Advertisement
২৫ জানুয়ারি ২০২৫

ডায়ালিসিসের কুকুর এ বার কাঠগড়ায়

হাসপাতালের কেবিন থেকে আদালতের কাঠগড়া! এসএসকেএম হাসপাতালের কুকুর-কাণ্ড এ বার কলকাতা হাইকোর্টে। পিজি-তে কুকুরের ডায়ালিসিস করানোর উদ্যোগকে ঘিরে তোলপাড় সত্ত্বেও নানান প্রশ্নের জবাব মিলছে না।

কলকাতা হাইকোর্টে লকেট চট্টোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

কলকাতা হাইকোর্টে লকেট চট্টোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

হাসপাতালের কেবিন থেকে আদালতের কাঠগড়া! এসএসকেএম হাসপাতালের কুকুর-কাণ্ড এ বার কলকাতা হাইকোর্টে।

পিজি-তে কুকুরের ডায়ালিসিস করানোর উদ্যোগকে ঘিরে তোলপাড় সত্ত্বেও নানান প্রশ্নের জবাব মিলছে না। বিভিন্ন শিবির থেকে জবাবের দাবি ওঠা সত্ত্বেও ওই ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এমনকী কোনও তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়নি। কী করে এমন একটি কাণ্ড ঘটতে যাচ্ছিল, সেই ব্যাপারে শো-কজ করা হয়নি ঘটনার সঙ্গে জড়িত একাধিক চিকিৎসক এবং নেতাকে। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী এই নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-কে যে-চিঠি লিখেছেন, জবাব দেওয়া হয়নি তারও।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় সোমবার হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করে জানতে চেয়েছেন, সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে কী করে একটি কুকুরের ডায়ালিসিস করানোর চেষ্টা হয়? তাঁর আইনজীবী অজয় চৌবে জানান, মানুষের হাসপাতালে কুকুরের ডায়ালিসিস করানোর ওই উদ্যোগের পিছনে কার কার হাত ছিল, কোন কোন চিকিৎসককে ডায়ালিসিস করানোর কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল, কুকুরটিই বা কার— এই সব প্রশ্নেরও জবাব চাওয়া হয়েছে মামলার আবেদনে।

মামলা দায়ের করার পরে লকেট এ দিন জানান, এসএসকেএম হাসপাতালকে মানুষের নানান জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল। এ রাজ্যে পশুদের জন্য তো আলাদা হাসপাতাল রয়েছে। তা সত্ত্বেও ওই হাসপাতালকে একটি পশুর চিকিৎসার জন্য কেন বেছে নেওয়া হল, তা জানতে চেয়ে তিনি গত জুনে তথ্য জানার অধিকার আইনে চিঠি দেন সরকারকে। প্রশাসন তার উত্তর দেয়নি বলে ওই অভিনেত্রীর অভিযোগ। তিনি জানান, চিঠির জবাব না-পেয়েই তিনি জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেছেন।

হাইকোর্টে এখন বিভিন্ন জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে। লকেটের আইনজীবী জানান, তাঁদের মামলার শুনানি এ সপ্তাহেই শুরু হতে পারে।

পিজি-তে কুকুর-কাণ্ডের সূত্রপাত মাসখানেক আগে। তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা তথা বিধায়ক নির্মল মাজি এসএসকেএমে তাঁর পরিচিত এক ব্যক্তির পোষ্য কুকুরের ডায়ালিসিসের সুপারিশ করেন বলে অভিযোগ। পিজি-র নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান রাজেন্দ্র পাণ্ডে তার পরেই এসএসকেএমের তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্রের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে জানান, তিনি সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। কুকুরের ডায়ালিসিস করতে কোনও সমস্যা হবে না। অধ্যক্ষের অফিস থেকে এ ব্যাপারে লিখিত নোটও পাঠানো হয় নেফ্রোলজি বিভাগে। কিন্তু এক বিভাগীয় অফিসার বেঁকে বসায় শেষ পর্যন্ত সেই ডায়ালিসিস করা হয়নি। তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। চাপের মুখে বদলি হয়ে যান অধ্যক্ষ প্রদীপবাবু।

পাণ্ডেকে বাদ দিয়ে শুধু তাঁর ঘাড়ে খাঁড়া নামানোর জন্য প্রদীপবাবু স্বাস্থ্য দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করে বসেন। তার পরেই তাঁকে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠানো হয়। জনস্বার্থ মামলা সম্পর্কে এ দিন প্রদীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘শুনেছি, অনেক জায়গা থেকেই চিঠি আসছিল। রাজ্যপালের কাছ থেকেও এসেছে। কী আর বলব! আমি এখন এসএসকেএমে নেই। কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে আছি। আমার কোনও কাজ নেই। এই বিষয়েও কিছু বলার নেই।’’ যে-চিকিৎসকের দিকে আঙুল, তিনি কী বলছেন? ‘‘প্রশাসনিক ব্যাপার প্রশাসকদের জিজ্ঞাসা করুন। আমি প্রশাসক নই, এ ব্যাপারে কিছু জানিও না,’’ বলেন রাজেন্দ্র পাণ্ডে।

পুরো ব্যাপারটির হোতা হিসেবে অভিযোগ উঠেছে যাঁর বিরুদ্ধে, সেই নির্মল মাজির বক্তব্য কী? ‘‘এ-সব আনন্দবাজারেরই কাজ। আমি অন্য কাজে ব্যস্ত। এ-সব গল্প নিয়ে কিছু বলব না,’’ বললেন নির্মলবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

sskm dog dialysis case public interest sskm dog dialysis locket cahttopadhyay public interest case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy