’

Advertisement

এ যাত্রা খুঁজে পাওয়া তিনটি গান লেখা ও সুর বসানোর ইতিহাস অবশ্য এখনও পুরোটা স্পষ্ট নয়। তবে ইউনিটারিয়ান ভাবধারায় বিশ্বাসী খ্রিস্টানদের সঙ্গে এ দেশের ব্রাহ্ম সমাজের যোগাযোগ বহু পুরনো। ব্রাহ্মদের মতো ইউনিটারিয়ানরাও নিরাকার একেশ্বরবাদী। তাঁদের গির্জায় ক্রুশকাঠটিও নেই। পুত্র রথীন্দ্রনাথকে ইলিনয়ে কৃষিবিজ্ঞান পড়তে পাঠানোর পরে ১৯১২-১৩ সাল নাগাদ কিছু দিন আমেরিকার আরবানায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দেবাশিসবাবুর ধারণা, ‘‘তখনই ইউনিটারিয়ানদের অনেকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বাড়ে। ওই সময়ে ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা নিয়ে বক্তৃতার জন্য বেশ কিছু ইংরেজি প্রবন্ধ লিখছেন রবীন্দ্রনাথ। ইংরেজিতে ধর্মীয় স্তবগীতিও তিনি তখনই লিখে থাকতে পারেন।’’ বিক্ষিপ্ত জীবনের ‘বিশ্বসাথে যোগ’ বা জগতের আনন্দময় রূপের ছবি মিলেমিশে রবীন্দ্র অধ্যাত্ম ভাবনার ছাপও গানগুলিতে স্পষ্ট। নিজেকে বীণার একটি তারের সঙ্গে তুলনার রবীন্দ্র চিত্রকল্পও এসেছে। ‘দেয়ার আর নিউমেরাস স্ট্রিংস ইন ইওর লুট’, ‘নাও আই রিকল মাই চাইল্ডহুড’ এবং ‘ইওর মার্সি ও ইটারনাল ওয়ান’— গান তিনটি সিডি-বন্দিও করা হয়েছে।

আমেরিকার ইউনিটারিয়ানদের মহলে গানগুলি কিন্তু চেনা। রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র বা আমেরিকা-বিলেতে তাঁর যোগাযোগের নথি ঘেঁটে এই সঙ্গীত রচনার বিষয়েও তথ্য মিলতে পারে বলে ধারণা কোনও কোনও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞের। দেবাশিসবাবুও বলছেন, ‘‘এ যেন হিমশৈলের চুড়োটুকু! মূল ইংরেজিতে হয়তো আরও রবীন্দ্র গান পরে মিলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.