Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কুড়মি ভোট কোন দিকে, চর্চা চলছে পুরুলিয়ায়

কুড়মিদের ভোট-অঙ্ক যে শাসকদলকেও ভাবাচ্ছে এ দিন সে ইঙ্গিত মিলেছে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের নির্বাচনী জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘কুড়মিদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে। কেউ কেউ কুড়মি সমাজকে খেপানোর চেষ্টা করছেন। কুড়মিদের দাবির প্রতি রাজ্য সরকার সহানুভূতিশীল।’’ 

চার মূর্তি, কৃষ্ণনগর।

চার মূর্তি, কৃষ্ণনগর।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৩২
Share: Save:

লোকসভা ভোটে তারা কোনও দলকেই সমর্থন করবে না বলে ঘোষণা করেছে সব ‘কুড়মি সমাজ’। কিন্তু পুরুলিয়া জেলায় (‌যেখানে অন্তত ছ’লক্ষ কুড়মি ভোটার রয়েছেন বলে কুড়মি সমাজের কর্তারা দাবি করেন) এই সম্প্রদায়ের ভোট কী ভাবে নিজেদের দিকে টানবে, তা ভাবতে ব্যস্ত সব দল। কারণ, প্রায় সব দলেরই জেলা স্তরে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কুড়মি সম্প্রদায়ভুক্ত। এ বারের লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া আসনে প্রার্থীও হয়েছেন তেমনই তিন জন।

কুড়মিদের ভোট-অঙ্ক যে শাসকদলকেও ভাবাচ্ছে এ দিন সে ইঙ্গিত মিলেছে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের নির্বাচনী জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘কুড়মিদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে। কেউ কেউ কুড়মি সমাজকে খেপানোর চেষ্টা করছেন। কুড়মিদের দাবির প্রতি রাজ্য সরকার সহানুভূতিশীল।’’

কুড়মিদের প্রধান দাবি মূলত তিনটি—‘আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস’ (ওবিসি)-এর বদলে ‘জনজাতি’র (শিডিউলড ট্রাইব) সরকারি তকমা দেওয়া, কুড়মালি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করা এবং ‘সারনা’ ধর্মের স্বীকৃতি। দাবিটা জোরাল হয় ২০১৫ নাগাদ পুরুলিয়া ১ ব্লকের ডুড়কুর একটি সম্মেলন থেকে। ওই সম্মেলনের আয়োজন করে ‘পূর্বাঞ্চল কুড়মি সমাজ’। পরে ওই সংগঠন থেকে বেরিয়ে ‘আদিবাসী কুড়মি সমাজ’-এর ছাতার তলায় কিছু নেতা-কর্মী আলাদা ভাবে আন্দোলন শুরু করেন। কুড়মি আন্দোলনের রেশ পৌঁছয় দিল্লি পর্যন্ত।

কুড়মি নেতারা জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কুড়মালিকে দ্বিতীয় রাজ্যভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। রাজ্যের তরফে কুড়মি জাতির আদিবাসী তালিকা অন্তর্ভুক্তির পক্ষে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্টও পাঠানো হয়েছিল। যদিও ২০১৮ সালে পাঠানো ওই রিপোর্ট খারিজ করে ফের রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্র।

‘পূর্বাঞ্চল কুড়মি সমাজ’-এর মুখপাত্র অজিত মাহাতোর দাবি, পুরুলিয়ায় অন্তত ৯-১০ লক্ষ কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ভোটার অন্তত সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ। জেলার ন’টি বিধানসভা আসনের মধ্যে রঘুনাথপুর, কাশীপুর ও পাড়ার একাংশ বাদে অন্যগুলিতে কুড়মি সম্প্রদায়ের ভোটার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। আবার ‘আদিবাসী কুড়মি সমাজ’-এর রাজ্য সম্পাদক রাজেশ মাহাতোর দাবি, ‘‘গোটা জঙ্গলমহলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ কুড়মি সম্প্রদায়ভুক্ত।’’ দুই কুড়মি নেতাই জানিয়েছেন, তাঁদের দাবিগুলিকে নির্বাচনী ইস্তাহারে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে যাওয়া হয়েছিল। আলাদা করে কোনও দলের থেকেই তাঁরা সদর্থক জবাব পাননি। অজিত এবং রাজেশের দাবি, ‘‘তাই লোকসভা ভোটে কোনও দলকেই সমর্থন না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুড়মি সমাজ।’’

‘সমাজের’ নেতারা বললেও ভোট-বাজারে কুড়মি ভোটারেরা কি ‘নিরপেক্ষ’ থাকবেন? রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শাম্তিরাম মাহাতো কুড়মি সম্প্রদায়ভুক্ত। পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতোওতা-ই। দু’জনেরই বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ গড়া হয়েছে, কুড়মালি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। বাড়তি কী বলব?’’ পুরুলিয়া কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। তাঁর দাবি, ‘‘দলের ইস্তাহারে বলা রয়েছে, ক্ষমতায় এলে এ ধরনের দাবি খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়া হবে।’’ আর এক কুড়মি নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী বীরসিংহ মাহাতোর মন্তব্য, ‘‘কেউ ভোট থেকে সরে

থাকতে বললেই লোকে সরে থাকবে— এটা হাস্যকর।’’ বিজেপির কুড়মি নেতা সুভাষ মাহাতোও বলেন, ‘‘কুড়মিদের দাবি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাউকে সমর্থন করা যাবে না, তা কী করে হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Purulia Kurmi Samaj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE