Advertisement
E-Paper

ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে ‘চট-বৈঠক’ তৃণমূলের

লোকসভা ভোটের প্রচারে এ ভাবেই গ্রামে গ্রামে মানুষের অভিযোগের কথা শুনছেন জ্যোতিপ্রিয়।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০০:০৪
চট-সভা: বক্তৃতা করছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ছবি: সুজিত দুয়ারি

চট-সভা: বক্তৃতা করছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ছবি: সুজিত দুয়ারি

ছোট্ট একফালি মাঠ। সেখানে চট পেতে বসে আছেন গ্রামের কিছু মহিলা-পুরুষ। সামনে ঘাসের উপরে দাঁড়িয়ে খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর হাতে মাইক। বক্তৃতা করছেন তিনি। ভাষণ শেষে উপস্থিত গ্রামবাসীর কাছে মন্ত্রী সরাসরি জানতে চাইলেন, ‘‘আপনাদের কোনও অভাব-অভিযোগ থাকলে নিঃসংকোচে জানান।’’ কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা বললেন, ‘‘এলাকার নেতাদের কাছে কোনও সমস্যার কথা জানাতে গেলে নেতারা কথা বলেন না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের শংসাপত্র পেতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়। আপনাকে নিয়ে বা তৃণমূলকে নিয়ে অবশ্য আমাদের কোনও সমস্যা নেই।’’ এই কথা শুনে জ্যোতিপ্রিয় বললেন, ‘‘এখন থেকে কোনও নেতা বা জনপ্রতিনিধি কথা না শুনলে শাসন করবেন। আমাকে জানাবেন। ওদের কানমলে কাজ করিয়ে নেবেন। কথা না শুনলে আমরা কড়া পদক্ষেপ করব। তবে সকলের কাছে অনুরোধ, আমাদের ছেড়ে যাবেন না।’’

লোকসভা ভোটের প্রচারে এ ভাবেই গ্রামে গ্রামে মানুষের অভিযোগের কথা শুনছেন জ্যোতিপ্রিয়। মূলত হাবড়ার গ্রামীণ এলাকাতেই তিনি এই ধরনের সভা করছেন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সভা হয়ে গিয়েছে। আরও কয়েকটি সভা করার কথা। সভাগুলির পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘চট বৈঠক’ (মাটির উপর চট পেতে বসে বৈঠক)। সঙ্গে থাকছে তেলেভাজা, মুড়ি, চা।

কেন মন্ত্রীকে এ ভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে?

তৃণমূল সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে ওই সব এলাকায় বিজেপির প্রভাব বেড়েছে। কিছু মানুষের মধ্যে দলের নেতৃত্বের একাংশের সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে গোলমালের জেরেও কিছু মানুষ রাজ্যের শাসকদলের উপরে বিরূপ। ওই সব সমস্যা পাশ কাটিয়ে লোকসভা ভোটে মানুষের সমর্থন পাওয়ার তাগিদেই তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের এই পদক্ষেপ। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘এই ধরনের বৈঠকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ খোলা মনে সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। সেই মতো দ্রুত পদক্ষেপ করাও হচ্ছে।’’ কেন কিছু মানুষ শাসকদল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন? জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ আমাকে জানিয়েছেন, দলের স্থানীয় কিছু দাদাদের উৎপাতে ওই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এখন তা মিটে গিয়েছে। সকলকে আমার ফোন নম্বর দিয়ে বলেছি, কোনও সমস্যা হলেই সরাসরি আমাকে জানাতে।’’

দিন কয়েক আগে মন্ত্রী স্থানীয় কুমড়া এলাকায় ওই ধরনের একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত মানুষ কুমড়া বাজার এলাকায় একটি কংক্রিটের রাস্তার দাবি করেন তাঁর কাছে। মন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ভোটের পরে রাস্তার বিষয়টি তিনি দেখবেন।

কুমড়া, মছলন্দপুরের মতো এলাকার সভাগুলিতে মন্ত্রী নিয়ম করে এনআরসি নিয়ে বক্তৃতা করছেন। তার কারণ, ওই সব এলাকার বহু মানুষ বিভিন্ন সময়ে ওপার বাংলা থেকে এসে এখানে বসবাস করছেন। অসমে নাগরিকপঞ্জি থেকে বহু মানুষের নাম বাদ যাওয়ার পর থেকে অনেকের মধ্যেই এ নিয়ে ভীতি কাজ করছে। তৃণমূলের তরফে তাঁদের বলা হচ্ছে, বিজেপি এ রাজ্যেও এনআরসি চালু করবে। আপনাদের সকলকে খাঁচায় ভরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। আমরা তা হতে দেব না।

তৃণমূলের এমন বৈঠক নিয়ে বিজেপির তরফে অবশ্য কটাক্ষ করা হয়েছে। দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে হাবড়ার ওই সব এলাকায় তৃণমূল ভোট লুট করেছে। ভোট নিয়ে তাঁরা এ বার তাই সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন। বৈঠক করেও কোনও লাভ হবে না তৃণমূলের।’’

Lok Sabha Election 2019 TMC West Bengal Jyotipriyo Mullick
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy