Advertisement
০৩ মে ২০২৪

পুড়ে খাক সুলতানপুর

ভগবানগোলার মানচিত্র থেকে অতীত হয়ে গিয়েছে আস্ত গ্রামটা। সুলতানপুর এখন পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া একটা জনপদ। পশ্চিমে মগরহাট বিল। বিলের পরেই বিঘের পর বিঘে পাট খেত। দক্ষিণে বিস্তীর্ণ আম-কাঁঠালের বাগান। রবিবার দুপুরে গ্রামের এই সবুজ-শ্রীটাই হারিয়ে গিয়েছে। পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসা দমকা ঝড়ে আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়েছিল লোকমান শেখের বাড়িতে।

শুভাশিস সৈয়দ
ভগবানগোলা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০২:০২
Share: Save:

ভগবানগোলার মানচিত্র থেকে অতীত হয়ে গিয়েছে আস্ত গ্রামটা। সুলতানপুর এখন পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া একটা জনপদ।

পশ্চিমে মগরহাট বিল। বিলের পরেই বিঘের পর বিঘে পাট খেত। দক্ষিণে বিস্তীর্ণ আম-কাঁঠালের বাগান। রবিবার দুপুরে গ্রামের এই সবুজ-শ্রীটাই হারিয়ে গিয়েছে। পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসা দমকা ঝড়ে আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়েছিল লোকমান শেখের বাড়িতে। তার পর একে একে তা গিলে খেয়েছিল লাগোয়া বাড়িগুলিতে। গরমে তেতেপুড়ে থাকা পাটকাঠির বেড়াতে আগুন লাগতেই দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছিল। ঝড় দিক বদল করতেই দক্ষিণ থেকে উত্তরে বইতে শুরু করেছিল হাওয়া আর তার হাত ধরে আগুনের লেলিহান শিখা।

ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে মারা গিয়েছেন কামরুজ্জামান শেখ (৩৫) আর ছোট্ট একটা ছেলে, গোলাম মুস্তাফা (৮)। আগুনের তাপে ঘর থেকে বেরোতেই পারেনি ওঁরা। পরে, আসবাবপত্র বের করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন আরও অন্তত ত্রিশ জন। তাঁদের ভগবানগোলা কানাপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে দুজনকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে এবং দুজনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় প্রশাসন। বিডিও লোপসান সিরিং বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ৮৬টি বাড়িতে আগুন লেগেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তারপোলিন, চিঁড়ে-গুড় দেওয়া হয়েছে। লঙ্গরখানা খুলে দুপুরে খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে।’’

পাশাপাশি বলরামপুর, হোসেননগর, শিশাপাড়া, সুবর্ণমৃগীর মতো বিভিন্ন গ্রামের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন গ্রাম থেকে লছিমন ভ্যানে করে চাল-ডাল-সব্জির সঙ্গেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য জামাকাপড় বয়ে নিয়ে আসেন তাঁরা। জিয়াগঞ্জের দিগম্বর জৈন সম্প্রদায় গ্রামের মধ্যে ত্রাণকেন্দ্র খুলেছেন। সেখান থেকে এ দিন পাঁউরুটি, কলা, বিস্কুট বিলি করা হয়েছে, তেমনি দুপুরের পর থেকে সরবত বানিয়ে খাওয়াচ্ছেন মানুষকে। জিয়াগঞ্জ-আজমিগঞ্জ পুরসভা জলের ব্যবস্থা করেছে সেখানে।

ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এককাট্টা করে দিয়েছে গ্রামের মানুষকে। গ্রামের ঢোকার মুখে এবং গ্রামের মধ্যে দুটি পৃথক ত্রাণ কমিটি গড়ে তুলে তাঁরা মাইকে প্রচার চালিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করছেন। আত্মীয়-পরিজন থেকে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ আগুনের ভয়ঙ্কর চেহারা দেখার জন্য দলে দলে ভিড় করছেন। সকলেই নিজের সামর্থ অনুযায়ী আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। গ্রামের মধ্যে রয়েছে সুলতানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেই ত্রাণের সামগ্রী মজুত করে রাখা হয়েছে। ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে বেশ কয়েকটি উনুন বানিয়ে দুপুরে খাবারের তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে।

এখন প্রশ্ন আগুন লাগল কি করে?

গ্রামের প্রবীণ মানুষ বাগবুল হোসেন বলেন, ‘‘গ্রামে ধান সেদ্ধ করার জন্য অনেক বাড়িতেই উনুন জ্বলছিল। তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পরে লোকমান শেখের বাড়ির বারান্দায় রাখা দুটো মোটরবাইকের তেলের ট্যাঙ্ক ফেটে যায়। আগুন ছড়ডিয়ে পড়েছিল তার জেরেই।’’ গ্রামের লোকমান শেখ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘পরনের এই লুঙ্গি ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই জানেন!’’ লোকমানের মতোই সুলতানপুর এখন হাতড়ে খুঁজছে তাদের হারানো দিনযাপন।

ছবিগুলি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sultanpur fire school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE