Advertisement
০৭ মে ২০২৪

রুখতে পথে শ্যাম, বন্‌ধ কিন্তু হলই

বন্‌ধ ঘিরে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল দু’পক্ষই। চ্যালেঞ্জ অবশ্য বেশি ছিল শাসকদলের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের। সেই চ্যালেঞ্জ কি আদৌ জিতলেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামবাবু? প্রশ্নটা কিন্তু তুলে দিল সোমবারের বিষ্ণুপুর শহর। বিধায়ককে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বিষ্ণুপুরে বন্‌ধ ডেকেছিল বাম-কংগ্রেস জোট।

চকবাজারের দোকানপাট সব বন্ধ। বন্‌ধ রুখতে পথে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। পিছনে মোটরবাইকে অনুগামীরা। সোমবার ছবিগুলি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

চকবাজারের দোকানপাট সব বন্ধ। বন্‌ধ রুখতে পথে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। পিছনে মোটরবাইকে অনুগামীরা। সোমবার ছবিগুলি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০২:৪৩
Share: Save:

বন্‌ধ ঘিরে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল দু’পক্ষই। চ্যালেঞ্জ অবশ্য বেশি ছিল শাসকদলের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের।

সেই চ্যালেঞ্জ কি আদৌ জিতলেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামবাবু? প্রশ্নটা কিন্তু তুলে দিল সোমবারের বিষ্ণুপুর শহর।

বিধায়ককে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বিষ্ণুপুরে বন্‌ধ ডেকেছিল বাম-কংগ্রেস জোট। এক দিন আগে শহর জুড়ে মাইকিং করে সেই বন্‌ধের সমর্থনে প্রচারও চালানো হয়। তবে ওই টুকুই। তার পরে আর বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল কিংবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলা, এ সব কিছুই করতে দেখা যায়নি জোটপক্ষকে। অন্য দিকে, এই বন্‌ধকে বিফল করতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিল তৃণমূল। দলের থেকে দোকানে দোকানে জোরদার প্রচার চালানো হয়েছিল। এ দিনও সকাল থেকে তৃণমূল কর্মীরা সক্রিয় ছিলেন শহরের দোকানপাট খুলতে। সামনে থেকে দলের কর্মীদের সেই সক্রিয়তায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়।

দিনের শেষে অবশ্য জোটের ডাকা বন্‌ধ মোটের উপরে সফলই হল মল্লরাজাদের শহরে। যা দেখে জোটের দাবি, বিষ্ণুপুর শহর যে শ্যামবাবুর পাশে নেই, তা বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে আরও একবার স্পষ্ট হল।

শনিবার তালড্যাংরা থানার আমড্যাংরায় বিষ্ণুপুরের কংগ্রেস বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শ্যামবাবুর উপস্থিতিতেই ওই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এ বার ভোটে তাঁকে হারানো তুষারবাবু। ওই হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোমবার আমড্যাংরা থেকে অমল পাল নামে এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃত ব্যক্তি এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবেই পরিচিত। ওই হামলার প্রতিবাদে ও শ্যামবাবুকে গ্রেফতারের দাবিতেই এ দিন বিষ্ণুপুর শহরে বন্‌ধের ডাক দেয় বাম-কংগ্রেস জোট। রবিবার শহরে মাইকিং করে তার প্রচারও চালানো হয় জোটের পক্ষ থেকে। স্থানীয় সূত্রের খবর, পাল্টা বন্‌ধ রুখতে মাইক নিয়ে রাস্তায় না নামলেও ব্যবসায়ীদের ঘরে ঘরে গিয়ে শ্যামবাবুর লোকজন সোমবার দোকান খুলতে নির্দেশ দিয়ে এসেছিলেন।

এ দিন সকাল থেকে শ্যামবাবু নিজেও বন্‌ধ ব্যর্থ করতে রাস্তায় নেমেছিলেন। সঙ্গে ছিল তৃণমূলের বাইক-বাহিনী। শ্যামবাবুও স্কুটি চেপে শহরের নানা পথে অনুগামীদের নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে শহরের স্টেশনরোড ও ময়রাপুকুর এলাকায় জোর করে দোকান খোলানোর চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন শ্যামবাবু।

তবে, ঘটনা হল, অন্য দিনের তুলনায় বিষ্ণুপুর শহরের ছবিটা এ দিন একেবারেই আলাদা ছিল। শহরের প্রাণকেন্দ্র চকবাজার এলাকার একটি দোকানও এ দিন খোলেনি। এমনকী, বসেনি চকবাজারের সেই সব্জি বাজারও, যা কিনা যে রাজনৈতিক দলই বন্‌ধ ডাকুক না কেন, খোলা থাকার রেওয়াজ ধরে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে। এ দিনই ছিল তার ব্যতিক্রম। চকবাজার সংলগ্ন বোলতলা এলাকাতেও বন্‌ধের পূর্ণ প্রভাব দেখা গিয়েছে। শহরের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মাধবগঞ্জ সব্জি বাজারেও এ দিন বিক্রেতারা আসেননি। মিশ্র প্রভাব পড়তে দেখা গিয়েছে বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। বাস চালু থাকায় বাসস্ট্যান্ডে লোকজনের ভিড় কিছুটা থাকলেও তা অন্য দিনের তুলনায় ছিল অনেকটাই কম। স্ট্যান্ডের কিছু কিছু দোকানও বন্ধ ছিল। বন্‌ধের মিশ্র প্রভাব দেখা গিয়েছে গোপালগঞ্জ, রবীন্দ্র স্ট্যাচু মোড় এলাকায়। শহরের রাস্তাঘাটেও লোক চলাচল কম ছিল। বিষ্ণুপুরবাসীর একাংশই বলছেন, “রাজ্যে পালাবদলের পরে শহরে বিরোধীদের ডাকা বন্‌ধের এতটা প্রভাব বহু দিন দেখা যায়নি।’’

প্রশ্ন উঠছে এ থেকেই।

বিষ্ণুপুর পুরসভায় আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন শ্যামবাবু। শহরে তাঁর দাপট নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত সংশয় ছিল না শাসক-বিরোধী, কোনও পক্ষেরই। গতবার পুরভোটে জেতার পরেই শহরের মোড়ে মোড়ে নিজের ছবি দিয়ে পোস্টারও সাঁটিয়েছিলেন শ্যামবাবু। ছবিটা হঠাৎই বদলে গেল বিধানসভা ভোটে। ফল বেরোতে দেখা গেল, বিষ্ণুপুর শহরে ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টিতেই হেরে গিয়েছেন শ্যামবাবু। বিধায়কের গদি ও মন্ত্রিত্বও তাঁকে খোয়াতে হয়েছে শহরের ভোট হাতছাড়া হওয়াতেই। এই নিয়ে দলের অন্দরেও ফিসফিসানি শুরু হয়েছে, তবে কি বিষ্ণুপুর মুখ ফেরাতে শুরু করল তৃণমূল থেকে? এমনকী, শাসকদলের জেলা নেতৃত্বকেও সে ভাবে আর শ্যামবাবুর পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে শ্যামবাবুর গ্রেফতারের দাবিতে বিরোধীদের ডাকা এই বন্‌ধ বানচাল করাটা শ্যামবাবুর কাছে হয়ে কার্যত দাঁড়িয়েছিল সম্মানের লড়াই। কিন্তু, বন্‌ধ ব্যর্থ না হওয়ায় বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। আক্রান্ত বিধায়ক তুষারকান্তিবাবু বলছেন, “অনেক হয়েছে। এ বার ন্যূনতম সম্মানবোধ থাকলে চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিক শ্যামবাবু! বিষ্ণুপুরের মানুষও যে এটা চাইছেন, এ দিন আমাদের ডাকা বন্‌ধের সাফল্য সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।’’

শ্যামবাবু অবশ্য বন্‌ধ বিফল হয়েছে বলেই দাবি করছেন। তাঁর অনুগামীদের একটি অংশও বন্‌ধ সফল হয়েছে জানিয়ে দুষছেন শহরে শ্যামবাবুর বিরোধী হিসাবে পরিচিত তৃণমূল নেতা তথা উপপুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়কে। খোদ শ্যামবাবু বলছেন, “কোথায় বন্‌ধ হল? কোনও বন্‌ধই হয়নি বিষ্ণুপুরে! মানুষ এই বন্‌ধে সাড়া দেয়নি। জোটের কোনও জনভিত্তিই নেই, তা হলে আবার বন্‌ধ কে করবে?।’’ শ্যামবাবুর অনুগামীদের কথায়, “বুদ্ধবাবু চাইলে চকবাজার বন্ধ হত না। তা হলে এই বন্‌ধ পুরোপুরি ব্যর্থ হত।’’ ঘটনাচক্রে বুদ্ধবাবু চকবাজার বাজার কমিটির সভাপতিও বটে। বুদ্ধবাবু অবশ্য বলছেন, “এই সব ভিত্তিহীন অভিযোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupur Bandh Congress CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE