Advertisement
০৮ মে ২০২৪

‘উপদ্রুত’ পাড়ায় শান্তির ভোট

শনিবার রাতে বেলঘরিয়ায় লোকাল কমিটির দুই সদস্য, স্থানীয় এক যুব নেতা ও রাজ্য কমিটির এক সদস্য মার খাওয়ার পরে কর্মীদের মনোবল জোগাতে রবিবার সকাল থেকেই হাজির ছিলেন বিমান বসু, ক্ষিতি গোস্বামী, অসীম দাশগুপ্তের মতো নেতারা। তাতেও শেষ রক্ষা হল না। প্রতিবাদী সেই সিপিএম কর্মীদের সোমবার আর পথেই দেখা গেল না। ৪-৫টি ক্যাম্প ছাড়া বেলঘরিয়া ও কামারহাটি বিধানসভার অন্যান্য এলাকা জুড়ে এ দিন কার্যত চোখেই পড়েনি সিপিএমের ক্যাম্প অফিস।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০০:৫৩
Share: Save:

শনিবার রাতে বেলঘরিয়ায় লোকাল কমিটির দুই সদস্য, স্থানীয় এক যুব নেতা ও রাজ্য কমিটির এক সদস্য মার খাওয়ার পরে কর্মীদের মনোবল জোগাতে রবিবার সকাল থেকেই হাজির ছিলেন বিমান বসু, ক্ষিতি গোস্বামী, অসীম দাশগুপ্তের মতো নেতারা। তাতেও শেষ রক্ষা হল না। প্রতিবাদী সেই সিপিএম কর্মীদের সোমবার আর পথেই দেখা গেল না।

৪-৫টি ক্যাম্প ছাড়া বেলঘরিয়া ও কামারহাটি বিধানসভার অন্যান্য এলাকা জুড়ে এ দিন কার্যত চোখেই পড়েনি সিপিএমের ক্যাম্প অফিস। শনিবার রাতে বেলঘরিয়ার দক্ষিণপাড়ার ভগবতী চ্যাটার্জি স্ট্রিটে সিপিএমের যে দলীয় কার্যালয়ে হামলা হয়েছিল, সোমবার বন্ধ ছিল সেটি। দুপুর ২টো নাগাদ কামারহাটির জোনাল অফিসে সিপিএম প্রার্থী অসীম দাশগুপ্তের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও দেখা গেল হাতে গোনা সিপিএম নেতা-কর্মী উপস্থিত। দুপুরে কর্মীদের জন্য ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ, দইয়ের আয়োজন থাকলেও পরে সন্ধ্যায় তা বিলি করতে হয়েছে এলাকার দরিদ্রদের মধ্যে।

তৃণমূল নেতৃত্ব ও দমদম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সৌগত রায়ের দাবি, এই সব কিছুর পিছনে রয়েছে সিপিএমের সাংগঠনিক দুর্বলতাই। তবে জেলার সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের দাবি, “ওঁদের ভয় পেয়ে নয়, সাংগঠনিক ভাবে দুর্বলতাও নয়। আমরা ইচ্ছে করেই এ বার আর প্যান্ডেল গড়ে ক্যাম্প অফিস বানাইনি। পুরনো বাড়ির বারান্দা, ফ্ল্যাটের নীচে ক্যাম্প অফিস হয়েছিল। তাই চোখে পড়েনি। আর ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় পার্টি অফিসটি বন্ধ ছিল।” তন্ময়বাবুর আরও দাবি, “কামারহাটির ৯৮ শতাংশ বুথে আমরা এজেন্ট দিতে পেরেছি। প্রথমে তৃণমূল তুলে দিলেও নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে ফের তাঁদের বসিয়েছি।”

তবে শেষ দফার ভোটের দু’দিন আগে রাজনৈতিক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে বেলঘরিয়ার যে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল সেখানেই এ দিন শান্তির ভোট দেখল জনতা। ভোর থেকেই এলাকার দু’টি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ছিল লম্বা লাইন। নিরাপত্তাও কড়া হাতে সামলাতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। স্থানীয় সিপিএম নেতারা জানান, ভগবতী চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দাদের ভোট কেন্দ্র ছিল বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ। অন্য দিকে, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপ মিত্র যে এলাকার বাসিন্দা, সেই চৌধুরীপাড়ার ভোট কেন্দ্র ছিল আনন্দম প্রাইমারি বিদ্যালয়। ওই দু’টি কেন্দ্রের পাশের কয়েকটি বুথেও চোখে পড়েছে শান্তিরই ছবি। যেখানে বেলঘরিয়ার অন্যান্য জায়গায় ভোর থেকেই এজেন্টদের বার করে দেওয়া এবং ক্যাম্প অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ তুলতে শুরু করেছিল সিপিএম নেতৃত্ব, সেখানে এই চিত্র স্বভাবতই আলাদা!

সিপিএম নেতা মানস মুখোপাধ্যায় ও তন্ময় ভট্টচার্য অবশ্য পুরো বিষয়টিতে ভোটারদের কৃতিত্ব দাবি করেছেন। তাঁদের কথায়, “হামলা চালানোর পরে তৃণমূল ওখানে ঝামেলা করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে গিয়ে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছেন।” এ দিন হাসপাতাল থেকেই অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে ভোট দিতে গিয়েছিলেন সায়নদীপ ও সুবিমল নামে আর এক সিপিএম কর্মী।

একই রকম শান্তির ছবি ছিল বরাহনগরেও। তবে কিছু জায়গায় তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম প্রার্থী অসীম দাশগুপ্ত। নিমতা, খড়দহ, পানিহাটি, সোদপুর, বিরাটিতে এজেন্টদের মারধর, ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সে সব জায়গায় বিরোধীদের এজেন্ট চোখেও পড়েনি। উল্লেখযোগ্য ছিল না কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতাও। এ দিন সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ পানিহাটির নাটাগড়ে ভোট দিয়ে ফেরার সময়ে ছ’জন সিপিএম সমর্থকের উপরে হামলা, এক অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রহড়ার রিজেন্ট পার্কে ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করে দুই সিপিএম কর্মীকে মেরে মুখ ফাটানোর অভিযোগও উঠেছে। যদিও সব অভিযোগই অস্বীকার করে তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “হেরে যাওয়ার ভয়ে অপপ্রচার করছে সিপিএম। সর্বত্রই শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

belgharia shantanu ghosh lok sabha election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE