চওড়া রাস্তা। তার একদিকে সার সার গাড়ি দাঁড়ানো। খাতায় কলমে এই রাস্তায় গাড়ি দাঁড়ানোর কোনও অনুমতি কলকাতা পুরসভার নেই। অথচ এখানে গাড়ি রেখে ‘বেআইনি’ ভাবে পার্কিংয়ের জন্য দুই গোষ্ঠীর লড়াই চলছে বহুদিন ধরেই। এই গাড়ি রাখার জায়গার দখলকে কেন্দ্র করেই বেকবাগান রো-য়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্য বাধে বুধবার রাতে।
গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে এলাকায় দাঁড়ানো ১২টির মতো গাড়ি এবং এলাকার কয়েকটি দোকান, বাড়ি ভাঙচুর করে। এমনকি, পুলিশের একটি মোটর সাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। আহত হয়েছেন এক যুবক। অভিযোগ হামালার হাত থেকে রেহাই মেলেনি মহিলা এবং শিশুদেরও। রাতে পুলিশের বিশালবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই এলাকায় বেআইনি পার্কিং রুখতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।
বুধবার রাতে কী হয়েছিল?
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, এই রাস্তা সংলগ্ন ফুটপাথে একটি গ্যারেজ রয়েছে। ওই গ্যারেজের কিছু গাড়ি রাস্তার এক দিকে রেখে মেরামতি করা হয়। অভিযোগ, এই গ্যারেজের এক কর্মীর কাছে এলাকারই এক দল ছেলে রাস্তায় গাড়ি মেরামতি এবং রাতে গাড়ি রাখা নিয়ে বহুদিন ধরে আপত্তি জানাচ্ছিল। বুধবার রাতে সেখানেই একটি ‘ওলা’ গাড়ি থেকে যাত্রী নামানো হচ্ছিল। অভিযোগ, এই ওলাটিকে দাঁড়াতে দেখেই একদল ছেলে আপত্তি জানায়। ওলার মালিকের সঙ্গে বচসার পরেই একদল যুবক লাঠি এবং রড নিয়ে এসে গ্যারেজে ভাঙচুর চালায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এই রাস্তায় কলকাতা পুরসভার কোনও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। তাই এখানে গাড়ি রাখা মূলত নিয়ন্ত্রণ করে এলাকার এক দল যুবক। তাঁরাই এখানে গাড়ি রাখা নিয়ে ঘন্টা প্রতি গাড়ির মালিকের কাছ থেকে টাকা নেয়। কিন্তু এখানে গ্যারেজের গাড়ি রাখতে হলে গ্যারেজের মালিককে টাকা দেওয়ার আর্জি জানায়। গ্যারেজের মালিককে অনেকদিন ধরেই তাঁরা পার্কিংয়ের জন্য টাকা দিতে বলা সত্ত্বেও তিনি টাকা দেননি। এমনকি জায়গাও ছাড়েননি বলে অভিযোগ। এই ঘটনার জেরেই গোলমাল। স্থানীয় সূত্রে খবর, যাঁরা এলাকায় গাড়ি পার্কিং করেন তাঁরা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ।
গ্যারেজের মালিক নিশার আহমেদ বলেন, ‘‘বুধবার রাতে গ্যারেজের উল্টো দিকে একটি হোটেলের সামনে একটি ট্যাক্সি থেকে যাত্রী নামানো নিয়ে গণ্ডগোল শুরু হয়। তখন পুলিশ আমাদের সরিয়ে দেয়। আমরা ফের আমাদের জায়গায় চলে আসি। এরপরে আচমকাই পাশের ষোলো নম্বর গলির কয়েক জন যুবক মুখে রুমাল বেধে আমাদের মারধর শুরু করে। গাড়ির কাচ ভাঙতে শুরু করে। ঘর-বাড়িও ভাঙচুর করে। মহিলা শিশুদেরও রেহাই দেয় না তারা। বেশ কিছু দিন ধরে এলাকারই কিছু যুবক গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য আমার কাছে টাকা চাইতেন। তবে আমি কোনও নাম বলব না।’’ এ দিন অন্য গোষ্ঠীর কাউকে পাওয়া যায়নি।
এই এলাকা কলকাতা পুরসভার ৬৪ এবং ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুরসভার ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ বলেন,‘‘বেআইনি পার্কিং নিয়েই এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানোও হয়েছে। এলাকায় অনেকেই তৃণমূল। নির্দিষ্টভাবে কে এই কাজ করেছে তা বলা সম্ভব নয়।’’ পুরসভার ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুকদেব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ আমি এই বিষয়ে কিছু জানিনা।’’
পুরসভার পার্কিং দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুরসভা যেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে সেখানে পুরসভা দরপত্রের মাধ্যমে বহিরাগত সংস্থাকে পার্কিংয়ের বরাত দেওয়া হয়। তাঁরা পার্কিংয়ের জন্য টাকা নেয়। শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুরসভা অনুমোদিত এই ধরনের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু যেখানে ঘটনা ঘটছে সেখানে পুরসভা অনুমোদিত কোনও পার্কিং ব্যবস্থা নেই। বেআইনি পার্কিং কোনও জায়গায় চলার খবর পেলে পুরসভা স্থানীয় পুলিশকে জানায়। পুলিশ এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়।
কলকাতা পুরসভার পার্কিং দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে পুরসভার কোনও যোগ নেই। বেআইনি পার্কিং কোথাও চললে তা দেখার দায়িত্ব পুলিশের।’’
পুলিশ এলাকায় কীভাবে বেআইনি পার্কিংয়ের রমরমা প্রশ্রয় দেয়? তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy