Advertisement
১৮ মে ২০২৪

জ্বালা জুড়িয়ে অবশেষে কালবৈশাখী-বৃষ্টি

৪০ দিনের চাতকের অপেক্ষা শেষ। তেষ্টা মিটিয়ে শনিবার ফের শহরে হাজির ঝড়বৃষ্টি! কলকাতার কপালে অবশ্য ২৩ মার্চ একটা ঝড় জুটেছিল। কিন্তু তার পিছনে ছিল একটি ঘূর্ণাবর্ত। তাই তাত্ত্বিক ভাবে সেটাকে কালবৈশাখী বলতে রাজি নন বিজ্ঞানীরা। সেই হিসেবে এ দিনই মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী পেল কলকাতা। বৈশাখের ১৯ তারিখে! সাধারণত, মার্চের শেষ থেকেই কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখীর পরিস্থিতি তৈরি হয়। হাওয়া অফিসের হিসেবে, মার্চে গড়ে দু’টি কালবৈশাখী হয়। এপ্রিল ও মে মাসে গড়ে তিন-চারটি কালবৈশাখী পাওয়া যায়। কিন্তু এই বছর সেই ধারা পুরো বদলে গিয়েছে।

বিজলি-আখরে স্বস্তির বার্তা। শনিবার সন্ধ্যায়।  ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

বিজলি-আখরে স্বস্তির বার্তা। শনিবার সন্ধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৪ ০০:০৬
Share: Save:

৪০ দিনের চাতকের অপেক্ষা শেষ। তেষ্টা মিটিয়ে শনিবার ফের শহরে হাজির ঝড়বৃষ্টি!

কলকাতার কপালে অবশ্য ২৩ মার্চ একটা ঝড় জুটেছিল। কিন্তু তার পিছনে ছিল একটি ঘূর্ণাবর্ত। তাই তাত্ত্বিক ভাবে সেটাকে কালবৈশাখী বলতে রাজি নন বিজ্ঞানীরা। সেই হিসেবে এ দিনই মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী পেল কলকাতা। বৈশাখের ১৯ তারিখে!

সাধারণত, মার্চের শেষ থেকেই কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখীর পরিস্থিতি তৈরি হয়। হাওয়া অফিসের হিসেবে, মার্চে গড়ে দু’টি কালবৈশাখী হয়। এপ্রিল ও মে মাসে গড়ে তিন-চারটি কালবৈশাখী পাওয়া যায়। কিন্তু এই বছর সেই ধারা পুরো বদলে গিয়েছে। গোটা মার্চ ও এপ্রিলে একটিও কালবৈশাখী জোটেনি কলকাতার কপালে। মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী এল বৈশাখের ১৯ তারিখে!

বস্তুত, কালবৈশাখীর উৎস থাকে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, গরমকালে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে হাওয়া গরম হয়ে উপরে উঠে যায়। বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে কম উষ্ণতায় তা ঘনীভূত হয়ে বজ্রগর্ভ উল্লম্ব মেঘ তৈরি করে। সেই মেঘ বয়ে এলেই কলকাতা ও সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখী হয়। এ দিনও ঠিক তেমনটাই ঘটেছে।

রেডার চিত্রে বিকেলেই পুরুলিয়া ও সংলগ্ন ঝাড়খণ্ডের উপরে একটি বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ সেটিই কলকাতার দিকে বয়ে আসে। শুরু হয় ঝড়বৃষ্টি। সঙ্গে সঙ্গে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানো, বাজের আওয়াজ! হাওয়া অফিসের হিসেবে এ দিন ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি।

ঝড়ের দাপটে এ দিন শহরে বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানিকতলা, রবীন্দ্র সরোবর, নারকেলডাঙা, বেহালায় গাছ উপড়ে পড়েছে। ঝড়বৃষ্টির মধ্যে গাছ উপড়ে পড়ার ফলে ব্যাহত হয় যান চলাচলও। উত্তর কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার কিছু ক্ষণ পরে ঝড় শুরু হয়। ফলে সভায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ঝড়ের পরপরই তাপমাত্রা অনেকটা নেমে গিয়েছে শহরে। যদিও শুক্রবার রাতেও ঝোড়ো হাওয়া-বৃষ্টির জেরে তাপমাত্রা কমেছিল। হাওয়া অফিসের খবর, এ দিন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছে। “সেই মেঘ থেকেই কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। বয়েছে দমকা হাওয়া,” মন্তব্য আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের।

আবহবিদদের একাংশ জানিয়েছেন, ঘূর্ণাবর্তটি শুক্রবার বাংলাদেশ ও সন্নিহিত এলাকায় ছিল। তার ফলে হাওয়ার অভিমুখ সে দিকে ছিল। এ দিন তা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে রয়েছে। হাওয়ার অভিমুখও বদলেছে। ফলে পশ্চিমাঞ্চলের মেঘটি কলকাতার দিকে বয়ে এসেছে।

হাওয়া অফিসের খবর, মেঘলা আকাশ, ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির জেরেই এ দিন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নেমে গিয়েছে। শনিবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি কম। সারা দিনে রোদের মেজাজও ছিল নরম।

আবহবিজ্ঞানীদের কথায়, গরমের চরিত্র এ বার বেশ খামখেয়ালি। মার্চ-এপ্রিলে কালবৈশাখী হয়নি। এপ্রিল মাসে কলকাতায় বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। আর্দ্রতা কমে গিয়ে বারবার ভুগিয়েছে শুকনো গরম। “এ সবের সঙ্গে টানা পাঁচ দিন তাপপ্রবাহের মতো বিরল ঘটনাও রয়েছে,’’ বলছেন আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী। সেই তাপপ্রবাহ কাটার সাত দিনের মাথায় এক ধাক্কায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নেমে গেল!

শনিবার সন্ধ্যার পরে সেই তাপমাত্রা আরও নামার ইঙ্গিত পেয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। শুধু তা-ই নয়, আজ, রবিবারেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও ঝড়বৃষ্টি হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kalbaishakhi storm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE