Advertisement
E-Paper

নবীন শিল্পীদের কাজই হতে পারে নজরকাড়া

বছর দুই আগে নবীন এক শিল্পীর উপরেই ভরসা করেছিল পূর্ব কলকাতার একটি ক্লাব। উৎসব কাপে দেখা গেল, সেই নবীন শিল্পী পিছনে ফেলে দিয়েছেন অনেক নামী শিল্পীকেই!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৬

বছর দুই আগে নবীন এক শিল্পীর উপরেই ভরসা করেছিল পূর্ব কলকাতার একটি ক্লাব। উৎসব কাপে দেখা গেল, সেই নবীন শিল্পী পিছনে ফেলে দিয়েছেন অনেক নামী শিল্পীকেই!

একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল গত বছর সন্তোষপুরের একটি ক্লাবেরও। নবীন শিল্পীর কাজ দেখতে ভিড় উপচে পড়েছিল সেখানে। তাক লাগানো এই শিল্পীকে আর হাতছাড়া করেননি ওই
ক্লাবের কর্তারা।

পুজো ময়দানে এমন তারকা আছেন অনেকেই। নামের ভারে হয়তো এখনও ‘নামী’ শিল্পীর তকমা পান না তাঁরা। কিন্তু কাজের ধারে যে কোনও সময়েই উল্টে দিতে পারেন পুরনো ধারণা এবং হিসেব-নিকেশ। পুজোকর্তাদের কাছে হয়ে উঠতে পারেন তুরুপের তাস।

গত কয়েক বছর ধরেই পুজোর মাঠে পরিচিত নাম গৌরাঙ্গ কুইল্যা। অনেকেই বলেন, তিনি নাকি ভবানীপুর অবসর পুজো কমিটির ‘ঘরের ছেলে’। তাই টানা পাঁচ বছর কাজ করার পরেও পুজোকর্তা শ্যামল নাগদাস শিল্পী বদল করেননি। গত বার তালপাতা দিয়ে উপজাতীয় শিল্প গড়েছিলেন গৌরাঙ্গ। অবসরের প্রতিমা গিয়েছিল স্পেনে। এ বার সেখানে পরির দেশ গড়ছেন শিল্পী।

ত্রিধারা সম্মিলনীতে টানা চার বছর কাজ করার পরে অবশ্য কলকাতার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারেরও ঘরের ছেলে হয়ে উঠছেন গৌরাঙ্গ। ত্রিধারাকে এ বার তিনি দিয়েছেন উপজাতিদের শিকার-সংস্কৃতির থিম। মণ্ডপে শিকারের অস্ত্র, মশালের পাশাপাশি থাকছে ‘আসল’ মোষের মাথাও! গৌরাঙ্গের হাতে রয়েছে শহরের আরও একটি পুজোও।

গত বছর সন্তোষপুর অ্যাভিনিউ সাউথে সেফটিপিনের কাজ করে তাক লাগিয়েছিলেন শিল্পী রিন্টু দাস। এ বার সেখানে তিনি গড়ছেন পুজো পাগলের থিম। প্রাক্তন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পুজো বলে পরিচিত হিন্দুস্থান ক্লাবে মণ্ডপ সাজছে ফুল ও প্রজাপতির থিমে। ৩০ ফুট উঁচু বিরাট ধাতব শিটের ফুল থাকছে। থাকছে হাজার-হাজার প্রজাপতি। রিন্টুর কথায়, ‘‘মণ্ডপে ঢুকলে মনে হবে, আকাশ যেন প্রজাপতিতে ছেয়ে গিয়েছে!’’ খিদিরপুর পল্লি শারদীয়ায় রিন্টু তুলে ধরছেন ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি রহস্যকে। প্রায় ৪০ ফুট উঁচু শিবলিঙ্গ গড়ছেন কাঠ ও ধাতুতে। মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ২০ হাজারের বেশি বড় ও ছোট চামচ। কাঠের কাজ করতে নিয়ে আসা হচ্ছে বলাগড়ের নৌকা তৈরির কারিগরদের। দুর্গাপ্রতিমা থাকছে আনন্দময়ী রূপে।

গত বছর হাতিবাগানের কাশী বোস লেনের শিশুকন্যা থিমে লোকের তারিফ কুড়িয়েছিলেন শিল্পী প্রদীপ দাস। এ বার সেখানে শিল্প ও পরিবেশের আঙ্গিকে থিম সাজিয়েছেন তিনি। শিল্পের দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষায় মণ্ডপের বাইরে থাকছে ধাতুর কাজ। ভিতরের সজ্জায় প্রদীপ ব্যবহার করছেন কাগজ, শোলা। বেহালা রায়বাহাদুর রোডে নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের মহিলা পরিচালিত পুজোতেও কাজ করছেন প্রদীপ। সেখানে কাঠ, কাপড়, পিতল দিয়ে মণ্ডপ সাজাচ্ছেন তিনি।

বছর কয়েক আগে ভবানীপুরের একটি ক্লাবে ক্রিস্টাল পাথরের বৃষ্টি গড়ে চমক লাগিয়েছিলেন আর এক তরুণ শিল্পী শিবশঙ্কর দাস। এ বার তাঁর চমকের বিষয় কলকাতার ট্যাক্সি। বেলেঘাটা ৩৩ পল্লিতে মণ্ডপ সাজাতে ট্যাক্সির কাঠামোই তুলে এনেছেন তিনি। শিবশঙ্কর বলছেন, ‘‘থিম কলকাতার নস্ট্যালজিয়া। হলুদ-কালো ট্যাক্সির থেকে সেটা আর কেউ ভালো ভাবে তুলে ধরতে পারবে না।’’ ৬৪ পল্লিতে অ্যালুমিনিয়ামকে ব্যবহার করে ‘রূপান্তর’ থিম সাজাচ্ছেন শিবশঙ্কর। সেখানে মিলবে মিনেকারি, কাঁথা শিল্পের ধাঁচও। দমদম পার্ক যুবক বৃন্দের মণ্ডপে মুক্তির থিম বোঝাতে ডানার মতো মণ্ডপ গড়ছেন তিনি।

ফি বছর চার-পাঁচটি পুজো করেন শিল্পী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। এবং প্রত্যেকটি কম-বেশি দর্শকদের নজর কাড়ে। এ বার টালার সার্কাস ময়দানের পুজোয় কঞ্চি ও গাছের ডাল দিয়ে বাঘ সংরক্ষণের থিম গড়ছেন শিল্পী। পাতিপুকুর বসাকবাগানে আবার তাঁর অস্ত্র এক পায়ে দাঁড়ানো তালগাছ। মণ্ডপ সাজছে তালগাছেরই নানা অংশ দিয়ে। উত্তরের পাশাপাশি দক্ষিণেও রয়েছেন এই শিল্পী। সমাজসেবীতে তাঁর থিম ‘আমার দুর্গা’। হাজরা পার্কের পুজোয় তিনি তুলে ধরছেন কুলিদের। শিল্পীর কথায়, ‘‘দুর্গার আসা-যাওয়া কুলিদের কাঁধে চেপেই। কিন্তু তাঁদের কথা কেউ ভাবে না। তাই আমার থিম ওঁদের নিয়েই।’’ দক্ষিণ কলকাতা সর্বজনীনে আবার সোমনাথ বেছেছেন পরিবেশকে। প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্লাস্টিক দিয়েই মণ্ডপ সাজাচ্ছেন তিনি। ব্যবহার করছেন পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের তৈরি জল ও নরম পানীয়ের বোতল।

গত কয়েক বছর ধরে পুজোয় নাম করেছেন শিল্পী বিশ্বনাথ দে-ও। এ বার বেহালা ফ্রেন্ডসের পুজোয় দুর্গাকেই থিম বেছেছেন তিনি। কাঠ খোদাই, আয়না, পিতল, টিন দিয়ে মণ্ডপ সাজছে সেখানে।

এমনিতে ‘মাটির মানুষ’ হলেও শিল্পী পরিমল পাল গত কয়েক বছর ধরে থিমপুজোও করছেন। এ বার সল্টলেক এ ই ব্লক পার্ট ওয়ানের পুজোয় সাধারণ মহিলাদেরই দুর্গা হিসেবে তুলে ধরছেন তিনি। মণ্ডপ সাজছে শিরীষ কাগজ ও প্রদীপে।

তাল ঠুকছে ‘দ্বিতীয় দল’। নামীরা সাবধান!

Durga Puja Young artists Pandels
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy