Advertisement
E-Paper

তদন্তে বেআইনি মিউটেশন প্রমাণিত, পুর-ক্ষতি ১০ লক্ষ

চেষ্টা করা হয়েছিল চাপা দেওয়ার। বলা হচ্ছিল, পদ্ধতিগত ভুল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। কলকাতা পুরসভার নিজস্ব তদন্ত কমিটিতেই প্রমাণিত হল, কসবায় জলাভূমির চরিত্র বদল করে বেআইনি ভাবে মিউটেশন দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওই জমি থেকে যে কর বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে, তাতে পুরসভার লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে বছরে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। ওই ঘটনায় পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের পদস্থ কর্তা-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৯

চেষ্টা করা হয়েছিল চাপা দেওয়ার। বলা হচ্ছিল, পদ্ধতিগত ভুল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। কলকাতা পুরসভার নিজস্ব তদন্ত কমিটিতেই প্রমাণিত হল, কসবায় জলাভূমির চরিত্র বদল করে বেআইনি ভাবে মিউটেশন দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওই জমি থেকে যে কর বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে, তাতে পুরসভার লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে বছরে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। ওই ঘটনায় পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের পদস্থ কর্তা-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি ৮০বি কসবা-বোসপুকুর রোডে বেআইনি ভাবে মিউটেশন দেওয়ার ঘটনা নিয়ে সরগরম হয় পুরমহল। ওই ঘটনায় পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের এক শীর্ষ অফিসার-সহ আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তার ভিত্তিতে পুরসভার তিন মেয়র পারিষদকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে পুর-প্রশাসন। শনিবার ওই কমিটির রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে পদ্ধতিতে ওই মিউটেশন দেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি বেআইনি। এবং তাতে পুরসভার প্রচুর আর্থিক লোকসানও হয়েছে। আগামী কাল, সোমবার ওই রিপোর্ট মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জমা পড়বে। এক মেয়র পারিষদের কথায়, “আপাতত বল মেয়রের কোর্টে। তদন্তের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা তিনিই নেবেন।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “আমি শনিবার পুরসভায় যাইনি। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের কথা কিছু জানি না।”

যদিও পুর-প্রশাসনের একাংশের ধারণা, সামনের বছর কলকাতা পুরসভার ভোট। তার আগে পুর-প্রশাসনের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ দেখাতে হলে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। আপাতত কসবা-বোসপুকুর মিউটেশন-কাণ্ড নিয়ে পুরসভা সরগরম। ওই ঘটনায় মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন এক অফিসারও জড়িয়ে গিয়েছেন। তাই মিউটেশন-কাণ্ডে জড়িত সবার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়েও যথেষ্ট ধন্দ রয়েছে কলকাতা পুরসভার অন্দরে।

কী ঘটেছিল?

পুরসভার নথি অনুযায়ী বহুকাল আগে ৮০ নম্বর কসবা-বোসপুকুরের ঠিকানায় পাঁচ বিঘের একটি জলাশয় ছিল। পরে ওই জলাশয়ের চরিত্র বদল করে তিন বিঘে অংশ ৮০বি ঠিকানায় চিহ্নিত হয়। জলাশয় থেকে জমিকে আলাদা করার কাজটি বছরখানেক আগেই হয়েছে। যদিও কলকাতা পুর-এলাকার ক্ষেত্রে জমির চরিত্র বদলের অনুমোদন দেওয়ার অধিকারী একমাত্র পুর-কমিশনার। কিন্তু তাঁর অনুমোদন ছাড়াই সেটা করা হয়েছে। পরে আবার সেই জমি পৃথক করে ৮০বি/১ বোসপুকুর রোড করা হয়।

পুরসভার এক অফিসার জানান, ওই জমিটি কিনেছেন ১৭ জন ব্যক্তি। তাঁদের প্রত্যেকের নামেই পৃথক দলিল বানানো হয়েছে। অথচ পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, একটি জমির দলিল একটি ঠিকানায় হবে। ১৭টি দলিলের জমি এক ঠিকানায় হয় না। তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও তার উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, প্রথমত, জলাশয়ের সঙ্গে যুক্ত জমি পৃথকীকরণ বেআইনি। দ্বিতীয়ত, তা করার পরে ওই জমির মিউটেশন করাও নিয়মবিরুদ্ধ হয়েছে।

কিন্তু এর ফলে আর্থিক লোকসান কী ভাবে হয়েছে?

এ প্রসঙ্গে ওই অফিসার জানান, জমিতে (স্ট্রাকচারাল ল্যান্ড) বাড়ি থাকলে তার কর (ট্যাক্স) খালি জমির থেকে অনেক কম। মাসে প্রতিবর্গ ফুট ১ টাকা ২০ পয়সা হারে। আর খালি জমির কর বাজারমূল্য অনুযায়ী স্থির হয়। অর্থাৎ, কাঠা প্রতি কত দর, সেই হিসেবে তা নির্ধারিত হয়। কসবার ওই জমির প্রসঙ্গ টেনে ওই অফিসার জানান, সেখানে ১৭ জনের নামে রয়েছে মোট ৩৫ কাঠা ৭ ছটাক জমি। বর্গফুটের হিসেবে যা প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ বর্গফুট। এর মধ্যে মাত্র ৩০০ বর্গফুট এলাকায় একটি বাড়ি রয়েছে। মজার বিষয় হল, ওই ৩০০ বর্গফুটে থাকা বাড়িটিকে স্ট্রাকচারাল ল্যান্ড দেখিয়ে বাকি পুরো জমিটার জন্য মাসিক ১ টাকা ২০ পয়সা হারে কর নেওয়া হচ্ছে। বছরে যার পরিমাণ মাত্র কয়েক হাজার টাকা। আর ২০১২ সালের বাজারমূল্য ধরলে কাঠা প্রতি সেই হিসেব দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকায়। অর্থাৎ, বছরে বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান করেই ওই জমি মিউটেশন করা হয়েছে।

10 lakh illigal mutation kosba anup chattopadhyay anup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy