ভোটে লড়াই তো হবেই। তার আগে রাঢ়বঙ্গের লাল মাটিতে আজ, বৃহস্পতিবার পিঠোপিঠি সভা থেকে টক্কর বাধবে দু’জনের। সেই সম্মুখ সমরের কয়েক ঘণ্টা আগে জনজাতি ও মাহাতো অধ্যুষিত জনতার দরবারে নরেন্দ্র মোদীকে আগাম কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুরুলিয়ার হুড়া ও জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে জোড়া সভা থেকে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার অভিযোগ, জনজাতি ও মাহাতো সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ বাধিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি। চলছে টাকার খেলা। এমনকি, জনজাতিদের নিজস্ব সংস্কার ও পুজো-পার্বনের মধ্যেও গেরুয়া শিবির নাক গলানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তাঁর। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া-সহ জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রকৃত সমস্যা সমাধানে তাঁর সরকার কী ভাবে উদ্যোগী, তার বিশদ বিবরণ দিয়ে জনতার কাছে তৃণমূল নেত্রীর আবেদন, ‘ভয়ঙ্কর দুষ্টু পার্টি’ বিজেপির অশুভ উদ্যোগকে পরাস্ত করুন।
বেগুনকোদর স্টেশনের গায়ে কোটশিলার সভায় মমতা বলেন, ‘‘এটা দিল্লির নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদীকে জিজ্ঞাসা করুন, পাঁচ বছরে ওঁরা কী করেছেন? এখানে মাওবাদী হানার সময়ে খোঁজ নিয়েছেন? এখানে জলের সমস্যার খোঁজ নিয়েছেন? আদিবাসী আর মাহাতোদের মধ্যে বিবাদ বাঁধাতে চেয়েছিলেন। মাহাতোদের তফসিলি জাতির তালিকায় আনলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু পাঁচ বছরে সেটা তো করেননি!’’ হুড়ার লধুড়কা এবং পরে কোটশিলা, দুই সমাবেশেই তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, ‘‘কয়েকটা লোক বিজেপির টাকা নেয়। দিল্লিতে কয়েক জনকে ডেকে নাকি মাহাতোদের ‘স্টেটাস’ দেওয়া নিয়ে কথা বলেছে। পাঁচ বছরে তো মাহাতোদের জন্য কিছু করেনি।’’
বস্তুত, জঙ্গলমহল ঘেরা তিন লোকসভা কেন্দ্র পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামে জনজাতির পাশাপাশি মাহাতোদের মন পেতে সব দলই সক্রিয়। মমতা এ দিন যে মাঠে সভা করলেন, তার থেকে সামান্য দূরে বামনিয়ার ময়দানে বুধবার রাহুল গাঁধীর সভামঞ্চে আলোচনার ফাঁকে পুরুলিয়ার কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো তাঁর দলীয় সভাপতির কাছে কুড়মি সম্প্রদায়ের (মাহাতো যার মধ্যে পড়ে) সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে দরবার করেছিলেন। রাহুল তাঁকে বলেন, আচরণবিধি জারি থাকায় এখন এই নিয়ে কোনও ঘোষণা সম্ভব নয়। ভোটের পরে নতুন সরকার এসে কী ভাবে এই কাজ করতে পারে, তা নিয়ে তিনি দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট দলীয় নেতাদের ডেকে কথা বলবেন। কংগ্রেসের নেপাল, তৃণমূলের মৃগাঙ্ক, ফরওয়ার্ড ব্লকের বীর সিংহ এবং বিজেপির জ্যোতির্ময় সিংহ— পুরুলিয়া কেন্দ্রে চার দলের চার প্রার্থীই মাহাতো ও কুড়মি সমাজের প্রতিনিধি। মাহাতোদের বিষয় নিয়ে পুরুলিয়ায় এসে আজ প্রধানমন্ত্রী মোদী কিছু বলেন কি না, নজর রাখছে সব দলই।
মমতা অবশ্য সতর্ক ছিলেন জনজাতিদের অধিকার রক্ষার প্রশ্নেও। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, বিজেপির সরকার মাহাতোদের জন্য যেমন কিছু করেনি, তেমন জনজাতিদের অধিকারেও থাবা বসিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আদিবাসীদের জমি জোর করে কেনা বা বিক্রি করে দেওয়া, এ সব এখানে হতে দিইনি। ঝাড়খণ্ডে (বিজেপি-শাসিত) হয়েছে। আমরা আইন করেছি। আদিবাসীরা এখানে জঙ্গলের পাট্টা, ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’র পাট্টা পেয়েছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘বলুন, আদিবাসী মা-বোনেরা আমার? আপনারা মারাং বুরু ছাড়া বিজেপির চাপিয়ে দেওয়া দেবতাকে ঢুকতে দেবেন? তা হলে আমি কেন দেব?’’ মাঠের দুই-তৃতীয়াংশ ছেয়ে থাকা মহিলা মহল থেকে জবাব, ‘‘না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy