বাড়িতে নীল-সাদা রং করলে শহরে কর-ছাড়ের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছিল। এ বার তার সঙ্গে যোগ হল স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন এবং পাল্টা প্রশ্ন।
কলকাতা পুরসভার কর মকুবের এই নতুন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার একযোগে সরব হয়েছে বাম-বিজেপি। বসত বাড়ির রং নীল-সাদা করে নির্দিষ্ট এক শ্রেণির মানুষকে আর্থিক লাভের মুখ দেখানোই পুরসভার মূল উদ্দেশ্য বলে তারা কটাক্ষ করেছে। সেই জন্যই এমন ‘অনৈতিক’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। প্রশ্নের মুখে পড়ে বাম আমলে জমি লিজের একটি সিদ্ধান্তের উদাহরণ টেনে এনে ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ বলে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
বিজেপি পুরসভার ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থও হতে পারে বলে এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর বক্তব্য, “এই হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়া উচিত! আমাদের দলের আইনজীবী সেলের সঙ্গে আলোচনা করছি।”
মামলা হলেও অবশ্য ক্ষতির কিছু দেখছেন না তৃণমূলের কেউ কেউ। কলকাতাকে নীল-সাদায় রাঙানোর উদ্যোগ যদি আদালতে আটকেও যায়, মানুষের কাছে এই বার্তাই যাবে যে, তৃণমূল পরিচালিত পুূরসভা এটা করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাম-বিজেপির বাগড়ায় তা হল না। এর আগেও দেখা গিয়েছে, সিঙ্গুর-সহ কয়েকটি বিষয়ে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ আদালতে আটকে গেলেও রাজনৈতিক বার্তাটি ঠিকই পৌঁছে দিতে পেরেছে তৃণমূল।
তবে শুধুই রং চাপিয়ে দেওয়া নয়, কিছু আর্থিক প্রশ্নও তুলছেন রাহুলবাবুরা। পুরসভার আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে এই ধরনের সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল, তা নিয়ে রাহুলবাবুর তির্যক মন্তব্য, “তৃণমূল নেত্রীকে খুশি করতেই নীল রং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে! আসলে তৃণমূলের কিছু অসাধু লোককে টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
একই অভিযোগ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর। নির্দিষ্ট কোনও রঙে বাড়ি রাঙালে কর-ছাড়ের ব্যবস্থা করে কিছু লোককে রং সরবরাহের বরাতের মাধ্যমে পকেট ভারী করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে বিমানবাবুর অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য, “এ ভাবে নীল-সাদা রং করা কি নীতিগতভাবে ঠিক? নির্দিষ্ট রং ছাড়া বাড়ির অন্য রং থাকলে কর দিতে হবে, ভারতের কোথাও এমন হয়েছে বলে জানি না।” তবে কিছুু শহরে বাড়ির গড়ন বা স্থাপত্য নিয়ে প্রথাগত কিছু নিয়ম থাকে। এখানে সেই যুক্তিতে সিদ্ধান্ত যে হয়নি, সে কথাও বলেছেন বিমানবাবু। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও প্রশ্ন তুলেছেন, “নিজের বাড়ির রং নিজে বাছার অধিকার কি মানুষের নেই!”
বিমানবাবুদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ দিন মেয়র শোভনবাবু বলেন, বাম আমলে বাইপাসের ধারে ৩০ একর জমি মাত্র এক টাকায় ৯৯ বছরের জন্য এক সংস্থাকে লিজ দেয় বাম পুরবোর্ড। পরে সেই জমির থেকে মাত্র ৫ একর জমি পুরবোর্ড চেয়ে নেয়। যা বেচে প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা আয় হয় পুরসভার। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “৫ একর জমি বেচে ২৬৫ কোটি টাকা হলে বাকি ২৫ একরের দাম হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত। কার পকেট ভরার জন্য সে দিন পুরসভার জমি মাত্র এক টাকায় লিজ দেওয়া হয়েছিল, বিমানবাবুরা তা জানান!” একই সঙ্গে মিলন মেলা সংলগ্ন জমির ক্ষেত্রেও মাত্র এক টাকায় বিশেষ এক সংস্থাকে বাম বোর্ড কার স্বার্থে লিজ দিয়েছিল, তার জবাবও বামেদের কাছে দাবি করেছেন শোভনবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy