Advertisement
E-Paper

সাইকেলের জন্য খুলল বহু রাস্তা, সংশয়ে সুরক্ষা-প্রশ্ন

যানবাহনের গতি বাড়াতে মহানগরের রাস্তায় রিকশা চলে না, নিষিদ্ধ ঠেলাগাড়িও। কিন্তু এ বার সেই রাস্তার অনেকগুলিই সাইকেলের জন্য খুলে দিল পুলিশ! লালবাজারের বক্তব্য, সাইকেল পরিবেশবান্ধব যান। রাজপথে চলার অনুমতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবিও ছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৫:৩৭

যানবাহনের গতি বাড়াতে মহানগরের রাস্তায় রিকশা চলে না, নিষিদ্ধ ঠেলাগাড়িও। কিন্তু এ বার সেই রাস্তার অনেকগুলিই সাইকেলের জন্য খুলে দিল পুলিশ! লালবাজারের বক্তব্য, সাইকেল পরিবেশবান্ধব যান। রাজপথে চলার অনুমতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবিও ছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু পুলিশেরই একাংশের বক্তব্য, রাজপথে সাইকেল চললে গাড়ির গতির পথে বাধা আসবে। বাড়তে পারে দুর্ঘটনাও। তা হলে কেন হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের পক্ষে জোরালো যুক্তি দিতে পারেননি লালবাজারের কর্তারাও।

বস্তুত, বড় শহরের রাজপথে সাইকেল চলা নতুন কিছু নয়। বিদেশের অনেক ভিভিআইপি-ও সাইকেলে চেপে যাতায়াত করেন। কিন্তু সেখানে সাইকেলের জন্য রাজপথে আলাদা লেন রয়েছে। সাইকেলচালকেরাও মোটরবাইক চালকদের মতো হেলমেট পরেন। কিন্তু কলকাতায় তেমন কোনও ব্যবস্থা থাকবে না। কারণ, এখানে রাস্তা সঙ্কীর্ণ। আলাদা লেন করার জায়গাই নেই। ফলে যে শহরে রোজই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে সাইকেল ঢুকে পড়লে গাড়ির গতি কমবে। তা ছাড়া, সাইকেলচালকদের হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করতে এ দেশে এখনও কোনও আইন নেই।

সাইকেল যে শহরের গাড়ি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, লালবাজারের কর্তারা অনেক দিন আগেই তা বুঝেছিলেন। তাই কলকাতার ১৭৪টি রাস্তায় সাইকেল, সাইকেল-ভ্যান, ঠেলাগাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ একটি নির্দেশিকা জারি করেন। তাতে বলা হয়েছে, ১৭৪টি রাস্তায় সাইকেল-ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি চলাচল বন্ধ থাকছে। কিন্ত সাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে ৬২টি রাস্তায়। শুক্রবার লালবাজারে এক সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় সাইকেল চলাচলের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। তা ছাড়াও, সাইকেল পরিবেশবান্ধব যান। সেই কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হল।” যদিও এত দিন কলকাতার বিভিন্ন রাজপথে সাইকেল চলতে অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু সেগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চলত আইন ভেঙে।

প্রশ্ন উঠেছে, রাজপথে মোটরবাইক চালাতে হলে নিরাপত্তার কারণে হেলমেট পরতে হয়। কিন্তু সাইকেলচালকদের তেমন কোনও বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাণহানির আশঙ্কাও বাড়বে। অনুমতি দেওয়ার আগে এটা কেন ভেবে দেখল না পুলিশ?

এই প্রশ্নের জবাবে আইনের যুক্তি দেখিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। ডিসি (ট্রাফিক) বলছেন, “আমাদের দেশে হেলমেট পরে সাইকেল চালাতে হবে, এমন কোনও আইন নেই।” সে ক্ষেত্রে ব্যস্ত রাস্তায় সাইকেল চলার অনুমতি দেওয়ার আগে আইনে তেমন কোনও সংস্থান করা হচ্ছে না কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও।

এর পাশাপাশি দুর্ঘটনা বাড়ার প্রশ্নে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি ট্রাফিককর্তারা। কেন হঠাৎ করে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি খোদ লালবাজারের একাংশেরও। ওই একাংশ বলছেন, কলকাতার ব্যস্ত রাস্তায় সাইকেল চলার অনুমতি দিলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়বে।

প্রশ্ন রয়েছে পুলিশের পরিবেশবান্ধব সাইকেলের দাবি নিয়েও। পরিবেশবিদেরা বলছেন, সাইকেল পরিবেশবান্ধব যান, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তার পুরোপুরি পরিবেশবাবন্ধব হওয়ার পিছনে আরও অনেকগুলি বিষয় রয়েছে। বিদেশে সাইকেল চলার পৃথক রাস্তা থাকে। তার ফলে ধীরগতির সাইকেল অন্য যানবাহনের গতিতে প্রভাব ফেলে না। কিন্তু কলকাতার ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটবে বলে মনে করছেন না পরিবেশবিদেরা।

পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, কলকাতায় এমনিতেই রাস্তার পরিমাণ কম। গাড়ির গতিও কম। তার উপরে বড় রাস্তায় সাইকেল চললে তা অন্য গাড়ির গতি কমাবে। মোটরগাড়ি যত আস্তে চলবে, ততই বেশি ধোঁয়া নিঃসরণ হবে। তাতে দূষণও বাড়বে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, “শুধু পরিবেশবান্ধব যান বলেই সাইকেল শহরের পথে চলার অনুমতি পাবে, তা হয় না। তার সঙ্গে যান চলাচলের বাস্তব চিত্রটাও ভাবতে হবে।”

bicycale road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy