Advertisement
০৭ মে ২০২৪
পুর-প্রকল্পে ধাক্কা

পরিকাঠামো নেই, হল না দুঃস্থ-আবাস

বছর সাতেক আগে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাব থাকায় বেশির ভাগ প্রকল্পই কার্যকর করা সম্ভব হল না। ফলে যে টাকা খরচ করা সম্ভব হয়নি, তা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুরসভার বস্তি দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, “এই প্রকল্পের জন্য যে সমস্ত জায়গা চিহ্নিত করে কেন্দ্রকে প্রকল্প রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করেছিল। পরে প্রকল্প তৈরি করতে গিয়ে দেখা যায়, পর্যাপ্ত পরিকাঠামোই নেই।

কৌশিক ঘোষ
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৬
Share: Save:

বছর সাতেক আগে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাব থাকায় বেশির ভাগ প্রকল্পই কার্যকর করা সম্ভব হল না। ফলে যে টাকা খরচ করা সম্ভব হয়নি, তা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

কলকাতা পুরসভার বস্তি দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, “এই প্রকল্পের জন্য যে সমস্ত জায়গা চিহ্নিত করে কেন্দ্রকে প্রকল্প রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করেছিল। পরে প্রকল্প তৈরি করতে গিয়ে দেখা যায়, পর্যাপ্ত পরিকাঠামোই নেই। ফলে অনেক প্রকল্পই বাতিল হয়ে যায়। সম্প্রতি এই প্রকল্পে খরচ না হওয়া টাকা কেন্দ্রকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।”

পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০০৬-২০০৭ সালে ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পের অন্তর্গত ‘বেসিক সার্ভিসেস ফর আর্বান পুওর’ (বিএসইউপি) প্রকল্পে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষদের জন্য শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আবাসন তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, ২০০৭ সালে এই প্রকল্পের জন্য সমীক্ষা ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার হিসেব কেন্দ্রকে দেওয়া হয়। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দ করেছিল প্রায় ৯২ কোটি টাকা। খরচ হয়েছিল প্রায় ৩০ কোটি। বাকি খরচ হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে আধিকারিক জানান।

নিয়ামানুযায়ী, এই প্রকল্পে আবাসন নির্মাণের মোট খরচের ৫০ শতাংশ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। ৩০ শতাংশ বরাদ্দ করবে রাজ্য সরকার। বাকি ২০ শতাংশ খরচ বরাদ্দ করবে পুরসভা এবং উপভোক্তারা। সিদ্ধান্ত হয়, ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (কেএমডিএ)-র মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ অর্থ কলকাতা পুরসভাকে বরাদ্দ করা হবে।

এই প্রকল্পের জন্য যে সমস্ত জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছিল সেগুলি হল: গার্ডেনরিচ, ব্যানার্জিপাড়া, সেনপল্লি, আনন্দনগর, রাজারঘাট, ক্যানাল সাউথ রোড, কাছারিপাড়া, জলপাড়া, পাগলাডাঙা, ধারাপাড়া এবং চেতলাহাট। পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, গার্ডেনরিচ এবং রাজারঘাট আবাসন প্রকল্পের আংশিক এবং ব্যানার্জিপাড়া ও সেনপল্লির পুরো কাজ শেষ করা হয়েছে। বাকি রয়েছে আনন্দনগর, ক্যানাল সাউথ রোড, কাছারিপাড়া, পাগলাডাঙা, ধারাপাড়া এবং চেতলাহাট।

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়?

স্বপনবাবু জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে মূল সমস্যা তৈরি হয়েছে জায়গা নিয়ে। এই প্রকল্প রূপায়ণে যে পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন, তা নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জায়গা না থাকার ফলে প্রকল্প রূপায়ণের সময়ে বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা থেকে গিয়েছে। এ ছাড়াও যে সময়ে এই প্রকল্প রূপায়ণের কথা ছিল, তা না হওয়ায় খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে।

পুরসভার বস্তি দফতরের এক আধিকারিক জানান, এই প্রকল্পের জন্য জায়গা পাওয়াই মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটির ক্ষেত্রে জায়গা না পাওয়া গেলে কোনও মতেই এই প্রকল্প নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। কয়েকটি প্রকল্পের ব্যাপারে সমস্ত বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, যে সমস্ত জায়গা এই প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল, তার জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দ করা অর্থ রয়েই গিয়েছে।

কিন্তু বামফ্রন্ট আমলে এ প্রকল্প গ্রহণ করার সময়ে কি কোনও সমীক্ষা ছাড়াই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। তখন কি জায়গার অভাব ছিল না?

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বামফ্রন্ট আমলে জায়গা ঠিকমতো চিহ্নিত না করেই এই প্রকল্পগুলি ঠিক করা হয়েছিল। উপরন্তু, তখনকার হিসেব মতো অর্থ বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বর্তমানে এই প্রকল্পের খরচ অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে। সব মিলিয়েই সমস্যা তৈরি রয়েছে। সমাধানসূত্র বার করতে আলোচনা চলছে।”

কলকাতা পুরসভার তত্‌কালীন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “শহরের বিভিন্ন জায়গায় আবাসন নির্মাণের সমীক্ষা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার পরেই এই প্রকল্পের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এই সমীক্ষার ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) পাঠানো হয়েছিল। আমাদের পুরবোর্ডের আমলেই কয়েকটির কাজও শুরু করে দিয়েছিলাম। জমির সমস্যা থাকলেও তার মধ্যেই আমরা পরিকল্পনা করে আবাসন তৈরি করছিলাম। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এই প্রকল্প সরজমিন দেখেও গিয়েছিল। এর পরে ২০১০ সালে নতুন বোর্ড আসে। তারা কোনও কাজই করেনি।” স্বপনবাবু জানিয়েছেন, বর্তমানে রাজীব আবাস যোজনায় ফের নতুন করে পুরসভা জায়গা চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রকল্প পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

no infrustructure koushik ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE