রানাঘাটে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছে বামেরা। —ফাইল চিত্র।
ভোটের আগে রানাঘাটে তৃণমূল এবং বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছে বামেরা। রাজনীতির কারবারিদের মতে, এই কেন্দ্রে মতুয়া ভোটের পাশাপাশি বাম ভোটও নির্ণায়ক শক্তি হতে যাচ্ছে। তাই এই বামভোট নিয়েও অঙ্ক কষা শুরু করেছেন সকলে।
রাজনৈতিক দলগুলির হিসাব মতো, রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে ৩০ শতাংশের বেশি মতুয়া ভোট রয়েছে। এই মতুয়া ভোট যে দলের দিকে বেশি ঝুঁকবে, তারা অনেকটাই এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তেমনই বাম ভোটও ফ্যাক্টর হতে চলেছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মতুয়া ভোটের দখল বেশ কয়েক বছর আগেই নিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু বছরখানেক ধরেই এই ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসানোর জন্য এগিয়েছে বিজেপি। মনে করা হচ্ছে, রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে জয়ের জন্য যে কোনও দলকে অন্তত চল্লিশ শতাংশের মতো ভোট পেতে হবে। প্রায় তিরিশ শতাংশের মতো মতুয়া ভোট এই কেন্দ্রে কার দিকে যাবে, তা নিয়ে তাই দড়ি টানাটানি চলছেই।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গত লোকসভা ভোটের হিসাব অনুযায়ী, রানাঘাট লোকসভায় তৃণমূলের ভোট ছিল ৪৪ শতাংশের সামান্য বেশি। বাম প্রার্থী পেয়েছিলেন ২৯ শতাংশ ভোট। বিজেপির দখলে ছিল ১৭.৪৬ শতাংশ। জেলায় বিজেপির উত্থানের পিছনে বাম ভোট ভাঙাটাই দায়ী বলে মনে করেন অনেকেই। ২০১১ সালের পর থেকে নদিয়ার বিভিন্ন নির্বাচনে বামেরা পিছিয়ে পড়লেও ২০১৫ সালের পুরভোটে তাহেরপুর পুরসভায় তারা ক্ষমতায় ফিরেছে। পাশাপাশি রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভাতেও জিতেছেন বামপ্রার্থী। বাম কংগ্রেসের সমঝোতা অবশ্য ছিল সেই ভোটে।
রাজনীতির কারবারিদের মতে, ২০১৪ লোকসভা ভোটের পরে বিধানসভা, পুরসভা বা পঞ্চায়েত ভোটেও যে রানাঘাট মহকুমা এলাকায় বিজেপির উল্লেখযোগ্য শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে এমনটা নয়। এখানে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট টপকে যেতে তাই কংগ্রেস এবং বামেদের ভোট ব্যাঙ্ক ভাঙিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে বিজেপিকে। গত লোকসভা ভোটে এখানে কংগ্রেসের ভোট ছিল প্রায় সাত শতাংশের কাছাকাছি। বাম আমলেও রানাঘাট মহকুমার বেশ কিছু গ্রামের সঙ্গে শহরাঞ্চল ছিল কংগ্রেসের দুর্গ। বীরনগর, রানাঘাট, শান্তিপুর, কুপার্সের মতো পুর এলাকাগুলি দীর্ঘ দিন ধরে নিজেদের দখলে রেখেছিল কংগ্রেস। এখন অবশ্য তা তৃণমূলের দখলে। তবে গত কয়েক বছরে একাধিক জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের দলবদলের পরেও রানাঘাট মহকুমার একাংশে এখনও কংগ্রেসের কিছু স্থায়ী ভোট আছে। সেই ভোটে থাবা বসানো কারও পক্ষেই সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিজেপিকে এগোতে গেলে তৃণমূল বিরোধী ভোট হিসাবে বাম ভোটকেই ভাঙাতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার হৃতসম্মান পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়েছে বামেরা। দেওয়াল লেখার পাশাপাশি জনসংযোগের ক্ষেত্রেও বামেরা সমান তালে টক্কর দিচ্ছে। বামেরা যদি নিজেদের ভোট নিজেদের দিকেই রাখতে পারে, সে ক্ষেত্রে তৃণমূলই লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুমিত দে বলেন, “আমাদের ভোট আমাদের দিকেই থাকবে। বরং যত সময় গড়াবে তত বেশি ভোট আমাদের দিকে আসবে। মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন।” আবার বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জগন্নাথ সরকার বলেন, “তৃণমূল, কংগ্রেস সবার ভোটই ভেঙে আমাদের দিকে আসবে। বামভোট হয়তো একটু বেশিই আসবে আমাদের দিকে।”
তবে এই সব বিষয়কে খুব একটা আমল দিচ্ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি বিধায়ক শঙ্কর সিংহ বলেন, “এগুলো কোনও ফ্যাক্টর নয়। এ নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরাই জিতব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy