সেই ম্যানহোল।—নিজস্ব চিত্র
ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে হাইড্র্যান্ট পরিষ্কার করতে নেমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। তাঁকে বাঁচাতে ওই হাইড্র্যান্টে নেমেছিলেন তাঁর এক সহকর্মী। তিনিও শেষ পর্যন্ত আর উপরে উঠে আসতে পারেননি। শেষে দমকল এসে ওই দুই শ্রমিককে উদ্ধার করে। নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। সোমবার সকালে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া থ্রি-র চকমাচুরিয়ায়। এই ঘটনা আবারও শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দুই শ্রমিকের নাম নাসির আলি (৩৭) ও আমির আলি (৩৬)। তাঁদের বাড়ি মানিকতলা এলাকায়। পুলিশ ও হিডকো সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষার আগে নর্দমা সাফাইয়ের যে নিয়মমাফিক কাজ হয়, নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া থ্রি-তে সেই কাজই চলছে কয়েক দিন ধরে। এ দিন কাজ ছিল চকমাচুরিয়া এলাকায়। সেখানকার একটি বহুতল আবাসনের সামনে সার্ভিস রোডে হাইড্র্যান্ট সাফাইয়ের কাজ চলছিল। দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের (পি এইচ ই) পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারেরা। হিডকো সূত্রের খবর, হাইড্র্যান্টগুলির গভীরতা ২০ থেকে ২৫ ফুটের মতো। এক শ্রমিক জানিয়েছেন, প্রথম ম্যানহোলটির ঢাকনা খুলে নীচে নামেন নাসির। সেটি পরিষ্কার করার পরে উপরে এসে তিনি অন্য শ্রমিকদের জানান, নীচে প্রচুর গ্যাস জমে রয়েছে। ঠিক ভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। এর পরে তিনি পাশের ম্যানহোলটির ঢাকনা খুলে নীচে নামেন। এর কিছুক্ষণ পরেই নাসিরের বিকট চিৎকার শুনতে পান অন্য শ্রমিকেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, নাসিরের চিৎকার শুনে আমির নীচে নামেন তাঁকে বাঁচাতে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পরে আমিরও উপরে না ওঠায় বাকি শ্রমিকদের মনে সন্দেহ দেখা দেয়। তাঁরা চিৎকার শুরু করেন। চলে আসেন আশপাশের লোকজনও। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “হাইড্র্যান্টে অন্য শ্রমিকেরা নামতে সাহস পাচ্ছিলেন না। তাঁরা আশঙ্কা করছিলেন, বিষাক্ত গ্যাসে ওই দুই শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত আমরাই পুলিশ ও দমকলে খবর দিই।” চলে আসে দমকলের একটি ইঞ্জিন। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ আমির ও নাসিরকে উদ্ধার করেন দমকলকর্মীরা। তেঘরিয়ার একটি নার্সিংহোমে নেওয়া হলে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, হাইড্র্যান্ট সাফ করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে বা অন্য কোনও কারণে মৃত্যুর ঘটনা আগেও ঘটেছে। এ দিনের দুর্ঘটনার পরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে সাফাইয়ের কাজে নামার আগে ওই দুই শ্রমিক যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন কি না। ওই হাইড্র্যান্টটি নিউ টাউনে হিডকো-র এলাকায় পড়ে। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তদন্ত করে দেখা হবে। পিএইচই এবং নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে দু’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। হাইড্র্যান্টে নামার আগে শ্রমিকদের ঠিক মতো সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy