ইঙ্গিত ছিল বুধবারই। বৃহস্পতিবার টানাপড়েন আরও তীব্র হল। যার জেরে আগামী সোমবার ফের শহরে অঘোষিত ট্যাক্সি ধর্মঘট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
লাগাতার ট্যাক্সিচালকদের আন্দোলনে মঙ্গলবার পিছু হটেছিল সরকার। আদালতে ধৃত ২১ জন ট্যাক্সিচালকের জামিনের বিরোধিতা করেনি সরকার। কিন্তু বুধবার একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে সরকার ফের জানিয়ে দেয়, ২১ জন ট্যাক্সিচালকের জামিন খারিজের দাবি জানিয়ে উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হবে তারা। একই সঙ্গে জানানো হয়, যাত্রী প্রত্যাখ্যান করলে তিন হাজার টাকা জরিমানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখানো হবে না।
সরকারের অনড় মনোভাবে বুধবার ট্যাক্সিচালকদের সঙ্গে বৈঠকও ভেস্তে যায়। তার পরেই শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, দিন তিনেকের মধ্যে সরকার কোনও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না জানালে ফের আন্দোলনে নামবে তারা।
তিন দিন নয়, রাত পোহাতেই এক দিকে সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, ট্যাক্সিচালকদের আন্দোলনের সামনে নতিস্বীকার করার প্রশ্নই ওঠে না। বৃহস্পতিবার নবান্নে পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতা পুলিশের কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ সরকারের পক্ষ থেকে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারের অবস্থান জানিয়ে দেন। এর পাশাপাশি পুলিশি জুলুমের অভিযোগ উড়িয়ে তাঁরা দাবি করেন, প্রশাসন ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে আইন মেনেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। অন্য দিকে, সরকারের তরফে ২১ জন ট্যাক্সিচালকের জামিন খারিজের আবেদন জানানো হয়েছে কলকাতা নগর ও দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারকের কাছে।
সরকারের কড়া অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা তোপ দেগেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। ট্যাক্সিচালকেরাও পাল্টা জানিয়েছেন, পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে তাঁদের আন্দোলনও বজায় থাকবে। আগামী সোমবার দুপুরে ধর্মতলায় ফের ট্যাক্সিচালকদের সমাবেশ হবে। সেখান থেকেই তাঁরা পরবর্তী আন্দোলন-কর্মসূচি ঠিক করবেন।
এ দিন সন্ধ্যায় সিটু নেতা অনাদি সাহু বলেন, “বুধবারের বৈঠকে যা কথা হয়েছিল, পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বাইরে বেরিয়ে এসে একেবারেই উল্টো কথা বললেন। হুমকিও দিলেন যে, অন্যায় ভাবে গ্রেফতার হওয়া ট্যাক্সিচালকদের জামিনের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে যাবে সরকার। পুলিশি জুলুম এবং তিন হাজার টাকার পুলিশি-জরিমানাও চালিয়ে যাওয়া হবে।” অনাদিবাবুর দাবি, “মন্ত্রী সমস্যার সমাধানই করলেন না। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের পরবর্তী আন্দোলন ও কর্মসূচি কী হবে, তা ঠিক করতে সোমবার দুপুর দু’টোয় ধর্মতলায় ট্যাক্সিচালকদের সমাবেশ ডাকা হয়েছে। সেখানেই পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।”
সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ দিন দাবি করা হয়েছে, যাত্রী প্রত্যাখ্যান করলে পুলিশ নয়, জরিমানা করে আদালত। তাই পুলিশের বিরুদ্ধে যাত্রী প্রত্যাখ্যান করলেই তিন হাজার টাকা করে জরিমানা নেওয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয় বলেই দাবি করেন কমিশনার। আলাপনবাবু এবং সুরজিৎবাবু জানিয়ে দেন, পুলিশ একমাত্র সিগন্যাল না-মানা, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর মতো অপরাধের ক্ষেত্রেই সঙ্গে সঙ্গে চালককে জরিমানা করে। কিন্তু যাত্রী প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয় আদালত। এখানে পুলিশের কোনও ভূমিকাই নেই। আলাপনবাবু বলেন, “কোনও অবস্থাতে যাত্রী প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি নিয়ে সরকার শিথিলতা দেখাবে না। যাত্রী প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে আইন মেনেই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হচ্ছে। সরকার সাধারণ মানুষকে ভাল পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর।”
প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা জানান, ট্যাক্সিচালকদের দাবির কাছে সরকার নতিস্বীকার করবে না। প্রয়োজনে ভাল পরিষেবা দিতে গিয়ে যদি প্রশাসনকে আরও কড়া অবস্থান নিতে হয়, তা-ও নেওয়া হবে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “ট্যাক্সিচালকদের আন্দোলন রুখতেও এ বার সরকার কড়া অবস্থান নেবে। ট্যাক্সিচালকেরা পথ অবরোধ বা গুন্ডামি করলে তা কড়া হাতেই দমন করা হবে।” সরকারের এই হুমকিতে অবশ্য পিছপা হতে নারাজ বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি। ট্যাক্সিচালকদের এক নেতার বক্তব্য, “সরকার আমাদের রুটি-রুজিতে আঘাত করেছে। আমাদের আন্দোলন চলবে।”
গত কয়েক দিন ধরে ট্যাক্সিচালক ও সরকারের টানাপড়েনের জেরে অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে ট্যাক্সিমালিক সংগঠনগুলি। বুধবার সরকারের সঙ্গে বৈঠকের শেষে ট্যাক্সিমালিক সংগঠন ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতা বিমল গুহ জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে ট্যাক্সির মালিক-শ্রমিক একসঙ্গে লড়াই চালাবে। এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বারই প্রথম ট্যাক্সিমালিকেরা পুজোয় চালকদের বোনাস দেবেন। বিমলবাবু বলেন, “সারা বছরের মোট লাভের ৮.৩৩ শতাংশ বোনাস দেওয়া হবে।”
আবার আশঙ্কা
ট্যাক্সিচালক এবং সরকারের মধ্যেকার টানাপড়েন আরও তীব্র হল। এক দিকে, ২১ জন ট্যাক্সিচালকের জামিনের বিরোধিতা করে উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হল সরকার। জানিয়ে দিল, ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানই বজায় থাকবে। অন্য দিকে, শ্রমিক সংগঠনগুলি পাল্টা সোমবার দুপুর দু’টোয় ধর্মতলায় ট্যাক্সিতালকদের সমাবেশের ডাক দিল। সেখান থেকেই সরকার-বিরোধী পরবর্তী আন্দোলন-কর্মসূচি ঠিক হবে বলে জানিয়ে দিলেন ট্যাক্সিচালকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy