Advertisement
E-Paper

গাড়ি-স্বেচ্ছাসেবক কথার কথা, বলছেন প্রতিবন্ধীরা

প্রতিবন্ধী ভোটারদের সুবিধার্থে এ বার একটি অ্যাপ চালু করেছে কমিশন। কথা ছিল, যে-সব প্রতিবন্ধীর হাঁটতে-চলতে অসুবিধা হয়, তাঁদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে গাড়ি থাকবে।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪১
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

তাঁদের জন্য গাড়ি থাকবে, হুইলচেয়ার থাকবে, স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবের মধ্যে ফারাক যে বিস্তর, বৃহস্পতিবার প্রথম দফার ভোটে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশে পদে পদে তাঁরা তার প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানালেন প্রতিবন্ধী ভোটারেরা। তাঁরা বলছেন, গাড়ি-স্বেচ্ছাসেবক এগুলো যে কথার কথা, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

প্রতিবন্ধী ভোটারদের সুবিধার্থে এ বার একটি অ্যাপ চালু করেছে কমিশন। কথা ছিল, যে-সব প্রতিবন্ধীর হাঁটতে-চলতে অসুবিধা হয়, তাঁদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে গাড়ি থাকবে। গাড়ি থেকে নামিয়ে হুইলচেয়ারে বুথ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে থাকবেন এক জন স্বেচ্ছাসেবক। কিন্তু প্রথম দফার ভোটে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে পরিবহণ ব্যবস্থার দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সম্পাদক বিনয় ধর। তাঁর বাঁ পায়ে সমস্যা আছে। মহাকালবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটার বিনয়বাবু বলেন, ‘‘এ বার ভোটকেন্দ্রে র‌্যাম্প নিয়ে সমস্যা হয়নি। কিন্তু বুথে পৌঁছে দিতে যে-গাড়ি থাকার কথা ছিল, তা কেউ পেয়েছেন বলে শুনিনি। যাঁরা বুথ স্লিপ পাননি, তাঁদের স্লিপ দেওয়ার জন্য এক জন অঙ্গনওয়াড়ি-কর্মী ছিলেন। কিন্তু হুইলচেয়ারে বুথ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য কোনও স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন না।’’ ভোটকেন্দ্র পৌঁছতে তাঁর জেলায় কেউ গাড়ি পাননি বলে অভিযোগ বিনয়বাবুর।

আলিপুরদুয়ারে তবু ‌র‌্যাম্পের দেখা মিলেছে। কোচবিহারের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে তা-ও পাননি বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সম্পাদক প্রদীপ ইন্দ্র। রামভোলা হাইস্কুলের ১৭৪ নম্বর পার্টের ওই ভোটার বললেন, ‘‘আমার ভোটকেন্দ্রে র‌্যাম্প ছিল না। পাশে কোচবিহার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়েও র‌্যাম্প চোখে পড়েনি। কমিশন বলেছিল, প্রতিবন্ধীদের জন্য গাড়ি, হুইলচেয়ার থাকবে, স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। কিন্তু কোচবিহার শহর এবং ব্লক স্তরের কিছু ভোটকেন্দ্রে খোঁজ নিয়েছিলাম। সেখানে ওগুলো ছিল, এমন কথা কেউ বলল না।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের পিএনএন মোহন পাবলিক স্কুলের ভোটার চিকিৎসক সত্যেন্দ্র সিংহ বললেন, ‘‘প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাপে দেওয়া নির্দেশ মেনে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছতে গাড়ি চেয়েছিলাম। অনেক চেষ্টার পরে গাড়ির পরিবর্তে এল অ্যাম্বুল্যান্স! আমার বুথে সাহায্য করার জন্য কোনও স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন না। এ দিকে স্কুলের র‌্যাম্প যা উঁচু, তাতে হুইলচেয়ার নিয়ে উঠতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত অন্য ভোটারেরা আমার হুইলচেয়ার তুলে বুথে নিয়ে যান।’’ দুষ্যন্ত শর্মা নামে জিবি নগরের এক প্রতিবন্ধী ভোটার টুইটারে জানান, হুইলচেয়ারের অভাবে তিনি ভোট না-দিয়েই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

এই সব ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবের ফারাক দেখছেন প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে কর্মরত সমাজকর্মীরা। শম্পা সেনগুপ্ত নামে এক সমাজকর্মী জানান, কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপির ইস্তাহারে প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে নানান প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সেগুলোকে স্বাগত জানিয়ে শম্পা বলেন, ‘‘শুধু প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ থাকলে চলবে না। তার রূপায়ণে সচেতনতা এবং দায়বদ্ধতার পরিচয়ও দিতে হবে।’’ সম্প্রতি প্রেস ক্লাবে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এই দায়বদ্ধতার কথাই শুনতে চেয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অন্যতম কর্ণধার দেবজ্যোতি রায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক কাজ হয়েছে। তবে অধিকার বলতে যা বোঝায়, তা এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’’

তবে এ রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য এ বার অনেক কিছু করা হয়েছে। সেগুলি কোথায় কতটা করা গিয়েছে, তা নিয়ে পর্যালোচনা হবে। এটা একটা শেখার প্রক্রিয়া। আশা করি, পরবর্তী পর্যায়ের ভোটে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে ওই ভোটারেরা বঞ্চিত হবেন না।’’

Election Commission Person with disability
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy