Advertisement
২২ মে ২০২৪

অটো বেপরোয়াই, এ বার রোষে বাসও

অটোশাসনে পরিবহণমন্ত্রী যতই রাস্তায় নামুন না কেন, তাঁকেও যে থোড়াই কেয়ার, শুক্রবার রাতে সেই দৃশ্য আরও এক বার দেখল কলকাতা। এ বার অটোচালকদের রোষের মুখে পড়লেন একটি বেসরকারি বাসের চালক ও খালাসি। অটোচালকদের মারে জখম হয়েছেন ওই দুই বাসকর্মী। আহতদের মধ্যে সুশান্ত ঘোষ নামে এক বাসকর্মীকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটে টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের সামনে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

অটোশাসনে পরিবহণমন্ত্রী যতই রাস্তায় নামুন না কেন, তাঁকেও যে থোড়াই কেয়ার, শুক্রবার রাতে সেই দৃশ্য আরও এক বার দেখল কলকাতা। এ বার অটোচালকদের রোষের মুখে পড়লেন একটি বেসরকারি বাসের চালক ও খালাসি। অটোচালকদের মারে জখম হয়েছেন ওই দুই বাসকর্মী। আহতদের মধ্যে সুশান্ত ঘোষ নামে এক বাসকর্মীকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটে টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের সামনে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ এসডি ২৮ রুটের একটি বেসরকারি বাস টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের সামনে এসে দাঁড়ালে অপেক্ষারত যাত্রীরা হুড়মুড় করে উঠতে শুরু করেন। মাসখানেক আগে মহেশতলা ডাকঘর থেকে যাদবপুর সেন্ট্রাল পার্ক পর্যন্ত ওই রুটটি চালু হয়েছে। বাসটি যেখানে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তার পাশেই টালিগঞ্জ-যাদবপুর রুটের অটোস্ট্যান্ড। ওই বাসের চালক শ্রীমন্ত মণ্ডল বলেন, “মেট্রো স্টেশনের সামনে যাদবপুরের যাত্রীদের বেশ বড়সড় লাইন ছিল। কিন্তু তুলনায় অটো কম ছিল। আমি বাস দাঁড় করাতেই এক দল যাত্রী তড়িঘড়ি উঠে পড়েন। আর তা দেখেই দু’টি অটো থেকে কিছু লোকজন বেরিয়ে রে-রে করে বাসের দিকে তেড়ে আসেন।” শ্রীমন্তবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, অটোচালকদের একাংশ তাঁকে হুমকি দিতে থাকেন। তাঁদের দাবি ছিল, যাত্রী না তুলেই স্ট্যান্ড ছেড়ে চলে যেতে হবে বাসটিকে।

কিন্তু যাত্রীরা সে কথা শুনবেন কেন! হাতের সামনে বাস পেয়ে তাঁরা যখন লাইন দিয়ে উঠছেন, তখন এক জন চালক তাঁর অটো নিয়ে বাসের পথ আটকে দাঁড়ান। আর এক জন অটো দিয়েই বাসের একমাত্র দরজা আটকে দাঁড়িয়ে পড়েন। এতে বাসযাত্রীরা প্রতিবাদ করলে বাসকর্মী সুশান্তবাবু এক জন চালককে অটো সরিয়ে নিতে বলেন। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অটোচালকদের একাংশ। তাঁরা সুশান্তবাবু ও চালককে মারধর করেন। শ্রীমন্তবাবু বলেন, “কয়েক মিনিটের মধ্যে আশপাশ থেকে আরও অটোচালক চলে আসেন। সুশান্তকে ধরে বাসের রডে মাথা ঠুকে দেওয়া হয়।” এর পরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পুলিশ জানায়, মাথায় আঘাতের কারণে সুশান্তবাবুবমি করতে শুরু করেন। তাঁকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই দু’টি অটোর নম্বর দিয়ে অটোচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন সুশান্তবাবু। কিন্তু তার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

অটোচালকদের এই দাপট অবশ্য নতুন নয়। গত ক’মাসে কলকাতা ও শহরতলিতে তাঁদের আক্রমণে একের পর এক যাত্রী জখম হয়েছেন। রেহাই পাননি মহিলারাও। গত বৃহস্পতিবারই লেক এলাকায় বিপজ্জনক ভাবে অটো চালিয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে রাস্তায় ফেলে দেন চালক। মারধর করা হয় তাঁর স্বামীকে। ওই একই দিনে মানিকতলায় অটোচালকের হাতে নিগৃহীত হন এক মহিলা। শুধু তাই নয়, মাসখানেক আগে খোদ পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের অটো-শাসনের দিনেই নিউ আলিপুরে এক যুবতীর গলা টিপে ধরেন অটোচালক। পুলিশ তো বটেই, মন্ত্রীর শাসনকেও যে অটোচালকদের একাংশ বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে, তার প্রমাণ মিলেছে বারেবারেই। কিন্তু বাসকর্মীদের উপরে অটোচালকদের চড়াও হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।

একাধিক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ভাড়া না বাড়ার ফলে বহু রুটে বাস কমে গিয়েছে। বেসরকারি বাসের পাশাপাশি কমেছে সরকারি বাসও। এই পরিস্থিতিতে বহু রুটে অটোই হয়ে উঠেছে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান অবলম্বন। এবং তারই সুযোগ নিচ্ছেন এক শ্রেণির অটোচালক। সাধারণ মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে খেয়াল খুশি মতো ভাড়া হাঁকছেন তাঁরা। তুচ্ছ কারণে নানা ভাবে তাঁদের হাতে অপদস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শুক্রবার রাতে যে রুটে ওই ঘটনাটি ঘটে, সেখানকার যাত্রীরাও এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অটোচালকদের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, টালিগঞ্জ থেকে যাদবপুর রুটের বেশ কিছু অটোচালক প্রায় প্রতি দিনই যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ইচ্ছেমতো রুট ভাঙেন। খেসারত হিসেবে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয় যাত্রীদেরই।

শুক্রবারের ওই ঘটনার পরে রীতিমতো আতঙ্কিত এসডি ২৮ রুটের বাস মালিকদের একাংশ। শ্রীমন্তবাবুদের বাসের মালিক নীলরতন পাল বলেন, “ভাড়া বাড়েনি। তবু কষ্টেসৃষ্টে বাস চালাচ্ছি। কিন্তু এ রকম ঘটনা ঘটলে এবং পুলিশি নিরাপত্তা না মিললে বাধ্য হয়ে বাস তুলে নিতে হবে।”

কিন্তু এর থেকে রেহাই কোন পথে? পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র আবারও বলেছেন, “দোষী অটোচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। পুলিশকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছি।” তৃণমূল অটো ইউনিয়নের নেতা মেঘনাথ পোদ্দারও অভিযুক্ত অটোচালকদের পাশে দাঁড়াননি। তিনি বলেন, “পুলিশকে ব্যবস্থা নিতেই হবে। আমরা সাহায্য করতে রাজি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE