প্রতীকী ছবি।
কখনও রং, কখনও লিঙ্গ, কখনও বা অন্য কিছুর ভিত্তিতে বিদ্বেষ বৃদ্ধি। সাইটে সাইটে ছড়িয়ে এমনই হিংসার খেলা। তাতেই আচ্ছন্ন কৈশোর।
কতটা হিংস্র হওয়া গেল, তা প্রমাণ করতে হবে একের পর এক ধাপে। প্রতি ধাপে বাড়বে দায়িত্ব। যত বেশি মানুষের ক্ষতি হবে, ততই বাড়বে নম্বর। ল্যাপটপ বা স্মার্ট ফোনের পর্দায় এমনই সব খেলার ছলে বদলে যাচ্ছে কমবয়সী মন। দিন দিন যার প্রভাবে ভয় বাড়ছে চারপাশে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৈশোরে নানা বিষয় নিয়ে মানসিক অস্থিরতা তৈরির প্রবণতা বেশি থাকে। সঙ্গে থাকে দুনিয়া সম্পর্কে নানা কৌতূহল। মাউসের কয়েক ক্লিকেই যা মিটে যেতে পারে বলে বিশ্বাস এখন। অস্থির বয়সের সেই কৌতূলের বশেই কোন সাইটে গিয়ে যে কোন খেলায় জড়িয়ে পড়ছে তারা! সাইবার গেম চক্রের প্রতি আসক্তি এমন জায়গায় পৌঁছচ্ছে, যা এই কিশোর খেলোয়াড়দের মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তুলছে। যেমনটা হয়েছে মুম্বইয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রের ক্ষেত্রে। খেলার নিয়ম মানতে মানতে প্রাণ দিতেও বাধেনি তার।
ওই কিশোরের নেট-ফাঁদের নাম ছিল ‘ব্লু হোয়েল গেম’। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে এই খেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য অনুমতি চাইতে হয়। ওয়েবসাইট থেকে আবেদনকারীর বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য নেওয়া হয়। তার পরে হুমকির সুরে জানানো হয়, পঞ্চাশ দিনের ওই খেলায় সব কাজ ঠিক মতো না করলে আবেদনকারীর পরিবারের ক্ষতি করে দেওয়া হবে, কারণ তাদের হাতে সব তথ্য রয়েছে। একের পর এক নির্দেশ মানতে মানতে, শেষ ধাপে আত্মহত্যার নির্দেশও পালন করে ফেলে খেলোয়াড়।
এমন আরও বহু বিপদ লুকিয়ে আছে ইন্টারনেটের একাধিক সাইটে, বিভিন্ন নামে। বছরখানেক আগেও খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল আরও এক সাইবার ক্রীড়া, যার জেরে আচমকা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল পথ দুর্ঘটনা। কিন্তু সমস্ত সাবধান বার্তা উপেক্ষা করেই খেলার নেশায় বুঁদ হয়ে ছিলেন অনেকে। খেলা আছে আরও, যা বিপদ ডেকে আনে ধীরে ধীরে। যেমন কিছু দিন আগেই ইতালিতে জরুরি ভিত্তিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এক খেলা। সাদা চামড়ার খেলোয়াড়ের নিজেকে বাঁচাতে হয় একের পর এক কালো পুতুলকে মেরে। যত বেশি কৃষ্ণাঙ্গকে মারতে পারবে খেলোয়াড়, তার নম্বর বাড়বে ততই। এর জেরে বাড়তে থাকা বর্ণ বিদ্বেষ আটকাতে শেষে নড়ে বসতে হয় সরকারকে।
রয়েছে ধর্ষণের খেলাও। কোন মেয়েকে কতটা উত্ত্যক্ত করতে পারল খেলোয়াড়, তা বুঝেই পরের ধাপে যাওয়া। ধর্ষণের পরে সেই নম্বর আরও বাড়ে। আবার কোনও খেলায় তৈরি করতে হয় রাসায়নিক অস্ত্র। কার অস্ত্রে কত মানুষের মৃত্যু হল, তা-ই বলে দেবে সেই খেলোয়াড়ের দর কত। পাশাপাশি, একাধিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও রয়েছে নানা বিপজ্জনক গ্রুপ। তার অন্যতম সুইসাইড কমিউনিটি। যেখানে সদস্যদের বিভিন্ন কাজ দেওয়া হয়। যার মধ্যে লুকিয়ে থাকে মরণ ফাঁদ। কখনও হাতের শিরা কাটতে বলা হয়, তো কখনও বাড়ি থেকে পালিয়ে সাগর পাড় ধরে হাঁটতে বলা হয়। নেশাসক্তের মতো সেই কাজগুলো করে যায় সদস্যেরা।
এ প্রসঙ্গে মনোবিদ সঞ্জয় গর্গ বলেন, ‘‘অধিকাংশ বাচ্চারা অবসর সময়ে ভিডিও গেম খেলে কাটাচ্ছে। এই খেলাগুলোয় মারধর করা হয়, গুলি চালানো হয়, সেখান থেকে ওদের ধ্বংসের প্রতি ভাল লাগা তৈরি হয়। এগুলো তাদের মানসিক কাঠামোয় পরিবর্তন তৈরি করে।’’
তবে ইন্টারনেটে খেলা মানে যে শুধুই বিপদ, এমন নয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ যেমন জানাচ্ছেন, এই ধরনের খেলা কিংবা কমিউনিটির প্রতি সকলের সমান
কৌতূহল থাকে না। আবার যে সাইবার গেম চক্র এগুলো পরিচালনা করে, তারাও সবাইকে এই খেলায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেয় না। কারণ, তাদের একটা টার্গেট গ্রুপ রয়েছে। বিভিন্ন প্রশ্ন করে তাই আবেদনকারীদের মানসিক অবস্থার
পরীক্ষা করা হয়। তার পরে অংশগ্রহণের
অনুমতি দেওয়া হয়। মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘‘যারা এই খেলা উপভোগ করছে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য
নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তবে এই সমস্যা হঠাৎ তৈরি হয় না। প্রথম থেকে খেয়াল রাখলে বোঝা যায়, কোথাও জীবনের প্রতি অবসাদ তৈরি হয়েছে সেই কিশোরের। সে দিকে নজর রাখলে বিপদ এ়ড়ানো যেতে পারে।’’
পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ আবার মনে করাচ্ছেন, বাবা-মায়েদের ইন্টারনেট সম্পর্কে খুব সচেতন হতে হবে। কোন সময়ে কোন খেলা বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তা জেনে নিতে হবে। তা হলে সন্তানের উপরে নজর রাখা তাঁদের পক্ষে সহজ হবে। তিনি বলেন, ‘‘পাশাপাশি ব়ড় হয়ে ওঠার সময়ে একটু ভয়ের অনুভূতি তৈরি হওয়া জরুরি। খুব বেশি বেপরোয়া মনোভাব চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy