Advertisement
১১ মে ২০২৪

খাল বুজিয়ে ভাসছে এলাকা

কোথায় গেল আস্ত একটি খাল? প্রশ্ন শুনেই এড়িয়ে গেলেন স্থানীয় বেশ কয়েক জন। কাছে এসে নিচু স্বরে এক প্রবীণের উক্তি, “আপনি তো খালের উপরে দাঁড়িয়েই কথা বলছেন।” মানে? নাম না জানানোর শর্তে উত্তর এল, “এখানেই এক কালে খাল ছিল। এখন তা বুজিয়ে আমতলা বাজার হয়েছে।”

জলযন্ত্রণা: বাজারের রাস্তায় এ ভাবেই চলাচল। নিজস্ব চিত্র

জলযন্ত্রণা: বাজারের রাস্তায় এ ভাবেই চলাচল। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

৭২ ফুট চওড়া খাল। তার দু’দিকে প্রায় পনেরো ফুট করে বাঁধানো পাড়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছিল সেই খাল। আমতলা, বিষ্ণুপুর, চক এনায়েতনগর, কন্যানগর, কৃপারামপুর, দু’নম্বর হল্ট, ষষ্ঠীতলা হয়ে কাঁটাখালি খালে মিশেছে সেটি। হাল পরচায় এর উল্লেখ রয়েছে সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহৃত নিকাশি খাল বলে। অথচ এখনকার আমতলায় ঢুকে এর কোনও অস্তিত্বই নজরে পড়ে না।

কোথায় গেল আস্ত একটি খাল? প্রশ্ন শুনেই এড়িয়ে গেলেন স্থানীয় বেশ কয়েক জন। কাছে এসে নিচু স্বরে এক প্রবীণের উক্তি, “আপনি তো খালের উপরে দাঁড়িয়েই কথা বলছেন।” মানে? নাম না জানানোর শর্তে উত্তর এল, “এখানেই এক কালে খাল ছিল। এখন তা বুজিয়ে আমতলা বাজার হয়েছে।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, বহু বছর ধরেই আমতলায় শনি ও মঙ্গলবার করে হাট বসত। সেই হাটই এখন আমতলা বাজার। প্রবীণ এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, সত্তরের দশকের প্রথম দিকেও চওড়া এই খাল দিয়ে ডিঙি চলত। শিরাকোল, উস্তি থেকে বস্তায় ধান আর ঢেঁকিছাঁটা চিঁড়ে আসত হাটে। ষাটের দশকে খালের জল এতটাই পরিষ্কার ছিল যে জোয়ার-ভাটা খেলত। অভিযোগ, সত্তরের দশকের শেষ থেকেই খাল দখলের সমস্যা মাথা চাড়া দেয়। আশির দশকের গোড়ায় তৎকালীন সেচমন্ত্রীর উদ্যোগে খালের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে ‘আমতলা বেসিন ড্রেনেজ স্কিম’ নামে শিরাকোল থেকে জোকা পর্যন্ত একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যদিও তা লাল ফিতের ফাঁসে আটকে থেকেই হারিয়ে গিয়েছে। ‘‘এমন কোনও স্কিমের কথা জানা নেই’’— বললেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের পদস্থ এক আধিকারিক।

খালের হারিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছিল প্রায় বছর চল্লিশ আগেই। তবে বছর আটেক ধরে জবরদখলে গতি এসেছে। জেট গতিতে দখল হয়ে আমতলা, কন্যানগর, উদয়রামপুর থেকে ওই খাল পুরোপুরি উবে গিয়েছে। সব থেকে খারাপ অবস্থা আমতলার। খালের পাঁচ ইঞ্চি অস্তিত্বও নেই। সে জায়গায় মাথা তুলেছে ব্যাঙ্ক, অফিসবাড়ি, দোকানপাট। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার পাঁচেক ব্যবসায়ী নিয়ে জমজমাট জেলার বৃহত্তম এই বাজার।

বন্ধ হয়ে যাওয়া খালের জন্য সামান্য বৃষ্টিতেই চালপট্টি, বাতাসাপট্টি, মুড়িহাটা, বস্ত্রপট্টি, তেলমিল গলি, চণ্ডী, কৃপারামপুর, আমতলা, কন্যানগর, বিষ্ণুপুর জলমগ্ন হয়ে যায়। প্রতি বর্ষায় আমতলা বাজারের ব্যবসায়ীদের লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়— বলছিলেন বিশ্বজিৎ দাস, শ্যামল দলুইরা।

মাসখানেক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের তরফে খালের উপর থেকে ব্যবসায়ীদের দোকান সরিয়ে নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যদিও সে ব্যাপারে আর কোনও কাজ এগোয়নি বলেই অভিযোগ জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মহকুমা স্তরের এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এত বছরের সমস্যা দ্রুত মেটানো অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফে নির্দেশ আসা জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Canal Landfill Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE