Advertisement
১১ মে ২০২৪

বাজার আগুন লক্ষ্মীপুজোয়, দেখুন ভিডিও

মল্লিকঘাটের ব্যবসায়ীরা এ দিন জানান, এক কেজি দোপাটি ফুল ৮০-১০০ টাকা, অপরাজিতা (নীল ফুল) ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একটি মাঝারি আকারের গোলাপ আড়াই থেকে তিন টাকা। তবে ঝুরো গাঁদা ফুলের দাম ২০০-২৫০ টাকা কেজিতে বিকিয়েছে।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৫
Share: Save:

মাঝে-মধ্যে আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামছে। তাতে নিভছে না বাজারের ‘আগুন’!

দুর্গাপুজোর আগে থেকে শুরু হওয়া সেই আগুন লক্ষ্মী পুজোর বাজারে যেন আরও আগ্রাসী। কাঁচা আনাজ থেকে ফল, ফুল— সাধারণ ক্রেতার হাত পুড়ছে সবেতেই।

রাজ্য প্রশাসনের মতে, দুর্গা পুজোর আগে কয়েক মাসের বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফুল চাষে। তার আঁচ পড়েছে লক্ষ্মী পুজোতেও। তবে তার মধ্যেও কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে পদ্ম। ফুল চাষীদের দাবি, এ বছর পুজো এগিয়ে আসায় হেমন্তের শিশিরে পদ্ম নষ্ট হয়নি। তাই পদ্মের জোগান নিয়ে এ বছর কোনও সমস্যা নেই। মূলত হাওড়া, বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর থেকে কলকাতার পাইকারি ফুল বাজার মল্লিকঘাটে পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে পদ্মের। পুজোর আগের দিন বুধবার ছোট মাপে র পদ্ম বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকায়, বড় মাপের ফুল ১২ টাকায়। তবে সমস্যায় ফেলেছে কুচো ফুল আর তার আকাশছোঁয়া দাম। আর কে না জানে, লক্ষ্মীর আরাধনায় কুচো ফুলের ব্যবহারই বেশি!

মল্লিকঘাটের ব্যবসায়ীরা এ দিন জানান, এক কেজি দোপাটি ফুল ৮০-১০০ টাকা, অপরাজিতা (নীল ফুল) ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একটি মাঝারি আকারের গোলাপ আড়াই থেকে তিন টাকা। তবে ঝুরো গাঁদা ফুলের দাম ২০০-২৫০ টাকা কেজিতে বিকিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, তিন ফুটের হলুদ রঙের একটি গাঁদা ফুলের মালার দাম ১৫-১৭টাকা, কমলা রঙ হলে ১০- ১৩ টাকা।

আরও পড়ুন : জোর নয়, দিলীপের পথ তাই বাধাহীনই

ফুল চাষীদের দাবি, গাঁদা ফুল মূলত চাষ হয় পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরে, অপরাজিতা পূর্ব মেদিনীপুর ও উত্তর ২৪ পরগনায়। সব জায়গাতেই বৃষ্টির ফলে চাষবাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সারা বাংলা ফুল চাষী ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘‘জুলাই-অগস্ট জুড়ে অতি বৃষ্টির ফলে সমস্ত ফুল বাগিচাতে জল জমেছে। তার ফলে গাছের গোড়া নষ্ট হয়ে ফলন কম হওয়ায় জোগান কমে গিয়েছে। তাই বাজারও চড়া।’’

আগুনের আঁচ পড়েছে ফলের বাজারেও। শহর থেকে শহরতলি— সব জায়গাতেই লক্ষ্মী পুজোর ফল কিনতে গিয়ে চোখ কপালে উঠেছে মানুষের। বাড়ি থেকে হিসেব করে টাকা ও ফর্দ নিয়ে বাজারে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন অনেককেই। হাওড়া,
গড়িয়াহাট, মানিকতলা, শিয়ালদহ— সব জায়গাতেই এক অবস্থা। পাকা পেঁপে বিকোচ্ছে ৮০ টাকায়, বড় একটা আখ কিনতে খরচ হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। আপেল ১২০-১৫০ টাকা, এক ডজন কাঁঠালি কলা ৬০ টাকা, ন্যাসপাতি ৭০-১২০ টাকা, একটি ডাব ৩০ টাকা, বেদানা ৮০-১০০ টাকা, একটি তালশাঁস ৫-৭ টাকা, পানিফল ১১০-১২০ টাকা, বাতাবি লেবু ২৫-৩০ টাকাঃ এমনই সব দাম!

এ দিন বাজারে গিয়ে দেখা গেল, পুজোর বাজারে দামের তাপ চড়তে থাকায় ফর্দে কাঁটছাঁট করেছেন বালির গৃহবধূ মণীষা গোস্বামী। এক দোকানির কাছে নারকেলের দাম ৪০ টাকা শুনে তিনি বললেন, ‘‘এ বার বাজার থেকে ‘রেডিমেড’ নাড়ু কিনেই কাজ সারতে হবে দেখছি।’’

লক্ষ্মী পুজোয় খিঁচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা-সহ ভোগের আয়োজন করতে আনাজের বাজারে গিয়ে ভিরমি খেতে হয়েছে অনেককেই। শীতের ফুলকপি, বাঁধাকপিতে বাজার ভরলেও দাম বেশ চড়া। একেবারে ছোট সাইজের ফুলকপি ৩০ টাকা আর বেঙ্গালুরুর ভালো সাইজের ফুলকপি বিকোচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। ভাল মানের বাঁধাকপি ৫০ টাকা কেজি। শশা ৫০, টম্যাটো ৬০-৭০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০, বোম্বে পটল ৩০ টাকা, সাদা পটল ৫০ টাকা প্রতি কিলোতে বিক্রি হচ্ছে। গড়িয়াহাট মার্কেটের ব্যবসায়ী দিলীপ মণ্ডলের কথায়, ‘‘এক দিকে বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট, তার উপরে বিসর্জনের জন্য রাস্তা বন্ধ, চাঁদার জুলুম— সব মিলিয়ে আমদানিতেও সমস্যা হচ্ছে। তাই আনাজের দাম চড়া।’’

তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে কাঁচা লঙ্কা। বাজারে কাঁচা লঙ্কার ঝাঁঝের ধারেকাছে যাওয়াটাই এখন দুষ্কর। কম করে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে লঙ্কা। যা শুনে এক ক্রেতার মন্তব্য, ‘‘লক্ষ্মীর ঝাপি উল্টে দিয়েও বাড়িতে গিন্নির মন ভরাতে পারছি না দাদা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE