রবিবার নেতাজি ইনডোরে বিজেপির সাংগঠনিক সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: সংগৃহীত।
শাহ বলেন, “চার দিন আগে শান্তনু ঠাকুর আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বলেন, সব হিন্দু শরণার্থীকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নোটিস দেওয়া হচ্ছে। আমি শান্তনুজিকে বলেছি, ভয় পাবেন না। যাঁরা নোটিস পাবেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের আওতায় আবেদন করান। তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা আমি করব। মমতাজির নোটিসে কারও ভয় পাওয়ার কারণ নেই। শরণার্থী ভাইয়েরা যাতে ভোটদানের অধিকার পান, সেই জন্যই মোদীজি সিএএ আইন এনেছেন।”
শাহ বলেন, “মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর আমলে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মতো ঘটনা ঘটে যায়। সন্দেশখালিতে গরিব মায়ের উপর অত্যাচার হয়। তিনি নিজের ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে বসে থাকছেন। আমি জানতে চাই, সন্দেশখালির মূল অভিযুক্ত কোন দলের ছিলেন? আরজি করের অভিযুক্ত কোন দলের সঙ্গে যুক্ত?”
অমিত শাহ বলেন, “মমতাদিদি ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করে কার পক্ষ নিচ্ছেন? পুরো বাংলা চাইছে ওয়াকফ ভাল ভাবে চলুক, পারদর্শিতা আসুক, নির্দোষদের জমি যাতে দখল না-হয়ে যায়, সরকারি জমি যাতে অধিগ্রহণ না-হয়। কিন্তু মমতাদিদি এর বিরোধিতা করছেন। ২০২৬ সাল পর্যন্ত যত বিরোধিতা করার করুন, তার পরে আর মুখ্যমন্ত্রীই থাকবেন না।”
বাংলায় বিজেপির সাফল্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, “২০১৭ সালের ভোটের পর আমরা প্রস্তুতি নিই। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আমরা সাফল্য পাই। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ৭৭টি আসন জিতি। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ৯৭টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি এগিয়ে ছিল।” দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আর একটুই বাকি আছে! আপনারা ৪০ শতাংশ (ভোট) পেরিয়ে গিয়েছেন। আর চার-পাঁচ শতাংশ এগোতে হবে। আগামী নির্বাচনে আমাদের সরকার গঠন হবে। ২০১৭ সালে আমি বিজেপির সভাপতি থাকাকালীন বলেছিলাম, এখানে বিজেপির সরকার গঠিত হবে। আজ সেই দিন এগিয়ে এসেছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত দিন-রাত এক করে বাংলার প্রত্যেক ভোটারের কাছে যান। বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীর বার্তা নিয়ে যান তাঁদের কাছে। পুরো দেশ চাইছে এখানে দেশভক্তদের সরকার তৈরি হোক, তোষণের সরকার নয়। মমতাদিদি সোনার বাংলার স্বপ্ন তছনছ করে দিয়েছেন। দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ, মহিলাদের উপর অত্যাচার, হিন্দুদের উপর অন্যায়ের উপর তাঁর রাজনীতি চলে। মমতাদিদির আমলে এসএসসি দুর্নীতি, গরুপাচার কাণ্ড, লটারি কাণ্ড, কয়লা দুর্নীতি, একশো দিনের কাজে দুর্নীতি, আবাস দুর্নীতি, রেশন দুর্নীতি, মিড ডে মিলে দুর্নীতি, পুর নিয়োগ দুর্নীতি, জিটিএ দুর্নীতি হয়েছে। বাংলার জনতার হাজার কোটি টাকা তৃণমূলের সিন্ডিকেটের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।”
শাহ জানান, এক তৃণমূল সাংসদ তাঁকে সংসদে প্রশ্ন করেছিলেন বিএসএফ কী করছে! সেই প্রসঙ্গ টেনে শাহ বলেন, “মমতাদিদি, আমরা আপনার থেকে জমি চেয়েছি। পুরো জমি দিয়ে দিন। কাজ শেষ করতে দিন। একটি পাখিও প্রবেশ করতে পারবে না। আপনি জেনেবুঝে সীমান্তে জমি দেন না, যাতে অনুপ্রবেশ চলতে থাকে এবং আপনার ভোটব্যাঙ্ক বাড়তে থাকে, যাতে আপনার পরে আপনার ভাইপোও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। কিন্তু এমনটা হবে না।”
শাহ বলেন, “বাংলার ভোট শুধু বাংলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে না। বাংলার ভোট দেশের সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দেশের সীমান্তকে বাংলাদেশিদের জন্য খুলে দিয়েছেন। তাঁর আশীর্বাদে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। আপনারাই বলুন, অনুপ্রবেশ আটকানো উচিত কি উচিত নয়? দিদি কি আটকাতে পারবেন? ভাইপো আটকাতে পারবেন? অনুপ্রবেশ শুধুমাত্র পদ্ম সরকার আটকাতে পারবে।”
শাহ বলেন, “মোদীজির নেতৃত্বে বাংলার বিকাশের জন্য অনেক কাজ হয়েছে। বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতিকেও মোদীজি ভোলেননি। বহু বছর ধরে বাংলার মানুষের দাবি ছিল যাতে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মমতাদিদির কাছে আমার প্রশ্ন, আপনি ১০ বছর ধরে হয় কেন্দ্রে মন্ত্রী থেকেছেন, বা আপনার সমর্থন ছিল। বাংলা ভাষাকে তখন কেন ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি? মোদীজি বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর জন্য ধন্যবাদ জানানোর শিষ্টাচারটুকুও নেই মমতাজির।”
মমতাকে বিঁধে শাহ বলেন, “আপনি যত ইচ্ছে পাকিস্তানের পাঠানো সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষ নিন, এটা নরেন্দ্র মোদীর সরকার, বিজেপির সরকার। আমি বলে যাচ্ছি, অপারেশন সিঁদুর শেষ হয়নি।”
শাহ বলেন, “আমি বাংলার মাতৃশক্তির কাছে অনুরোধ করছি, আগামী নির্বাচনে অপারেশন সিঁদুরের উপর প্রশ্ন তোলা মমতাজিকে সিঁদুরের দাম বুঝিয়ে দিন। মা-বোনেরা বুঝিয়ে দিন, সিঁদুরের অপমান করার অর্থ কী!”
শাহ বলেন, “কিছু দিন আগে পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তানের পাঠানো সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের নির্দোষ নাগরিকদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে করে পরিবারের সামনে হত্যা করেছে। আপনারা বলুন, পাকিস্তানের পাঠানো ওই সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি দেওয়া উচিত কি না? মোদীজি অপারেশন সিঁদুর করে ঠিক করেছেন কি করেননি? আমরা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছি, এয়ার স্ট্রাইক করেছি। এখন অপারেশন সিঁদুর করে (পাকিস্তানের) ১০০ কিলোমিটার ভিতরে গিয়ে ওদের (জঙ্গিদের) হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করে দিয়েছি। কয়েকশো সন্ত্রাসবাদীকে মেরে ফেলা হয়েছে।” এর পরেই শাহ বলেন, “এতে দিদির পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে। বাংলার লোকেরা যখন সেখানে মারা গেলেন, তখন দিদি এই যন্ত্রণার কথা বললে ঠিক ছিল। তখন কিছু বলেননি। এখন মোদীজি যখন অপারেশন সিঁদুরের পরে এখানে এলেন, তখন একটি বাজে রাজনৈতিক মন্তব্য করে অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করা হল। আপনি অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করেননি। আপনি দেশের কোটি কোটি মা-বোনের ভাবাবেগ নিয়ে খেলা করেছেন।”
ভোট-পরবর্তী হিংসার অভিযোগ নিয়েও তোপ দাগেন শাহ। তিনি বলেন, “এই বাংলায় ভোটের সময় এবং দিদি জয় পাওয়ার পরে শয়ে শয়ে বিজেপি কর্মীকে হত্যা করা হয়। দিদি, কত দিন বাঁচাবেন এদের? আমি বলছি আপনার (সরকারের) সময় এ বার শেষ হয়ে এসেছে। ২০২৬ সালে বিজেপি সরকার গঠন করবে। আমি মণ্ডল পদাধিকারীদের আশ্বাস দিচ্ছি, তৃণমূল সরকার বিদায় নিলেই আমাদের কর্মীদের হত্যায় অপরাধীদের মাটির তলা থেকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেব। গণতন্ত্রে হিংসা কখনও শোভনীয় নয়। দিদি, সাহস থাকলে, হিংসা ছাড়া নির্বাচন করিয়ে দেখুন। আপনার জামানত জব্দ করে দেবে বাংলার জনতা।”
শাহ বলেন, “কালীঘাট মন্দির, ১০৮ করুণাময়ী কালীমাতা মন্দির এবং দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরকে প্রণাম করে আমার বক্তৃতা শুরু করছি। আমি যখন বাংলার এই বীরভূমিতে এসেছি, তখন কবিগুরু টেগোরজি, স্বামী বিবেকানন্দজি, রামকৃষ্ণ পরমহংসজি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে প্রণাম করে আমার বক্তৃা শুরু করছি।” তিনি আরও বলেন, “এই ভূমি বছরের পর বছর ধরে ভারতকে পথ দেখিয়েছে। জ্ঞান, বিজ্ঞান, ধর্ম, স্বাধীনতা সংগ্রাম হোক, প্রতিটি ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে বাংলা ভারতের নেতৃত্ব দিয়েছে। সেই বাংলাতেই অনেক বছর ধরে কমিউনিস্টদের শাসন ছিল। তার পরে মা-মাটি-মানুষের স্লোগান দিয়ে মমতাদিদি আসেন। তিনি এই মহান বঙ্গভূমিকে আজ অনুপ্রবেশ, দুর্নীতি, মহিলাদের উপর অত্যাচার, অপরাধ, বোমা বিস্ফোরণ এবং হিন্দুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কেন্দ্রে পরিণত করেছেন।”
নেতাজি ইনডোরে বক্তৃতা শুরু করলেন অমিত শাহ। শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গে মন্তব্য করার সময় তিনি বলেন, “আমার বন্ধু, বাংলার বিধানসভায় যিনি দাঁড়ালেই দিদির ভয় লাগে, এমন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।”
নেতাজি ইনডোরে পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঞ্চে শাহের সঙ্গে রয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শাহকে একটি কালীমূর্তি উপহার দেন তাঁরা।
রবিবার দুপুরে নেতাজি ইনডোরে দলীয় কর্মসূচি রয়েছে অমিত শাহের। এই সাংগঠনিক সভায় বিজেপির মণ্ডল সভাপতি থেকে শুরু করে জেলা এবং রাজ্যস্তরের নেতৃত্বেরা রয়েছেন। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির রণকৌশলের জন্য এই সভা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
শনিবার রাতেই কলকাতায় আসেন শাহ। বাইপাসের ধারে একটি হোটেলে রাত্রিবাসের পর রবিবার সকালে তিনি নিউ টাউনে পৌঁছোন। সেখানে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির নতুন ভবন উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর অপরাধ এবং অপরাধীদের শনাক্তের ক্ষেত্রে ফরেন্সিকের ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy