
অগ্নিমিত্রা পাল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
‘‘১৭ জন বক্তা এই বিষয়ে বক্তৃতা করেছেন।’’ বললেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি গর্বিত এই প্রস্তাব পাশ করার জন্য।’’
মমতা শুভেন্দুর উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমি ‘ইগনোর’ করি আপনাকে। সবাইকে অসম্মান করবেন না। আমি জন্মভূমিকে শ্রদ্ধা জানাই। কিছু মানুষ দেশকে ভালবাসে। কেউ কেউ নিজের ‘মার্কেটিং’ করতে ভালবাসেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, পহেলগাঁও কাণ্ডে কেন্দ্রীয় সরকার ‘সর্বৈব ব্যর্থ।’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পদত্যাগ করা উচিত।
বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কেরা ‘মোদী-মোদী’ স্লোগান তুললেন। মুখ্যমন্ত্রীর তার মধ্যেই বলে চলেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনার মন্ত্রী, আপনার এবং সেনাবাহিনীকে বিদেশে পাঠানো উচিত ছিল। আপনি যা করতে পারেননি, বিরোধীরা তা করেছে। ভোট এলেই ‘পুলওয়ামা’ যেন করতে না হয়!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দেশকে নিরাপত্তা দিতে পারেননি। আপনি আমাকে হিন্দু ধর্ম শেখাচ্ছেন? রামকৃষ্ণ, গান্ধীজির হিন্দু ধর্ম মানি। আপনাদের মতো ‘ফেক’ ধর্ম নয়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন,‘‘এখানে এই আলোচনা কেন?’’ পাল্টা শুভেন্দুকে মমতা বলেন, ‘‘আপনাকে দেখে মনে হয় কিছু জানেন না। আমি প্রশ্ন করব। কারণ, দেশের নীতির প্রশ্ন। কাল যখন ক্ষমতায় থাকবে না, তখন দেখবেন আপনাদের চেপে ধরেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতায় হয়েছে। পুলওয়ামার (ঘটনার) পর রাজ্যপাল কথা বলেছিলেন। আমরা সিঁদুরকে সম্মান করি। আপনি মহিলাদের সম্মান করেন না। সিঁদুর নিয়ে প্রচার করে বেড়ান। যেখানে হামলা হয়েছে, কেন প্রধানমন্ত্রী যাননি? শুধু বাজার করে বেড়াচ্ছে! আপনি নিজে লড়াই করেননি। আমাদের ঘরের ছেলেদের লড়াই করতে পাঠিয়েছেন।’’
‘‘অপদার্থ বিজেপি। দেশের লজ্জা। আপনি বিরোধী দলনেতা? লজ্জা। সামান্য ভদ্রতা জানে না। বিধানসভায় মিথ্যা বলছে!বাইরে কী করে এরা কে জানে? স্বামীজি রামকৃষ্ণ ঐক্যের কথা বলেছিলেন। পহেলগাঁওয়ে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁরা মানুষ।’’ মমতার সংযোজন, ‘‘প্রস্তাবকে সমর্থন করে বলেই এই অল্প সময়ের জন্য হলেও শিক্ষা দেওয়া জরুরি ছিল। যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই। সন্ত্রাসবাদকে ক্ষমা করা যায় না। মধ্যপ্রদেশের এক নেতা বলেছেন, ‘মেয়েরা কেন লড়াই করল না?’ আমি বলতে চাই, কয়েক লক্ষ আর্মি (সেনা) থাকে, বিএসএফ, সবাই আছে। কেন পুলিশ ছিল না? জঙ্গিরা কোথা থেকে এলো? কোথায় গেল? পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দখলের সুযোগ ছিল। এখনও জঙ্গিরা কেন ধরা পড়ল না?’’ তিনি আর বলেন, ‘‘রাষ্ট্রসঙ্ঘে সন্ত্রাসবাদ কমিটির চেয়ারম্যান পেয়েছে পাকিস্তান। কী ভাবে? আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কে কি খামতি ছিল? বিদেশমন্ত্রী ভাল মানুষ। একজন দক্ষ আমলা ছিলেন। আগে বাইরে থেকে কেউ এলে রাজ্যের একটি তালিকা ছিল। তখন মোদী-শাহের রাজ্য থেকে কী ভাবে পাকিস্তানে তথ্য যেত?’’
পুলওয়ামা কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অগ্নিমিত্রার এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মমতা বলেন, ‘‘আপনি রাজনীতি না ফ্যাশন নিয়ে কথা বলুন।’’ মমতার সংযোজন, ‘‘অপদার্থ বিজেপি। দেশের লজ্জা। আপনি বিরোধী দলনেতা (শুভেন্দু)? লজ্জা।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাংলা প্রথম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে নিয়ে আলোচনা করছে। তাদের ধন্যবাদ জানাই। ধর্মের পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমি শুনেছি।’’
‘‘আমাদের রাজ্যে তিন জন মারা গিয়েছেন। বাংলায় জন্মগ্রহণ করছেন যাঁরা, কেউ দেখছি উল্লেখ করছেন না। বাংলাকে ‘নেগলেক্ট’ করার কারণ নেই। স্বাধীনতা থেকে নবজাগরণে বাংলা পথ দেখিয়েছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই প্রস্তাব আনার জন্য স্পিকারকে ধন্যবাদ। আমরা সন্ত্রাসবাদের সমর্থক নই। সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম নেই, বর্ণ নেই। পর্যটকদের ওপর যে ভাবে অত্যাচার হয়েছে, খুন হয়েছেন, তাঁদের জন্য শোকস্তব্ধ। তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। আমাদের রাজ্যের তিন জন মারা গিয়েছেন। হিন্দুদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে মারা গিয়েছেন যিনি। তাঁকেও কুর্নিশ জানাই।’’
ফিরহাদ হাকিম এবং নরেন চক্রবর্তী কিছু বলেননি। কিন্তু উদয়ন বলছেন, ‘‘বেশ করেছি, বলেছি। বার বার বলব।’’ অভিযোগ শুভেন্দুর। উদয়নকে চুপ করতে এবং তাঁকে সংযত হতে পরামর্শ দিলেন স্পিকার। অন্য দিকে, শুভেন্দু ‘টার্গেট কিলিং’ এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ শব্দ প্রস্তাবে যুক্ত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, বাংলা ভাগ নিয়ে আমার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। তাই এ বারও প্রস্তাব গ্রহণ করা হোক। পাল্টা তাঁকে স্পিকার বলেন, ‘‘আপনি সংশোধনী দিতে পারতেন।’’
সেনাবাহিনীর কৃতিত্বকে সম্মান জানিয়ে বিধানসভায় আলোচনা। কিন্তু প্রস্তাবে ‘সিঁদুর’ নাম কেন নেই, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি বিধায়কেরা। শুভেন্দুর দাবি, ‘‘এই অধিবেশনে চার জন সদস্য ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছেন।’’ এর পর শুভেন্দু নাম নেন ফিরহাদ হাকিম, উদয়ন গুহ, নরেন চক্রবর্তীর। বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে যা বলেছেন তা উল্লেখ করছি না।’’ সঙ্গে সঙ্গে স্পিকার জানান, এই মন্তব্য কার্যবিবরণী থেকে বাদ যাবে। তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানান বিজেপি বিধায়কেরা। তৃণমূল বিধায়কেরা প্রতিবাদ করায় পাকিস্তানে যাওয়ার পরামর্শ বিরোধী দলনেতার।
শুভেন্দুর বক্তব্যের সময় ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর প্রশ্ন করেন, ‘‘ঝন্টু শেখের বাড়ি গিয়েছিলেন? জবাবে শুভেন্দু বলেন, “গিয়েছিলাম। ওঁর বাবার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। স্থানীয় বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞেস করুন।” তৃণমূল পরিষদীয় দল থেকে হুমায়ুনকে চুপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্য দিকে, শুভেন্দুর প্রশ্ন, প্রস্তাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম নেই কেন? সেই নাম যুক্ত করার প্রস্তাব দেন বিরোধী দলনেতা।
অধিবেশনে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন বলা শুরু করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হচ্ছে বিধানসভায়। কিন্তু প্রস্তাবে কেন ‘সিঁদুর’ নাম রাখা হল না? বিধানসভায় প্রশ্ন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের। মুখ্যমন্ত্রী ইউপিএ সরকারের আমলে মন্ত্রী থাকলেও ২৬/১১ হামলার বদলা নিতে বলেননি কেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ? প্রশ্ন অগ্নিমিত্রার। যদিও ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সরকারের অংশ ছিলেন না বলে জানান তৃণমূল বিধায়কদের।
এর পর বলতে ওঠেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
বিজেপির কুমারগ্রামের বিধায়ক মনোজ ওঁরাও অভিযোগের সুরে বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
‘‘জঙ্গিহানার বিরুদ্ধে পথে নামতে চেয়েছিলাম । শিয়ালদহ থেকে মিছিল করতে দেওয়া হয়নি।’’ তৃণমূল বিধায়ক মোশাররফ হোসেনের ‘বাংলার গণতন্ত্র’ নিয়ে ভাষণের জবাবে বললেন নওশাদ সিদ্দিকী। এর পর তৃণমূল বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর, বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতো, বিরবাহা হাঁসদা বক্তব্য দেন।
বিধানসভায় সেনাবাহিনীকে সম্মান জানিয়ে গান গাইলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। তিনি জানান, পাকিস্তানি জঙ্গিরা বেছে বেছে হিন্দুদের খুন করে। কেন এমনটা হল জানা নেই। তবে জঙ্গি হামলা থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন কাশ্মীরের এক টাট্টুওয়ালা। তিনি মুসলমান। তাই এই ‘যুদ্ধ’কে হিন্দু এবং মুসলমানের বলে চিহ্নিত করা উচিত নয়।
বিধানসভায় আইএসএফের একমাত্র প্রতিনিধি নওশাদ সিদ্দিকি বক্তব্য করেন।
মোশাররফ হোসেনের বক্তৃতা মাঝখানেই থামিয়ে দেওয়া হল। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস নিজের আসন থেকে উঠে গিয়ে বিধায়ককে থামান। তাঁর কানে কানে কিছু কথা বলে যান। তার পর দার্জিলিঙের বিজেপি বিধায়ক নীরজ তামাং জিম্বা ইংরেজিতে বক্তৃতা করেন ।
মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী সেনাবাহিনীকে অপমান করেছেন বলায় তৃণমূলের ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেনের মন্তব্যের প্রতিবাদ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা মোশারফ বলেন, ‘‘পররাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশনে সংঘর্ষবিরতি মেনে নিতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy