আক্রান্ত নির্যাতিতার মা। অভিযোগ, পুলিশের লাঠিতে কপাল ফুলেছে। ছবি: ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়।
শনিবার আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মায়ের ডাকা নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে দিকে দিকে বিক্ষিপ্ত উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ প্রথম থেকেই নবান্ন অভিযান আটকাতে বিভিন্ন দিকে ব্যারিকেড করে। কোথাও কোথাও আবার জলকামানের ব্যবস্থাও করা হয়। সকাল ১১টার পর থেকে শুরু হয় জমায়েত। ডোরিনা ক্রসিং, সাঁতরাগাছি এবং হাওড়া ব্রিজের চারপাশে কিছু জমায়েত হয়। বেলা ১টার কিছু আগে ডোরিনা ক্রসিং থেকে মিছিল শুরু হয় নবান্নের উদ্দেশে। সেই মিছিলে ছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এ ছাড়াও, মিছিলে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপির বেশ কয়েক জন নেতানেত্রী। তবে কারও হাতেই ছিল না দলীয় পতাকা। পার্ক স্ট্রিটে সেই মিছিল আটকায় পুলিশ। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করতেই আন্দোলনকারীদের আটকায় পুলিশ। ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ আটকালে পার্ক স্ট্রিটে অবস্থানে বসে পড়েন শুভেন্দু। নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, পুলিশ টানাহেঁচড়া করে তাঁর শাঁখা ভেঙে দিয়েছে। হেনস্থার অভিযোগ নির্যাতিতার পরিবারের। অভিযোগ, পুলিশের লাঠির আঘাতে নির্যাতিতার মায়ের কপালের একপাশ ফুলে গিয়েছে। তবে ওই অবস্থাতেই নির্যাতিতার বাবা-মা জনা কুড়ি আন্দোলনকারীকে সঙ্গে নিয়ে রেসকোর্সের রাস্তা দিয়ে নবান্নে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে সেখানেও তাঁদের মিছিল আটকায় পুলিশ। সেখানেই অবস্থানে বসে পড়েন নির্যাতিতার বাবা-মা ও অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা। তবে কিছু ক্ষণ পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন নির্যাতিতার মা। তাঁকে হাসপাতালে যাওয়া হয়। সেই খবর পাওয়ার পরেই পার্ক স্ট্রিটের অবস্থান তুলে হাসপাতালে যান শুভেন্দু। হাসপাতালে নির্যাতিতার মাকে দেখতে যান আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ দেবাশিস হালদারও।
রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার অভিযোগ, রাখিবন্ধন উৎসবের দিনে কলকাতার রাস্তায় ভাঙচুর চালিয়েছে বিজেপি। চালিয়েছে তান্ডব। মানুষ যাতে উৎসব পালন করতে না পারেন, সেই জন্য এই সব করা হয়েছে।
পার্ক স্ট্রিটে শুভেন্দুদের ধর্না-অবস্থান উঠে গেল। বিরোধী দলনেতা জানান, পার্ক স্ট্রিট থেকে তিনি সোজা হাসপাতালে যাবেন নির্যাতিতার মাকে দেখতে। তিনি বলেন, ‘‘আমি উৎসাহ দিয়েছিলাম নির্যাতিতার বাবা-মাকে। তাই তাঁকে সুস্থ করা আমার কর্তব্য।’’
পার্ক স্ট্রিটের অবস্থান থেকে শুভেন্দুর অভিযোগ, পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। তাতে শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘নির্যাতিতার মাকে দেখতে হাসপাতালে যাব।’’
ধর্মতলায় তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির হকার অফিস ভাঙচুর।
রেসকোর্সের পাশে অবস্থান উঠে গেল। সেই প্রতিবাদ অবস্থানে উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা।
রেসকোর্সের পাশের অবস্থানে বসে থাকাকালীনই অসুস্থ হয়ে পড়েন নির্যাতিতার মা। অভিযোগ, পুলিশের কাছে জল চাওয়া হলে তা দেয়নি তারা। পরে অবস্থানে থাকা অন্য আন্দোলনকারীরা জল জোগাড় করে আনেন। কিন্তু জল খাওয়ানো ও চোখেমুখে জল দেওয়ার পরেও নির্যাতিতার মায়ের অসুস্থতা না-কমায়, তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ব্যারিকেড থেকে নেমে রাস্তার এক পাশে গিয়ে ব্যারিকেডের ফাঁক দিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন নির্যাতিতার বাবা। বললেন, ‘‘আমাদের তো হাইকোর্ট অনুমতি দিয়েছে, আপনারা আটকাচ্ছেন কেন? আমরা তো শান্তিপূর্ণ ভাবেই যাচ্ছি। ছেড়ে দিন। আমাদের যেতে দিন।’’ পুলিশের থেকে কোনও উত্তর না-পাওয়ায় সেখানেই অবস্থানে বসে পড়েন নির্যাতিতার বাবা-মা। সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েক জন আন্দোলনকারী।
ব্যারিকেডের মধ্যে দিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন নির্যাতিতার বাবা। ছবি: ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়।
আটকাতেই পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারীরা। কিছু ক্ষণ পর পুলিশের ব্যারিকেডে উঠে পড়েন নির্যাতিতার বাবা-মা।
রেসকোর্সের কাছে পুলিশ ব্যারিকেড করেছে। সেখানেই আটকে যান নির্যাতিতার বাবা-মা।
রেসকোর্সের কাছে পুলিশের ব্যারিকেডে আটকে যান নির্যাতিতার বাবা-মা। —নিজস্ব ছবি।
নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, পুলিশ টানাহেঁচড়া করে তাঁর শাঁখা ভেঙে দিয়েছে। হেনস্থার অভিযোগ নির্যাতিতার পরিবারের। জানা গিয়েছে, পুলিশের লাঠির আঘাতে নির্যাতিতার মায়ের কপালের একপাশ ফুলে গিয়েছে। তবে ওই অবস্থাতেই নির্যাতিতার বাবা-মা জনা কুড়ি আন্দোলনকারীকে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছেন নবান্নের দিকে।
মিছিল পার্ক স্ট্রিটে পৌঁছোতেই তা আটকে দেয় পুলিশ। প্রথমে মিছিলের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পুলিশ তাঁদের আটকায়। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু।
হাতে জাতীয় পতাকা। গলায় কালো কাপড়। ডোরিনা ক্রসিং থেকে শুভেন্দু রওনা দিলেন নবান্নের উদ্দেশে। জওহরলাল নেহরু রোড ধরে সেই মিছিল নবান্নে যাওয়ার কথা।
ডোরিনা ক্রসিংয়ে পৌঁছেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তবে সেখানে আসতে বার বার বাধা পেতে হয়েছে বলে অভিযোগ নির্যাতিতার বাবার। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যে গাড়ি করে আসছিলাম, তার নম্বর সব জায়গা দেওয়া হয়েছে। আমাদের গাড়ি বার বার আটকানো হয়েছে। বলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি করে এখানে পৌঁছেছি। হাই কোর্ট শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দিয়েছে। তার পরেও বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করেছে পুলিশ।’’
শুভেন্দু আগেই বলেছিলেন তিনি ডোরিনা ক্রসিংয়ে গিয়ে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রতিবাদে যোগ দেববেন। সেখান থেকেই নবান্নের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা তাঁদের। বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ বিধানসভা থেকে শুভেন্দু সরাসরি চলে যান ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে। সঙ্গে রয়েছেন অগ্নিমিত্রা পাল, অর্জুন সিংহেরা।
ডোরিনা ক্রসিংয়ে জাতীয় পতাকা হাতে আন্দোনলকারীরা। —নিজস্ব চিত্র।
সাঁতরাগাছিতে পুলিশের লোহার ব্যারিকেড টপকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন আন্দোনকারীরা। তবে পুলিশ বার বার তাঁদের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার বার্তা দিচ্ছে।
হাওড়ায় মিছিল আন্দোলনকারীরা। —নিজস্ব চিত্র।
নবান্ন অভিযানে যোগ দেওয়ার আগে বিধানসভার চত্বর থেকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমরা কোনও সংঘাতে জড়াব না।’’ পুলিশি তৎপরতা নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পুলিশের এত ব্যারিকেড দেওয়ার কী প্রয়োজন?’’ শুভেন্দুর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সকলের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উঠতে পারেননি।’’ আরজি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়ে অসন্তোষের বিষয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে। যদি তদন্ত নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকে তবে তা আদালতে জানাতে পারেন।’’
বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত।
হাওড়া ব্রিজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, দ্বিতীয় হুগলি সেতুও বন্ধ করা হয়েছে। অগত্যা পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছেন মানুষ। দ্বিতীয় হুগলী সেতুর টোল প্লাজ়াও বন্ধ করল পুলিশ। বাইক ছাড়া কোনও চার চাকা বা অন্যান্য গাড়িকে কলকাতার দিকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আর এই নিয়েই পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়াচ্ছেন গাড়ি চালকেরা। সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীরা।
প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে মিছিল আন্দোলনকারীদের। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকেই হাওড়া ব্রিজে যানজট। বাস প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে শহরতলি থেকে কলকাতায় আসা নিত্যযাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছোতে বেগ পেতে হচ্ছে। কেউ কেউ হেঁটে হেঁটেই হাওড়া ব্রিজ পার হচ্ছেন, আবার কারও ভরসা লঞ্চ ও মেট্রো। ভদ্রেশ্বর বাসিন্দা সুপ্রকাশ দত্ত ধর্মতলা এলাকায় রোজ কাজে আসেন। ট্রেন থেকে নেমে বাসে করেই আসতে হয় তাঁকে। কিন্তু শনিবার হাওড়া স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আধ ঘণ্টার বেশি দাঁড়িয়ে থেকে বাস পেলাম না। অগত্যা হাঁটা শুরু করলাম। ব্রিজ পেরিয়ে বাসে ওঠাও ভয়ঙ্কর ব্যাপার। সব বাসই লোকে ঠাসা। দু’তিনটে বাস ছেড়ে দেওয়ার পর একটাতে উঠে অফিস পৌঁছোই।’’
আনা হয়েছে জলকামান। —নিজস্ব ছবি।
আগেই জানিয়েছিলেন। শনিবার আবার এক বার নিশ্চিত করলেন। এক্স পোস্টে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, ‘সুবিচারের’ দাবিতে তিনি শনিবারের ‘নবান্ন অভিযান’-এ থাকবেন। তিনি লেখেন, ‘‘নির্যাতিতার মা-বাবার আহ্বানে, সম্মিলিত প্রশাসনিক প্রচেষ্টায় সেই জঘন্য ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ঘৃণ্য প্রয়াস এবং দোষীদের আড়াল করার উদ্দেশ্যে প্রমাণ লোপাটের চক্রান্তের প্রতিবাদে নবান্ন অভিযানে আমি থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy