এ বার লেক আর রবীন্দ্র সরোবর আলাদা হয়ে যাচ্ছে!
ধাঁধা নয়, সত্যি। লেক থানার মুখাপেক্ষী হয়ে আর থাকতে হবে না ১৯২ একরের ঢাকুরিয়া লেক বা রবীন্দ্র সরোবরকে। রবীন্দ্র সরোবর নামে একটি থানা তৈরি হচ্ছে। লেক থানা ভেঙে ওই থানা তৈরির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে স্বরাষ্ট্র দফতর।
লেক থানা ঢাকুরিয়া সেতুর নীচে। ব্যস্ত সময়ে রবীন্দ্র সরোবরের উত্তরে আব্দুল রসুল অ্যাভিনিউ ঘেঁষা চত্বরে গোলমালের খবর পেলে লেক থানা থেকে সেখানে পৌঁছতে প্রায় ১৫ মিনিট লেগে যায়। এ নিয়ে পুলিশের যেমন অসুবিধে, সাধারণ মানুষের অভিযোগ আরও বেশি। কিছু দিন আগে রবীন্দ্র সরোবরে প্রাতর্ভ্রমণে আসা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কয়েক জন প্রাতর্ভ্রমণকারীর গোলমাল হয়। এই সব সমস্যা সামাল দেওয়ার পাশাপাশি সন্ধ্যায় নির্জন হয়ে যাওয়া সরোবরে প্রহরা ও টহলদারির বন্দোবস্ত করতে হিমসিম খায় পুলিশ। সেই সঙ্গে পণ্ডিতিয়া বা মনোহরপুকুর রোডের মতো এলাকা লেক থানার আওতাভুক্ত হয়ে থাকা আদৌ বাস্তবসম্মত নয় বলেই পুলিশের মত।
অন্য দিকে, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা ভেঙে বিদ্যাসাগর, কড়েয়া থানা ভেঙে বন্ডেল গেট ও মানিকতলা থানা ভেঙে কাঁকুড়গাছি থানা তৈরির জন্যও স্বরাষ্ট্র দফতর অনুমোদন দিয়েছে। লালবাজার সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্র দফতর বলেছে, দু’টি পর্যায়ে নতুন চারটি থানা হবে। পুলিশকে অগ্রাধিকার অনুযায়ী প্রস্তাবিত চারটি থানার তালিকা তৈরি করতে বলেছে স্বরাষ্ট্র দফতর। প্রথমে রবীন্দ্র সরোবর ও বিদ্যাসাগর, দ্বিতীয় পর্যায়ে কাঁকুড়গাছি ও বন্ডেল গেট থানা তৈরি করতে চাইছে লালবাজার।
রবীন্দ্র সরোবর ও বিদ্যাসাগর থানার পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই তৈরি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। গোলপার্কের কাছে যেখানে ছিল গড়িয়াহাট থানা, সেখানেই রবীন্দ্র সরোবর থানা তৈরি হতে পারে। এখন ওই জায়গায় র্যাফ-এর কার্যালয়। আবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে, বর্তমানে ফাঁকা পড়ে থাকা কয়েকটি ঘর নিয়েও থানা তৈরি করা যেতে পারে। বিদ্যাসাগর থানার জন্য আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা চত্বরেই জায়গা নির্দিষ্ট রয়েছে। সেই তুলনায় বন্ডেল গেট থানার জন্য জমি চিহ্নিত করা থাকলেও সেখানে নতুন বাড়ি তৈরি করতে হবে। আবার কাঁকুড়গাছি থানার জন্য এই মুহূর্তে একটি ভাড়া বাড়ি ছাড়া কিছু পাওয়া যাচ্ছে না।
নতুন চারটি থানা তৈরির প্রস্তাব কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র দফতরে গিয়েছিল ২০০৬ সালে। কিন্তু ২০১১-তে সংযোজিত এলাকার ১৭টি থানা আসে কলকাতা পুলিশের আওতায়। এ বছর ওই ১৭টি থানার মধ্যে চারটি ভেঙে নতুন আরও চারটি থানা তৈরি হয়। তাই, বর্তমানে কলকাতা পুলিশের থানার সংখ্যা ৬৯। কিন্তু সংযোজিত এলাকার বাইরে চারটি নতুন থানা তৈরির জন্য ২০০৬-এর সেই প্রস্তাব এত দিন অনুমোদন পায়নি। এক কর্তা জানান, সম্ভবত পুজোর মুখেই রবীন্দ্র সরোবর ও বিদ্যাসাগর থানা তৈরি হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, “এক বছরের মধ্যেই ওই চারটি নতুন থানা হয়ে যাবে।”
লালবাজারের বক্তব্য, পুরনো থানা ভেঙে যত নতুন নতুন থানা হবে, ততই পুলিশের কাজের সুবিধে, মানুষেরও হ্যাপা কম। পুলিশ ওই দাবি করলেও অল্প সময়ে সংযোজিত এলাকায় এত নতুন থানা হওয়ায় বহু মানুষই বুঝতে পারছেন না, তাঁদের বাড়ি বা পাড়া কোন থানার অধীন। এক জন নাগরিক যাতে সহজে সেই তথ্য পেতে পারেন, তেমন উদ্যোগ কিন্তু এখনও কলকাতা পুলিশের নেই।
অথচ, এই অবস্থাতেই পরবর্তী পর্যায়ে উল্টোডাঙা থানা ভেঙে বেলগাছিয়া এবং যাদবপুর ভেঙে গল্ফ গ্রিন, হরিদেবপুর ভেঙে বড়িশা ও কসবা ভেঙে রাজডাঙা থানা হওয়ার কথা। সেই হিসেবে কলকাতা পুলিশের মোট থানার সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৭।
নতুন এত থানার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী কোথা থেকে পাওয়া যাবে? যেখানে থানা-পিছু একশো থেকে দেড়শো অফিসার এবং কনস্টেবল ও পুলিশকর্মী প্রয়োজন। লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, রিজার্ভ ফোর্স, ব্যাটালিয়ন-সহ বিভিন্ন জায়গার অফিসার ও কর্মীদেরই প্রাথমিক পর্যায়ে নতুন থানাগুলিতে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে তাঁদের জায়গায় নতুন অফিসার ও কনস্টেবল নিয়োগ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy