প্রবীর পাল ওরফে কেটি।
শুরু করেছিলেন দাপুটে সিপিএম নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ক্লাব দখল দিয়ে। এখন দমদম-নাগেরবাজারের প্রায় সব ক্লাবেরই মাথা তিনি। ফুলের মেলা বা কালীপুজো‘দাদা’র নাম-ছবি ছাড়া কোনও ব্যানারই ছাপান না ক্লাবকর্তারা। ‘দাদা’র সুবাদে বড় অঙ্কের চাঁদা-স্পনসর জুটে যায়।
এই ‘দাদা’র পিতৃদত্ত নাম প্রবীর পাল। দক্ষিণ দমদম পুরসভার তৃণমূলের এই চেয়ারম্যান পারিষদ অবশ্য এলাকায় কেটি নামে পরিচিত। বছর আটেক আগে পাড়ার পরিচিত মুখ থেকে রাজনীতিতে উত্থান তাঁর। এখন দমদমের অনেকের কাছে তিনিই কার্যত ‘পুরসভা’। তাঁকে এড়িয়ে চলতে পারেন না দলের বড়-মেজো-সেজো নেতারা। লোকসভা ভোটেও দমদমে কেটি-ই ছিলেন সৌগত রায়ের প্রচারের অন্যতম মুখ।
অনেকে বলেন, রাজনীতির ভরকেন্দ্রে কেটি-র প্রতিপত্তির পিছনে এলাকার প্রায় সব ক্লাব-সদস্যের আনুগত্য অন্যতম কারণ। তাঁদের অনেকে এই নেতার ছত্রচ্ছায়ায় সিন্ডিকেট ব্যবসা চালান। বুধবার মধুগড়ে দু’টি সিন্ডিকেট গোষ্ঠীর লড়াইয়ে এক যুবক গুরুতর আহত হন। অভিযোগ, দু’টি গোষ্ঠীই কেটির অনুগত।
এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ বলছেন, সব সিন্ডিকেট গোষ্ঠী কেটির ছত্রচ্ছায়ায় থাকলেও নিজেদের মধ্যে গোলমাল লেগে থাকে। স্থানীয়দের দাবি, আগেও মধুগড়ে মারামারির হয়েছে। সিন্ডিকেটের রমরমার জন্য প্রোমোটারেরাও কেটির সঙ্গে কথা না-বলে কাজে এগোতে ভরসা পান না।
লোকে এ-ও বলে, প্রোমোটারদের নির্মাণে গরমিলেও পুরসভার অনেকে মদত দেন। মাস কয়েক আগে অবশ্য দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বহুতলের নির্মাণস্থলে কুয়ো খুঁড়তে গিয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। প্রশ্ন উঠেছিল, পাইলিং করতে কুয়ো খোঁড়ার নিয়ম নেই। তবে হচ্ছিল কী করে? কার মদতে? এ নিয়ে পুরসভার স্পষ্ট উত্তর আজও মেলেনি।
বছর আটেক আগেও পৈতৃক পাড়া দমদমের শীল কলোনির বাইরে কেটিকে কেউ তেমন চিনতেন না। কংগ্রেস-কর্মী বলে পরিচিত কেটির পেশা ছিল কলকাতা পুরসভার গাড়ি পার্কিংয়ের সাব-এজেন্সি। তখনই ঘনিষ্ঠতা শিয়ালদহের এক সময়ের দাপুটে ছাত্রনেতা ও বর্তমানে তৃণমূলের এক নেতার সূত্রে। তখন দমদমের ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্র পরিষদ ঢোকাতে সেই নেতাকে কেটি-ই সাহায্য করেছিলেন বলে শোনা যায়।
দমদমের তৃণমূল কর্মীদের একাংশ বলছেন, ২০০৭-এর পর থেকেই কেটি তৃণমূলে ভিড়তে শুরু করেন। ঘনিষ্ঠতা হয় লেকটাউনের এক তৃণমূল নেতার (যিনি একদা এক সিপিএমের মন্ত্রীর ঘরের ছেলে ছিলেন) সঙ্গে। দক্ষিণ দমদমে সিপিএমের এক দাপুটে নেতার সঙ্গে টক্করে কেটিকে কাজে লাগান ওই নেতা। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটেও কেটি জান লড়িয়ে খাটেন। তার সুবাদে ওই বছরেই দক্ষিণ দমদমের পুরভোটে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের টিকিট পান কেটি। জিতে সরাসরি চেয়ারম্যান পারিষদ হন।
স্থানীয়েরা জানান, চেয়ারম্যান পারিষদ হয়ে শীল কলোনির বাইরেও প্রভাব বাড়াতে শুরু করেন কেটি। প্রথমে ঘুঘুডাঙা ফাঁড়ির কাছে প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম নেতার ক্লাবের দখল নেন। এখন সেখানে কালীপুজো ‘কেটির পুজো’ বলেই পরিচিত। একে একে তাঁর দখলে আসে ঘুঘুডাঙা, মধুগড়, পূর্ব সিঁথি, জ’পুর এলাকা। ক্লাব-সাম্রাজ্য বিস্তারে অনেক সময়ে কেটির প্রতিপত্তির কাছে নুয়ে পড়েছেন তাঁর নিজের দলের নেতারাও।
বেশ কয়েক বছর আগে দমদমে রাজীব ভবন নামে একটি কংগ্রেসের অফিস তৈরি হয়। এলাকার এক দাপুটে খাটাল ব্যবসায়ী তা চালাতেন। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। রাজীব ভবনও তৃণমূলের অফিস হয়। অভিযোগ, রাজীব ভবনের দখলও এখন কেটির হাতে। সেই ব্যবসায়ী-নেতা এখন নিজের এলাকাতেই কোণঠাসা বলে বাসিন্দারা জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy