মুকুল রায় নিজে অবশ্য এ নিয়ে কোথাও কোনও মন্তব্য করেননি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে যোগাযোগ করা যায়নি।
আরও পড়ুন: হালকা খাবার, ভাল ঘুমের পর আজ হাসপাতালে চলছে অভিনন্দনের নানা পরীক্ষা
কিন্তু যাঁর কাছে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে, সেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কী বলছেন? শনিবার সকালে তাঁকে কি মুকুল রায় ফোন করেছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব বৈশাখী এড়িয়ে গিয়েছেন। এ বারের লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব কি তিনি পেয়েছেন? যদি পেয়ে থাকেন, তা হলে কি তিনি রাজি হচ্ছেন? এই প্রশ্নের জবাবে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি যা করব, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভালর কথা মাথায় রেখেই করব। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষতি হোক, এমন কিছু আমি করব না।’’
রাজনৈতিক শিবিরের কাছে বৈশাখীর এই মন্তব্যের দু’রকম ব্যাখ্যা রয়েছে।
একাংশ মনে করছেন, তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দূরত্ব এই মুহূর্তে তাঁর জন্য সাপে বর। নারদ-কাণ্ডের জেরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে রয়েছেন শোভন। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাই, এই মুহূর্তে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব এবং বিজেপি-র সঙ্গে নৈকট্য শোভনের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ। সুতরাং শোভনের ভালর কথা ভেবে পদক্ষেপ করার বলে বৈশাখীর আসলে ধরি মাছ না ছুঁই পানি ঢঙে বিজেপি-র প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার সম্ভাবনার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে শেষ সাত দিনে ৬০ বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করল পাক সেনা
রাজনৈতিক শিবিরের অন্য একটি এংশ অবশ্য মনে করছে, বৈশাখী বিজেপি-র প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার ইঙ্গিতই দিতে চেয়েছেন। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের দূরত্ব এই মুহূর্তে যতটাই হোক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শোভনের আনুগত্য তাতে বিন্দুমাত্র টাল খায়নি বলে তৃণমূলের অনেকেই এখনও মনে করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে শোভনের কিছু কার্যকলাপ নিয়ে বিরক্তি এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তরফে ‘দিদি’র কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিমান— এর বাইরে আর কোনও ভুল বোঝাবুঝির জায়গা তাদের দু’জনের সম্পর্কটায় নেই বলেও তৃণমূলের অনেকেরই বিশ্বাস। তাই, শোভন বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন এমনটা মমতা তো বটেই, শোভন নিজেও ভাবতে পারেন না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত। অতএব শোভন ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিজেপির প্রার্থী হবেন না বলেই কেউ কেউ মনে করছেন। শোভনের ক্ষতি করতে না চাওয়ার অর্থ হল, মমতা এবং শোভনের দূরত্ব আর বাড়তে না দেওয়া— বৈশাখী এমনটা বোঝাতে চেয়েছেন বলে এই অংশের দাবি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, বৈশাখীকে বিজেপি প্রার্থী করতে চাইছে কেন? প্রথমত, একটি কলেজের অধ্যক্ষা হিসাবে প্রশাসন সামলানোর অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র অন্যতম শীর্ষ নেত্রী হিসাবে সংগঠন সামলানোর অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। তৃতীয়ত, মিডিয়ার সামনে বৈশাখী অত্যন্ত সাবলীল। এই সব তথ্য বিশ্লেষণ করেই অমিত শাহের কাছ থেকে রাজ্য বিজেপির কাছে নির্দেশ এসে থাকতে পারে মনে করা হচ্ছে। তবে, শুধুমাত্র বৈশাখীর ‘যোগ্যতা’র কথা মাথায় রেখেই সবটা হচ্ছে, এ রকম ভাবার কোনও কারণ নেই বলেই বিজেপির একটি অংশের দাবি। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এই মুহূর্তে সরাসরি বিজেপিতে স্বাগত জানানোর কিছু ‘টেকনিক্যাল অসুবিধা’ রয়েছে বলে রাজ্য স্তরের এক বিজেপি নেতার মত। কিন্তু বিজেপি চাইছে, শোভনের মতো আরও বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতাকে আপাতত তৃণমূলের থেকে দূরে সরিয়ে নিতে। প্রত্যেকের জন্যই আলাদা আলাদা ভাবে ঘুঁটি সাজানো শুরু হয়ে গিয়েছে। শোভনের জন্য বৈশাখীকে টানা হচ্ছে সম্ভবত সেই স্ট্র্যাটেজির অঙ্গ হিসেবেই।
আরও পড়ুন: পাক ডেরায় ৫৮ ঘণ্টা, উইং কমান্ডার অভিনন্দনের ডায়েরি
তৃণমূলের যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যকলাপ থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন গত কয়েক মাস ধরে। তাতে বেহালা এলাকায় তৃণমূলের ক্ষতি যে হয়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বও তা বুঝতে পারছেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেহালা এলাকার সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে। সে দিন এক বারও শোভনের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্চারণ করেননি। কিন্তু, নেত্রীর ওই দিনের বার্তার পর থেকে দল এবং সরকারের তরফে শোভনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি জোকা বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য বার বার অনুরোধ জানানো হয়েছিল শোভনকে। শোভন যাননি। বেহালা এবং আশপাশের এলাকা থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের চার কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য, রঘুনাথ পাত্র, সুদীপ পোল্লে এবং শেফালী প্রামাণিক শনিবার সকালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হাজির হন বলে প্রাক্তন মেয়রের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে। এলাকায় সাংগঠনিক কার্যকলাপের হাল ধরার জন্য এ দিন শোভনকে তাঁরা বার বার অনুরোধ করেছেন বলে খবর। শোভন তাঁদের কোনও ভাবেই আশ্বস্ত করেননি। এবং এটা ঘটেছে বৈশাখীর কাছে মুকুল রায়ের ফোন আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই।