Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বালিকার বিয়ে রুখল পাড়ার স্কুলের ‘দিদি’

বছর বারোর মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল আসছে মাঘেই।পাত্র কলকাতায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে, বয়স বছর চব্বিশ। পণ নেবে না বলে কথা দিয়েছে। তাতেই মেয়ের বাপ-মা ধন্য।মেয়েটির কাছেই খবরটা পেয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী আশাপূর্ণা বিশ্বাস।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৭
Share: Save:

বছর বারোর মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল আসছে মাঘেই।

পাত্র কলকাতায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে, বয়স বছর চব্বিশ। পণ নেবে না বলে কথা দিয়েছে। তাতেই মেয়ের বাপ-মা ধন্য।

মেয়েটির কাছেই খবরটা পেয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী আশাপূর্ণা বিশ্বাস। শনিবার কয়েক জন বন্ধু আর স্থানীয় একটি সংগঠনের দিদিদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে সে রুখে দিল বিয়ে। আশাপূর্ণা যে স্কুলে পড়ে, সেটির প্রধান শিক্ষক আশ্বাস দিলেন, মেয়েটির পড়াশোনার ব্যবস্থা তাঁরাই করবেন।

দুর্ঘটনায় জখম হয়ে কয়েক মাস আগেই গুজরাত থেকে মুর্শিদাবাদের বাড়িতে ফিরেছেন সুশান্ত বিশ্বাস। স্ত্রী খুকু ছাড়া আছে দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ে সঙ্গীতাই বড়। হরিহরপাড়ায় চোঁয়া হাইস্কুলের কাছেই তাঁদের বাড়ি। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই মেয়েটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখত ব্লক অফিস থেকে ‘কন্যাশ্রী যোদ্ধা’র কার্ড পাওয়া আশাপূর্ণা। ‘দিদি’ ডেকে মেয়েটি তার সঙ্গে আলাপও জমিয়ে ফেলেছিল।

‘‘দু’দিন আগে শুনি, ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। কয়েক জন বন্ধু আর দিদির সঙ্গে কথা বললাম। তারা বলল, সাহায্য করবে। বিডিও আর পুলিশের নম্বর তো কাছেই ছিল। তাই সাহস করে এগিয়ে গেলাম।’’ খুকু বিশ্বাস অবশ্য প্রথমে প্রায় তেড়ে এসেছিলেন। তাঁকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে শান্ত করা হয়। আশাপূর্ণাদের ভরসায় সঙ্গীতাও বিয়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলে। শেষে তার বাবা-মা মেনে নেন।

সুশান্ত বলেন, ‘‘আমি অকেজো হয়ে গিয়েছি। ওর মা ভাল পাত্র পেয়েছিল বলে মত দিই। বেআইনি জানলে করতাম না।’’ খুকু বলেন, ‘‘আমাদের ভুল ভেঙে গিয়েছি। বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। পাত্রপক্ষকেও তা জানিয়ে দিচ্ছি।’’

হরিহরপাড়ার ভারপ্রাপ্ত বিডিও উদয়কুমার পালিত বলেন, ‘‘আমাদের এক কন্যাশ্রী যোদ্ধা বিয়ে আটকেছে, এটা সত্যিই বড় খবর। নাবালিকার বাবা-মা যাতে সব রকম আর্থিক সাহায্য পান, সেই চেষ্টা করব।’’ আর, হরিহরপাড়া থানার ওসি কার্তিক মাজি বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের আমরা বলেছি, যে কোনও প্রয়োজনে ফোন করতে। যত এমন ঘটবে, তত দ্রুত নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ হবে।’’

আশাপূর্ণার সঙ্গে এ দিন মেয়েটির বাড়ি গিয়েছিলেন এলাকারই হাসিনা খাতুন, জাকিরুন বিবিরা। তাঁরা বলেন, ‘‘আশাপূর্ণা খুব সাহসী মেয়ে। ওর কথাতেই আমরা কয়েক জন গিয়ে ওই বিয়ে রুখেছি।’’ চোঁয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল মজুমদার বলেন, ‘‘আশাপূর্ণারা তিন বোন। ওর বাবা খুব কষ্টে ওদের পড়ান।’’

গুজরাতে থাকতে সঙ্গীতা স্কুলে যেত। সপ্তম শ্রেণিতে পড়তে-পড়তেই তার এখানে চলে আসা। আর স্কুল যাওয়া হয়নি। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটি যাতে ফের পড়াশুনো শুরু করতে পারে, তার জন্য আমরা সব রকম সহযোগিতা করব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyashree Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE