Advertisement
E-Paper

হাত ছেড়ে রেখেই এখন পথে বামেরা

তলে তলে বন্ধুত্ব যেমন থাকার, থাকুক। প্রকাশ্যে দহরম মহরমে একটু রাশ টানা হোক। প্রকাশ কারাটদের হইচইয়ের পরে কংগ্রেস-প্রশ্নে এ বার এমন কৌশলই নিল বামেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ১০:১৯

তলে তলে বন্ধুত্ব যেমন থাকার, থাকুক। প্রকাশ্যে দহরম মহরমে একটু রাশ টানা হোক। প্রকাশ কারাটদের হইচইয়ের পরে কংগ্রেস-প্রশ্নে এ বার এমন কৌশলই নিল বামেরা।

বাংলার নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা দলের পার্টি কংগ্রেস এবং তার পরেও গৃহীত রাজনৈতিক লাইনের সঙ্গে মেলেনি বলে রায় দিয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। বিচ্যুতি সংশোধনের নিদানও তারা দিয়েছে আলিমুদ্দিনকে। যদিও বাংলায় শাসক দলের সন্ত্রাসের মোকাবিলায় ‘মানুষের জোট’ গড়ে এগোনোর রাস্তা কেন্দ্রীয় কমিটি খোলাই রেখেছে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বামফ্রন্টের শরিক এবং ফ্রন্টের বাইরের একগুচ্ছ দলকে সঙ্গে নিয়ে মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়ে পথে নামার সিদ্ধান্ত নিলেন বিমান বসুরা। একই প্রশ্নে মিছিলের ডাক দিয়ে সেখানে সিপিএম নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন অধীর চৌধুরীরা। বিমানবাবুরা কিন্তু মঙ্গলবার পরিষ্কারই বলে রেখেছেন, তাঁদের এই কর্মসূচিতে কংগ্রেসকে ডাকা হচ্ছে না।

বাম সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যে নির্বাচনী কৌশলে যে ভুল সংশোধনের কথা কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, সামনে কোনও বড় নির্বাচন না থাকায় এখন তা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামানোর প্রশ্ন নেই। কিন্তু একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি বাম শিবিরের ভিতরে-বাইরে এক প্রস্ত সংশয়ও তৈরি করেছে। সন্ত্রাস ছাড়া অন্য বিষয়ে প্রতিবাদ করতে হলে কংগ্রেসকে সঙ্গে রাখা উচিত হবে কি না, এখন ভাবনায় পড়েছে আলিমুদ্দিন। যে কারণে নিজেদের স্বতন্ত্র কর্মসূচি হচ্ছে তো বটেই। কংগ্রেসের আমন্ত্রণ আগে যেমন এক কথায় স্বীকার করে নিচ্ছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্রেরা, এখন সেই প্রশ্নেও মেপে পা ফেলতে হচ্ছে!

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদেই শনিবার কলকাতায় কংগ্রেসের মিছিলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি অধীর। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান আবার মঙ্গলবারই বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীকে ওই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ করেছেন। সূর্যবাবু দলের কাজে ২৩ তারিখ রাতে ওড়িশা চলে যাচ্ছেন, কলকাতায় ফিরবেন ২৬শে। সূর্যবাবু না থাকায় সুজন কংগ্রেসের আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন কি না, আলিমুদ্দিনে আজ, বুধবার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। সুজনবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘বিধানসভায় কক্ষ সমন্বয় যেমন চলে, চলবে। সব পদক্ষেপই জোট করে করতে হবে, তার কোনও মানে নেই। মিছিলে যাব কি না, দলে কথা বলেই ঠিক করব।’’ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবুও বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের তাদের কর্মসূচিতে সিপিএম যাবে কি যাবে না, পার্টিই ঠিক করবে। তবে বামফ্রন্ট এবং অন্য দলগুলির যে কর্মসূচির কথা বলছি, সেখানে কংগ্রেসকে ডাকছি না।’’

বামফ্রন্টের সব শরিক দল এবং তার বাইরে জেডিইউ, আরজেডি, এনসিপি, পিডিএস, সন্তোষ রানার সিপিআই (এম-এল), অসীম চট্টোপাধ্যায়ের সিআরএলআই, বর্ণালী মুখোপাধ্যায়ের সাম্যবাদী দলকে নিয়ে এ দিন আলিমুদ্দিনে বৈঠকে বসেছিলেন বিমানবাবু, সূর্যবাবুরা। সেখানেই ঠিক হয়েছে, জিনিসপত্রের দাম, পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, এফডিআই-এর অবারিত দ্বার এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ১১ জুলাই ধর্মতলা থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিল হবে। যেখানে কংগ্রেসকে ডাকা হচ্ছে না। তার আগে আজ, বুধবার এবং পর দিন বৃহস্পতিবার যথাক্রমে কলকাতা ও হাওড়া জেলা বামফ্রন্টের ডাকে দুই শহরে প্রতিবাদ মিছিল আছে। সেখানেও কংগ্রেস আমন্ত্রিত নয়।

আলিমুদ্দিনের বৈঠকে এ দিন অসীমবাবু প্রশ্ন তুলেছিলেন, কংগ্রেসের ব্যাপারে এখন কী করা হবে? সরাসরি কোনও উত্তরে না গিয়ে বাম ও বৃহত্তর মঞ্চের স্বতন্ত্র কর্মসূচির কথাই বলেছেন সূর্যবাবুরা। সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে চেয়েছিলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কী সম্পর্ক? সাম্প্রদায়িকতার প্রতিবাদ করতে গেলেই কংগ্রেস জড়াতে পারে, এই ভাবনা থেকেই এমন প্রশ্ন। বৈঠকে এর কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যায় যাননি বিমানবাবুরা। তবে বৈঠকে উপস্থিত এক বাম নেতার বক্তব্য, ‘‘এই কর্মসূচি তো শুধু বামে থাকল না। জেডিইউ, আরজেডি বা এনসিপি যদি সঙ্গে থাকতে পারে, তার মানে পরে আবার কংগ্রেসের জন্যও রাস্তা খোলাই থাকল।’’ আর বৈঠকের পরে বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘আমরা মনে করি, সব দলেরই কিছু স্বাধীন কর্মতৎপরতা থাকা উচিত।’’

কেন্দ্রীয় কমিটির অবস্থান যে ধোঁয়াশার আস্তরণ তৈরি করেছে, তার সুযোগ নিয়ে এ দিন বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কের অবসরেও জোট নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের তাপস রায়, পরশ দত্তেরা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উপরে বাম ও কংগ্রেস পৃথক ভাবেই দু’টি মুলতবি প্রস্তাব এনেছে। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য কোনওটাই আলোচনার জন্য গ্রহণ করেননি। তার প্রতিবাদে এ দিন অন্তত যৌথ ওয়াক আউট হয়নি। তবে এই নিয়ে সংশয় ওড়াতে বিরোধী দলনেতা মান্নান বলেছেন, ‘‘জোট করেছি মানুষের চাপে। তৃণমূল ও বিজেপি-র বিরোধিতায় এবং জনস্বার্থের প্রশ্নে সব দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবেই লড়তে চাই।’’

congress Left
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy