Advertisement
০৩ মে ২০২৪

রিপোর্টে দেরি, শাস্তি হচ্ছে না মাদক-চক্রীদের

নিষিদ্ধ মাদক-সহ শেখ রাজেশ ও সুনীল গুছাইত নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা মাদক রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় রাজ্য সরকারের ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট মেলেনি। ফলে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান ওই দু’জন। পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু এই মামলাতেই নয়, লালবাজারের মাদক দমন শাখার বহু মামলাতেই ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্ট পেতে দেরি হয়। যার ফলে তদন্ত বাধাপ্রাপ্ত হয়। সময় মতো তদন্তকারীরা আদালতে রিপোর্ট দাখিল করতে পারেন না।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৪ ০০:০৮
Share: Save:

নিষিদ্ধ মাদক-সহ শেখ রাজেশ ও সুনীল গুছাইত নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা মাদক রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় রাজ্য সরকারের ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট মেলেনি। ফলে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান ওই দু’জন।

পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু এই মামলাতেই নয়, লালবাজারের মাদক দমন শাখার বহু মামলাতেই ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্ট পেতে দেরি হয়। যার ফলে তদন্ত বাধাপ্রাপ্ত হয়। সময় মতো তদন্তকারীরা আদালতে রিপোর্ট দাখিল করতে পারেন না। রাজেশ-সুনীলের মতো একই ধরনের মাদক-সহ আর এক অভিযুক্তও সময় মতো রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট না মেলার কারণে জামিন পেয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। রিপোর্ট দিতে যে দেরি হচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবরেটরির অফিসারেরাও। তাঁদের দাবি, পর্যাপ্ত কর্মী না থাকাতেই সময় মতো রিপোর্ট পাঠানো যাচ্ছে না।

পুলিশ জানিয়েছে, মাদক আইনে গ্রেফতার করা হলে জেল হেফাজতে রেখেই বিচার করার নিয়ম রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী, ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট-সহ তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হয়। সেই মতো গ্রেফতারির পরেই বাজেয়াপ্ত মাদকের নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। সেখানকার বিশেষজ্ঞেরা সেই নমুনা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট পাঠান। লালবাজারের এক গোয়েন্দাকর্তার কথায়, “মাদক মামলায় ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্ট অত্যন্ত জরুরি। ওই রিপোর্ট ছাড়া তদন্ত রিপোর্ট অসম্পূর্ণ থাকে।”

কিন্তু ড্রাগ কন্ট্রোলেরই বা রিপোর্ট দিতে এত দেরি হচ্ছে কেন?

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য এ বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি। তবে ড্রাগ কন্ট্রোল সূত্রের খবর, দফতরে কর্মীর অভাব রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় কাজের চাপ কমেনি। প্রায় প্রতিদিনই নানা জায়গা থেকে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। কর্মীর অভাব মেটাতে বছরখানেক আগে ১৪ জনকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছিল। দফতরের এক কর্তা বলেন, “তার পরেও ৫০ শতাংশের বেশি কর্মী নেই।” এবং রিপোর্ট দিতে দেরি হওয়ার জন্য কর্মীর অভাবকেই দায়ী করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কবে এই অভাব মিটবে, সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য তাঁরা দেননি।

লালবাজারের অভিযোগ, ড্রাগ কন্ট্রোলের বেহাল দশার জন্য ভুগতে হচ্ছে পুলিশকে। কারণ, এর জেরে বহু ক্ষেত্রেই শহরের মাদক পাচারকারীদের ধরে আনার পরে জেল হেফাজতে রেখে বিচার চালানো যাচ্ছে না। উপরন্তু অপরাধীরা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এলাকায় পুলিশের সোর্সদের উপরে হামলা চালাচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, মাস কয়েক আগে দক্ষিণ কলকাতার এক মাদক পাচারকারীকে ধরেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। কিন্তু সময় মতো ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্ট না মেলায় জামিনে ছাড়া পায় সে। তার পরেই বন্দর এলাকায় কয়েক জন মাদক পাচারকারীকে সঙ্গে নিয়ে সে দক্ষিণ কলকাতায় পুলিশের এক সোর্সকে মারধর করে। “জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসা ফেঁদে বসার ঘটনাও কিন্তু বিরল নয়,” মন্তব্য এক পুলিশকর্তার।

সময় মতো মাদক রিপোর্ট না পাওয়ার ঘটনায় পুলিশকে ফাঁপরে ফেলেছে ভোটও। লোকসভা, বিধানসভা ভোটের আগে শহর জুড়ে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু হয়। এই সময়ে মাদক আইনে গ্রেফতার হওয়া দুষ্কৃতীরা যদি রিপোর্টের অভাবে জামিনে ছাড়া পায়, তা হলে ভোটের সময়ে তা পুলিশের মাথাব্যথা বাড়াবে বলেও মনে করছেন লালবাজারের শীর্ষকর্তারা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কয়েকটি মামলায় যাতে তড়িঘড়ি রিপোর্ট পাওয়া যায়, সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা ভাবছেন পুলিশকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE