Advertisement
১৭ মে ২০২৪

যাদবপুরে ‘শ্লীলতাহানি’, ফের প্রশ্ন পুলিশের ভূমিকা নিয়েই

খাস কলকাতার জনবহুল রাস্তায় রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ এক শিক্ষিকাকে ধরে টানাটানি করছে এক নেশাগ্রস্ত। স্ত্রীকে বাঁচাতে ছুটে এসেছেন বৃদ্ধ স্বামী। দুষ্কৃতীকে ধাক্কা দিয়ে তিনি সরিয়ে দিতেই ছুটে এল আরও জনা দশেক মত্ত যুবক। বৃ্দ্ধকে ঘিরে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করল তারা। তা দেখেও এগিয়ে এলেন না কেউ। কিছুক্ষণ পরে ওই দম্পতির এক পরিচিত এসে তাঁদের উদ্ধার করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

খাস কলকাতার জনবহুল রাস্তায় রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ এক শিক্ষিকাকে ধরে টানাটানি করছে এক নেশাগ্রস্ত। স্ত্রীকে বাঁচাতে ছুটে এসেছেন বৃদ্ধ স্বামী। দুষ্কৃতীকে ধাক্কা দিয়ে তিনি সরিয়ে দিতেই ছুটে এল আরও জনা দশেক মত্ত যুবক। বৃ্দ্ধকে ঘিরে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করল তারা। তা দেখেও এগিয়ে এলেন না কেউ। কিছুক্ষণ পরে ওই দম্পতির এক পরিচিত এসে তাঁদের উদ্ধার করেন।

ঘটনাস্থল যাদবপুরের পোদ্দারনগর। গত মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনার পরে যাদবপুর থানায় অভিযোগ জানান ওই দম্পতি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় এক অভিযুক্ত থানায় এসে ধরা দিয়েছিল। পরে থানা থেকেই তাকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর কেউ ধরা পড়েনি। গোটা ঘটনার তদন্ত নিয়ে তাই পুলিশের মধ্যে দায়সারা মনোভাব ফুটে উঠেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই দম্পতি। বস্তুত, একই প্রশ্ন উঠেছে খোদ পুলিশের অন্দরেও।

২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটে গাড়ির ভিতরে ধর্ষণ করা হয় এক মহিলাকে। সেই ঘটনায় পার্ক স্ট্রিট থানার বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং অভিযোগকারিণীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। কড়েয়ার আমিনুল কাণ্ডেও পুলিশের বিরুদ্ধে দায়সারা মনোভাবের অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, বারবার লালবাজারের শীর্ষ স্তর থেকে মহিলাদের উপরে অপরাধ নিয়ে সক্রিয় হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু তা যে সব স্তরে পৌঁছয়নি, মঙ্গলবারের যাদবপুরের ঘটনা তা-ই ফের প্রমাণ করে দিল বলে মত লালবাজারের একাংশের।

কী হয়েছিল যাদবপুরে? ওই দম্পতির বাড়ি বাঘা যতীনে। প্রাক্তন স্কুলশিক্ষিকা ওই মহিলা এখন বাড়িতে ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। মহিলার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত। পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার তাঁরা যাদবপুরের পোদ্দারনগরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ আত্মীয়ের বাড়ির কাছেই গাড়ি থেকে নামেন মহিলা। তাঁর স্বামী গাড়ি ‘পার্ক’ করছিলেন। সে সময় রাস্তার ধারে একটি দাঁড়ানো অটোয় বসে কয়েক জন মদ্যপান করছিল। অভিযোগ, তাদেরই এক জন এসে ওই মহিলার হাত ধরে টানে ও কটূক্তি করে।

রবিবার নিজেদের বাড়িতে বসে ওই বৃদ্ধ বলেন, “আমি এগোতেই আরও জনা দশেক যুবক ছুটে আসে। তারা আমাকে এলোপাথাড়ি কিল-চড়-ঘুষি মারতে থাকে। আমি চিৎকার শুরু করলেও রাস্তার কেউই বাঁচাতে আসেনি।” তাঁর অভিযোগ, এর পর যুবকেরা তাঁকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় ও লাথি মারতে থাকে। তিনি বলেন “আমার স্ত্রী তখন প্রাণপণে চিৎকার করে সাহায্য চাইছেন। রাস্তার লোক, আশপাশের বাড়ির লোক বারান্দা থেকে দেখলেও কেউই এগিয়ে আসেননি।” এর মধ্যে খবর যায় তাঁদের আত্মীয়ের বাড়িতে। তাঁরা ছুটে এসে দম্পতিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।

পুলিশ সূত্রের খবর, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ এই ঘটনার কথা ওই দম্পতি থানায় এসে জানান। তার ভিত্তিতে ৩৫৪এ (ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনও মহিলাকে স্পর্শ করা), ৩২৩ (মারধর) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে এক অভিযুক্ত থানায় এসে ধরা দেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু তাকে থানা থেকেই জামিন দেওয়া হয়। পুলিশের বক্তব্য, মহিলার স্বামীর অভিযোগ অনুযায়ী, জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাই থানা থেকে জামিন দিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের একাংশ বলছে, মাঝরাস্তায় মহিলার হাত ধরে টানাটানি করার অর্থ শারীরিক নিগ্রহ করা। ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে এ ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় মামলা করতে পারত পুলিশ। সে ক্ষেত্রে মামলাটি জামিন অযোগ্য হত। “এখানেই পুলিশের বিরুদ্ধে দায়সারা মনোভাবের অভিযোগ তোলা যায়।”মন্তব্য কলকাতা পুলিশেরই এক কর্তার।

মহিলার স্বামীর অভিযোগ, বুধবারের পর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও করেনি থানা। এ ব্যাপারে অবশ্য সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুলিশকর্তারা। প্রাথমিক ভাবে গাফিলতি থানার বলেই মনে করছেন শীর্ষ কর্তারা। অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের স্পর্শকাতর মামলায় সংশ্লিষ্ট ডিভিশন কিংবা লালবাজারের উচ্চকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থানা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি বলে মনে করছে পুলিশের একাংশ।

এ দিনের ঘটনা জেনে কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তার মন্তব্য, “এমন গুরুতর ঘটনার কথা আমার মনে পড়ছে না। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে থানার সঙ্গে কথা বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

molestation poddarnagar jadavpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE