Advertisement
১১ মে ২০২৪

রোগী-মৃত্যু ঘিরে ভাঙচুর, ‘নিগৃহীত’ চিকিৎসকেরা

জরুরি বিভাগের এক পাশে পড়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত রোগী। অন্য পাশে চিকিৎসক ও নার্সদের ঘিরে প্রায় পঞ্চাশ জন হুমকি দিচ্ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৪১
Share: Save:

জরুরি বিভাগের এক পাশে পড়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত রোগী। অন্য পাশে চিকিৎসক ও নার্সদের ঘিরে প্রায় পঞ্চাশ জন হুমকি দিচ্ছেন। হৃদ্‌রোগে আক্রান্তকে দেখতে যাওয়ার কথা জানাতেই জনতার এক জন চিকিৎসকের স্টেথোস্কোপ কেড়ে গলায় পেঁচিয়ে ধরলেন। তাঁকে টেনে বার করলেন জরুরি বিভাগের বাইরে। আর এক জন চিকিৎসক বাধা দিতে গেলে ওষুধের ট্রে দিয়ে মাথায় আঘাত করা হল। জনতার হুমকি, ভাঙচুরের জেরে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া তো দূর অস্ত্‌, ঘণ্টা তিনেক শৌচালয়েও যেতে পারেননি হাসপাতালের কর্মীরা।

শুক্রবার রাতভর এমনই ঘটনা ঘটার অভিযোগ জানিয়েছেন এম আর বাঙুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগী-মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। রোগীর পরিজনের বিরুদ্ধে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স এবং পুলিশের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় যাদবপুর থানার পুলিশ আট জনকে প্রাথমিক ভাবে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পরে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই রাতে এগারোটা নাগাদ টালিগঞ্জ রোডের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নের সুতপা সোলাঙ্কিকে তাঁর পরিজনেরা হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, উচ্চ রক্তচাপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। হার্টের সমস্যা রয়েছে। জরুরি বিভাগের অবজারভেশন রুমে রোগীকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, রোগীর পরিজনেরা তাঁকে নিয়ে চলে যান। রাত বারোটা নাগাদ রোগীর বাড়ির লোক ফের হাসপাতালে পৌঁছন। কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানান, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসক সুতপাদেবীকে পরীক্ষা করে দেখেন, হেঁটে যাতায়াতের জেরে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। দ্রুত ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু তার মধ্যেই তিনি মারা যান।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, রোগী-মৃত্যুর কথা জানানোর কিছু ক্ষণ পরেই চ়ড়াও হন প্রায় ৭০ জন। জরুরি বিভাগের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তাঁরা। অভিযোগ, রক্ষীদের ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢোকেন তাঁরা। শুরু হয় ভাঙচুর। জরুরি বিভাগের ভিতরের কাচের দরজা ভেঙে দেওয়া হয়। রোগীদের জন্য রাখা ওষুধও মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। তার মধ্যে কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক ওষুধও ছিল।

চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, গোলমালের সময়ে আর এক জন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত রোগী পৌঁছন। তাঁকে দেখতে এক চিকিৎসক এগিয়ে গেলেই কয়েক জন স্টেথোস্কোপ চেপে ধরে টেনে বার করে আনেন তাঁকে। কর্তব্যরত নার্সকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। আউটপোস্টের পুলিশ পৌঁছলে তাদেরও হেনস্থা ও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের বিশেষ বাহিনী হাসপাতালে পৌঁছয়। শনিবারও হাসপাতালের বাইরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাসপাতালের অন্য রোগীদের পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্স হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এই আচরণ মেনে নেওয়া হবে না। অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vandalism Death Harassment Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE