ডঃ সুজয় বিশ্বাস
(কলকাতা পুরসভা ও ‘হিডকো’-র তালিকাভূক্ত প্রথম শ্রেনির স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার)
দুর্ঘটনার সঠিক কারণ কী, তা নিয়ে এখনই আমি মন্তব্য করতে চাইছি না। এ নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত তদন্ত হবে। একটাই আশা, আর পাঁচটা তদন্তের মত পোস্তা-কান্ডের তদন্ত যেন নিছকই ফাইলবন্দি হয়ে না যায়।
প্রাথমিকভাবে যা বুঝেছি, নির্মাণকাজে গাফিলতির জন্য এই হাল। বিয়ারিংয়ের দু’দিকে ‘স্লাইস জয়েন্ট’ থাকে। এর একদিকে, অনেকদিন খোলা জল-হাওয়ায় থাকা বল্টু ক্ষয়ে গিয়েছিল। শুনছি, এটা চিহ্ণিত হওয়ার পরেও সারাই না করে ডেক স্ল্যাবে কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়। জানি না, এটা সত্যি কি না। হলে, তদারককারী এবং নির্মাতা— উভয়েরই কড়া শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। সিমেন্ট, লোহা প্রভৃতি নিয়ে উড়ালপুলের নানা সরঞ্জামের ওজন (‘ডেড লোড’) আর যানবাহন সহ ওজন (‘লাইভ লোড’)— এ রকম প্রতিটি বিষয়ের উপর যেমন নজর রাখতে হবে, তেমনই নকশা তৈরি, সরঞ্জাম, তদারকি— এগুলির উপরেও কড়া নজরদারি দরকার। না হলে এত পড়াশোনা, এত আলোচনাচক্র— এ সবের মূল্য কোথায়?
দীপঙ্কর সিংহ
(ইন্সটিটিউট ও আরবান ট্র্যান্সপোর্ট-এর পূর্বাঞ্চলীয় চ্যাপ্টারের সভাপতি ও কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডিজি)
উল্টোডাঙার উড়ালপুল দুর্ঘটনার পরে জানা গিয়েছিল সম্ভবতঃ নির্মানের সময় বাঁকের মুখে স্তম্ভের উপর বিয়ারিং উল্টো করে লাগানো হয়েছিল। এই ঘটনাটি ঘটেছিল রাতে। তখন গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় ও ভেঙে যাওয়া অংশের তলায় খাল থাকায় বড় বিপর্যয় হয়নি। কিন্তু স্বীকার করতেই হবে, নির্মানের সময় কাজের মান ও পারদর্শিতার ক্ষেত্রে হেরফের হলে ভয়ংকর বিপদ হতে পারে। পোস্তায় যে নির্মীয়মান উড়ালপুল ভেঙ্গে পড়ল সেখানে কী ত্রুটি হয়েছে সেটা যথেষ্ট অনুসন্ধানের পরে সঠিক করে বলা সম্ভব। কিন্তু কয়েকটি বিষয় সম্বন্ধে সবাইকেই সচেতন হতে হবে।
চাই উপযুক্ত লোকের মাধ্যমে নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকি। চাই কোনও বিঘ্ন ও অনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত কাজ। চাই উপযুক্ত মাল-মশলা। নকশার পরবর্তী খুটিনাটিগুলির সুক্ষ পরীক্ষা ও প্রয়োগ। কিন্তু পোস্তায় সেখানে যে গন্ডগোল আছে বা ছিল, প্রাথমিক ভাবে সেটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।
আরও পড়ুন: এই দুর্ঘটনা ‘অ্যাক্ট অব গড’! দাবি নিমার্ণকারী সংস্থার
দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকলে কাজের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। হঠাৎ করে নির্বাচনের আগে কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সময়ানুবর্তীতা ও শৃঙ্খলাও কিন্তু ভালো কাজের সহায়ক। অন্যথায় কাজের ব্যয় বাড়ে, পরিদর্শনের বা তদারকির ধারাবাহিকতা বিঘ্ন হয় ও আরও অনেক ত্রুটি ঘটে যেতে পারে। তবে কোন ত্রুটি থেকে এই বিপর্যয়, সেটা কিন্তু আরও তদন্ত করে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এতগুলি মৃত্যুর জন্য যদি কেউ দায়ী হয়, তবে তাকেও শাস্তি পেতে হবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy