Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সদস্য অমিল, শিশু সমিতিতে বিধিভঙ্গ?

গত দু’বছরে কিছু শিশুকে বাড়ি বা হোমে পাঠানোর মতো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এক বা দু’জনের সইয়েই কাজ সারতে বাধ্য হয়েছে শিশু সমিতি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:১৮
Share: Save:

ভোটের আদর্শ আচরণবিধি বলবৎ হয়ে যাওয়ায় কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারবে না রাজ্য সরকার। গত দু’বছরে একাধিক বার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও নতুন আইন অনুযায়ী শিশু কল্যাণ সমিতি গঠনের জন্য প্রার্থী মেলেনি। ফলে দুই সমস্যার জাঁতাকলে পড়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশু সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশ জারি হচ্ছে ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’ লঙ্ঘন করেই।

সম্প্রতি একাধিক মামলার ক্ষেত্রে এই নিয়ে অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। সম্প্রতি বৌবাজার থানা এলাকার এক পরিবার বছর চোদ্দোর এক নাবালিকার জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল। এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে বৌবাজার থানার পুলিশকে নিয়ে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে কলকাতা চাইল্ড লাইন। পরে মেয়েটিকে হাজির করানো হয় কলকাতার শিশু কল্যাণ সমিতির দায়িত্বে থাকা উত্তর ২৪ পরগনার শিশু কল্যাণ সমিতির সামনে। ওই কিশোরীর ঠাঁই হয় হোমে। কয়েক দিন পরে মেয়েটিকে ফের হাজির করানো হলে সমিতি তাকে বাবা-মায়ের কাছে ফেরত পাঠায়। সেই নির্দেশে সই করেন উত্তর ২৪ পরগনা শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন এবং এক সদস্য।

গত দু’বছরে কিছু শিশুকে বাড়ি বা হোমে পাঠানোর মতো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এক বা দু’জনের সইয়েই কাজ সারতে বাধ্য হয়েছে শিশু সমিতি। প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স (পকসো)-এর মামলাতেও নির্যাতিতা শিশুকে কোথায় পাঠানো হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সমিতির দু’জন বা এক জন সদস্য। কিন্তু আইন বলছে, এ-সব ক্ষেত্রে তিন জনের সই বাধ্যতামূলক। নইলে সেই নির্দেশকে কেউ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রশ্ন উঠছে, তা হলে এমন নির্দেশ কেন দিচ্ছে শিশু কল্যাণ সমিতি?

সমিতিগুলি জানাচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে পরপর কয়েকটি জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু আগে থেকে কোনও সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু না-হওয়ায় নতুন সমিতি তৈরি হয়নি। তখন যে-জেলার সমিতির মেয়াদ রয়েছে, তাদের উপরেই চাপানো হয়েছিল একাধিক জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির দায়িত্ব।

একটি জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘বাচ্চাদের স্বার্থে মানবিকতার খাতিরে এই সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। নইলে কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া যেত না। বাচ্চাগুলির সমস্যা হত।’’ সেই জন্যই এক সময় মুর্শিদাবাদ জেলার শিশু কল্যাণ সমিতি ১৩টি জেলার এবং আলিপুরদুয়ার সাতটি জেলার দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়েছিল। তা হলে কি সেই সব সিদ্ধান্ত বেআইনি?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একটি জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘কী করব! আমাদের হাতে কিছু নেই। তবে কেউ হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানালে রাজ্য সরকার বিপদে পড়বে।’’ কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হল কেন? রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানান, নতুন আইন অনুযায়ী সদস্য এবং চেয়ারপার্সন নিয়োগের শর্তাবলি মানতে গিয়ে প্রার্থী পেতে অসুবিধা হয়েছে। তাই সব জেলার শিশু কল্যাণ সমিতি গঠন করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়েছে একাধিক বার। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রার্থী মেলেনি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Welfare Committee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE