সে রাম বা সে অযোধ্যা, কিছু নেই তো বটেই। সেই বাল্মীকিও নেই!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় ইনিংসে রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা হারিয়েছে সিপিএম। জোটের গুণে সেই তকমা এখন কংগ্রেসের দখলে। বিধানসভায় আসন কমে যাওয়াই শুধু নয়, সিপিএম তথা বামেদের এ বার নতুন করে বিরোধিতার পাঠও নিতে হচ্ছে! কারণ, গত পাঁচ বছরে বিধানসভায় বিরোধী বেঞ্চে যাঁরা প্রধান ভূমিকায় ছিলেন, তাঁরা আর এ বার ফেরেননি! আবার মাঝের ব্যবধান কাটিয়ে যাঁরা বিধানসভায় ফিরে এসেছেন, তাঁরা আগে কখনও বিরোধী আসনে বসেননি! পরিস্থিতির চাপে পড়ে বিধানসভার নতুন টিমকে নিয়ে প্রশিক্ষণের ভাবনা ভাবতে হচ্ছে আলিমুদ্দিনকে।
গত বারের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ বার পরাস্ত। সিপিএমের গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়, চৌধুরী মহম্মদ হেদায়েতুল্লা, শাজাহান চৌধুরী, আরএসপি-র সুভাষ নস্কর, ফরওয়ার্ড ব্লকের পরেশ অধিকারী বা ডিএসপি-র প্রবোধ সিংহের মতো যে বিধায়কেরা মমতার প্রথম ইনিংসে বিরোধী বেঞ্চে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতেন, তাঁরা প্রায় সকলেই হেরে গিয়েছেন। সিপিএমের আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা আগেই বহিষ্কৃত হয়েছেন, ভোটের আগে ফ ব ছেড়ে তৃণমূলে চলে গিয়েছেন উদয়ন গুহ। একসঙ্গে এত মুখের অনুপস্থিতি ভাবাচ্ছে বাম শিবিরকে। অন্য দিকে আবার জিতে বিধানসভায় ফিরেছেন সুজন চক্রবর্তী, অশোক ভট্টাচার্য, বিশ্বনাথ চৌধুরীরা। পরিষদীয় রাজনীতিতে প্রবীণ হলেও বিধানসভায় তাঁদের ভূমিকা নতুন।
শিলিগুড়ির অশোকবাবুর কথায়, ‘‘আমি ২০ বছর মন্ত্রী ছিলাম। তখন বিধানসভায় ভূমিকা ছিল এক রকম। এ বার অন্য রকম হবে। তবে বিধানসভার অভিজ্ঞতা থেকে শিখে নেব।’’ একই সুর বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজনবাবুরও। তিনি বলছেন, ‘‘আগে যখন বিধায়ক হয়েছিলাম, বিধামসভায় অল্প সময় কাটিয়েছি। এ বার অনেক বেশি সময় দিতে হবে।’’ শপথ নেওয়ার পরে এ বার ঘুরে ঘুরে বিধানসভার ভূগোলও নতুন করে চিনেছেন যাদবপুরের সিপিএম বিধায়ক। কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল হয়ে যাওয়ায় বিধানসভার মধ্যে তাদের ও বামেদের পরিষদীয় দলের ঘরও এ বার অদলবদল হবে। ফলে, আক্ষরিক অর্থেই নতুন আসনে বসতে হবে সুজন-অশোকবাবুদের!
আরএসপি-র প্রবীণ নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথবাবু বিধানসভায় ফিরে তাঁর অভিজ্ঞতার জেরেই পরিষদীয় দলকে পরামর্শ দেওয়া শুরু করেছেন। রাজ্যপালের কাছে দরবার করতে বিধায়কদের সঙ্গে গিয়েছেন, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছেন। তবু বিধানসভার অধিবেশনে বিধায়কদের নতুন টিমকে তৈরি রাখার জন্য প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করেছেন বাম নেতৃত্ব। বিধায়কদের নিয়ে দফায় দফায় কর্মশালা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুজনবাবুর বক্তব্য, ‘‘অধিবেশনের সময়ে একসঙ্গে বসে আমাদের ঝালিয়ে নিতে হবে। সূর্যদা, প্রবোধদা’রা পরামর্শ দেবেন এ বার।’’
তবে প্রশিক্ষণ বা পরামর্শের জায়গাতেও এ বার নতুন পরিস্থিতি! দীর্ঘ ৩৪ বছর পরে ২০১১ সালে বিরোধী ভূমিকায় যাওয়ায় সময় আলিমুদ্দিন ও বিধানসভার মধ্যে সেতু বাঁধতে একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। যেখানে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম। এখন তিনি প্রয়াত। ব্যক্তিগত স্তরে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বহু পরামর্শ দিয়েই থাকেন। কিন্তু তিনিও এখন প্রায়শই অসুস্থ থাকেন। সঙ্কটের সময়ে তাই সূর্যবাবু, প্রবোধবাবুদের উপদেষ্টার ভূমিকায় এনেই কাজ চালাতে হবে বামেদের। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘যে যতটুকু শিখেছি, এখন ভাগ করে নিতে হবে আমাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy