অর্ণব ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
তৃতীয় দফার নির্বাচনের দু’দিন আগেই সরিয়ে দেওয়া হল মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষকে। আগামী ২৩ মে মালদহের দু’টি কেন্দ্রে নির্বাচন হবে। ২০০৬ ব্যাচের এই আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে কমিশন বিভিন্ন সূত্র থেকে নানান অভিযোগ পেয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। মালদহের
নতুন পুলিশ সুপার হচ্ছেন ২০১০ ব্যাচের আইপিএস অফিসার অজয় প্রসাদ। তিনি এখন ব্যারাকপুরের একটি ব্যাটালিয়ানের কমান্ডান্ট হিসাবে কাজ করছেন।
ভোটের আগে অর্ণবের বদলি অবশ্য এই প্রথম নয়। ২০১৬ সালে তিনি দক্ষিণ দিনাজপুরের এসপি ছিলেন। বিধানসভা ভোটের আগে কমিশন তাঁকে সরিয়ে দেয়। তখন রাজ্য সরকার নতুন করে পদ তৈরি করে সিআইডির সুপার হিসেবে তাঁকে মালদহে নিয়ে আসে। ভোট পর্ব মিটলে সেই মালদহেই তাঁকে পুলিশ সুপার পদে বসানো হয়।
পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে বিরোধীরা অভিযোগ করেন, অর্ণব শাসকদলের হয়ে কাজ করছেন। উত্তর মালদহের কংগ্রেস প্রার্থী ইশা খান চৌধুরী বলেন, “সে জন্য অনেক আগেই অর্ণব ঘোষকে সরানো উচিত ছিল।’’ তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি সঞ্জিত মিশ্র বলেন, “সারদা কাণ্ডেও নাম জড়িয়ে রয়েছে অর্ণবের। বিরোধীদের কর্মসূচিতেও বারবার বাধা দিয়েছেন তিনি।’’ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, সদ্য এ দিনই কমিশনের পর্যবেক্ষক অজয় নায়েকের সঙ্গে
দেখা করে মালদহে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে তাঁকে অবহিত করেন তাঁরা। তার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রদীপ। তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “বিরোধীরা সংগঠন না করে অফিসার বদলির উপরে বেশি জোড় দিচ্ছেন। তা ছাড়া পুলিশ পুলিশের কাজ করে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অর্ণববাবু জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন।”
মালদহের পুলিশ সুপার পরিবর্তন প্রসঙ্গে রাজ্যে আসা নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক শনিবার বলেন,‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই ওই অফিসার আমাদের নজরে ছিলেন। ওই জেলায় ভোট প্রস্তুতিতে যা যা করার কথা, তাতে খামতি ছিল। প্রচুর অভিযোগও আসছিল। সেই কারণে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই বিরোধী দলগুলি অর্ণবের বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে বার বার অভিযোগ জানিয়েছিল। সারদা কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে কয়েক দফায় নোটিস দিয়েছে। এমনকি শিলিগুড়িতে রাজীব কুমারের জিজ্ঞাসাবাদ পর্বেও বার বার উঠে এসেছে অর্ণবের নাম। লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন বিরোধী দল সারদা-নারদ প্রসঙ্গ তুলে প্রচার চালাচ্ছেন। শাসক তৃণমূল আবার তার সম্পূর্ণ দায় চাপাচ্ছে বিরোধীদের উপর। ‘‘এমন অবস্থায় সারদা তদন্তে সিবিআইয়ের আতসকাচের নীচে থাকা কোনও অফিসারকে পুলিশ সুপারের দায়িত্বে রাখা অস্বস্তিকর।’’— বলেন কমিশনের এক মুখপাত্র।
চলতি ভোটে এ নিয়ে মোট ছ’জন আইপিএস অফিসারকে সরিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা ও জ্ঞানবন্ত সিং, বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ এবং ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগানকে আগেই সরিয়ে ছিল কমিশন। প্রথম দফা ভোটের দু’দিন আগে কোচবিহারের পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তকেও একই ভাবে সরিয়ে অমিত সিংহকে পুলিশ সুপার পদে বসিয়ে দিয়েছিল নির্বাচন। একই ভাবে এ বার অর্ণবকে সরিয়ে বসানো হল অজয়প্রসাদকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy