Advertisement
১৯ মে ২০২৪

২৫ মাস পরে মঞ্চে আবার আবির্ভাব মদনের

সেই বিকেল থেকেই সাউন্ডবক্সে কিশোরকুমার গাইছেন— ‘বচনা অ্যায় হাসিনো, লো ম্যায় আ গয়া!’ প্যান্ডেলের ভেতরে পুজো উদ্বোধনের অপেক্ষায় বসে কার্তিকঠাকুর। আশুতোষ মুখার্জি রোডে মঞ্চ তৈরি। মঞ্চের গায়ে লেখাও তৈরি, ‘মাটির গন্ধ, গানের সুরে/ দাদা আবার ভবানীপুরে!’

কার্তিকপুজোর উদ্বোধনে মদন মিত্র। মঙ্গলবার ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারের একটি মণ্ডপে। — সুমন বল্লভ

কার্তিকপুজোর উদ্বোধনে মদন মিত্র। মঙ্গলবার ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারের একটি মণ্ডপে। — সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৩
Share: Save:

সেই বিকেল থেকেই সাউন্ডবক্সে কিশোরকুমার গাইছেন— ‘বচনা অ্যায় হাসিনো, লো ম্যায় আ গয়া!’ প্যান্ডেলের ভেতরে পুজো উদ্বোধনের অপেক্ষায় বসে কার্তিকঠাকুর। আশুতোষ মুখার্জি রোডে মঞ্চ তৈরি। মঞ্চের গায়ে লেখাও তৈরি, ‘মাটির গন্ধ, গানের সুরে/ দাদা আবার ভবানীপুরে!’

আবার ‘তিনি’ এলেন। কথা ছিল, আসবেন সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ। বড়জোর আধ ঘণ্টা দেরি হল পৌঁছতে। পুজোর উদ্বোধন তাঁরই করার কথা ছিল। করলেনও। তবে তার আগে মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোন হাতে নিলেন গোলাপি পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা, লাল-কালো স্নিকার্স পরা ‘দাদা’। তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অফিসের সামনেই বাঁধা হয়েছিল মঞ্চ। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও যে মঞ্চ থেকে ‘দাদা’ এ দিন বারবার বোঝাতে চাইলেন, নিছক উদ্বোধক নন— আসলে তিনি আসরের বড়কর্তা।

মঙ্গলবার সন্ধেয় তাঁর ভবানীপুরে কার্তিকপুজোর এই মঞ্চ থেকেই জনসভায় প্রত্যাবর্তন ঘটল মদনগোপাল মিত্রের। ২৫ মাস পর।

যে মঞ্চে নিজের পুরনো ‘জনদরদী-কাছের মানুষ’ ভাবমূর্তিটাই নিপুণ ভাবে ফের তুলে ধরলেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। এ দিন মাইক হাতে বক্তৃতার সময়টুকু অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার রাশই কার্যত নিজের হাতে তুলে নিলেন। কথায় সরাসরি রাজনীতির ছোঁয়াচ এড়িয়ে গেলেন ঠিকই। কিন্তু দেশ জুড়ে নোট-আকালের সময়ে মানুষের পাশে থাকার কথা বললেন। পুজোর আনন্দে সাধারণ পথচারীদের অসুবিধে না-করার উপদেশও দিলেন। যেন ঝালিয়ে নিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুর।

কী বলেছেন মদন?

বলেছেন, ‘‘মানুষের যেন অসুবিধে না হয়। সকাল থেকে না-খেয়ে ব্যাঙ্কে, এটিএমে লাইন দিতে হচ্ছে। দেখবেন, আর যেন বা়ড়তি কোনও অসুবিধে না হয়।’’ এক দিন আগে তাঁকে বাড়িতে দেখতে আসা সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবুর কথাও শুনিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ওই ডাক্তারবাবু নাকি লেক মার্কেট থেকে বাজার করবেন বলে নিরুপায় হয়ে ১০০ টাকা খুচরোয় দু’হাজার টাকা ধার করতে বাধ্য হয়েছেন। সঙ্গী যুবকদের থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলে তাঁকে নাকি কিছুটা সাহায্য করা হয়েছে। মদনের কথায়, ‘‘লোকে কোনও মতে ডালভাত, সেদ্ধ খেয়ে বেঁচে আছে। মাছ-মাংস ভুলেই গিয়েছে! লোকের পকেটে নোট নেই, নোটের অভাবে খুচরো নেই, খুচরোর অভাবে বাজার নেই!’’

এটুকু বক্তব্যের মধ্যেই যা রাজনীতির বার্তা। সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত নেতা আপাতত জামিনে মুক্ত রয়েছেন। নিজের প্রসঙ্গে শুধু বললেন, ‘‘ট্রুথ শ্যাল কাম আউট।’’ সত্য এক দিন প্রকাশিত হবে। তখন তিনি আবার আরও অনেক দিনের জন্য ভবানীপুরের মানুষের মধ্যে সকাল থেকে গভীর রাত, সারা ক্ষণের জন্য ফিরে আসবেন। মানুষ যখন দরকার তখনই তাঁকে পাবে।

স্থানীয় ইউনাইটেড ইয়ুথ ফোরামের এই পুজোর উদ্বোধনে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংসদ তথা নায়ক দেবও। কিন্তু সন্ধের আবহ জুড়ে শুধুই পাড়ার দাদার প্রতীক্ষা। পেল্লায় কার্তিক বিগ্রহ উদ্বোধনের পরে অবশ্য বেশিক্ষণ থাকেননি মদন। ‘জয় কার্তিকঠাকুর কি জয়’— বলে বার কয়েক জয়ধ্বনির পরেই সরে গিয়েছেন। দেব আসেন তারও খানিক ক্ষণ বাদে। নায়ককে ঘিরে উচ্ছ্বাসও ছিল প্রত্যাশিত।

তবে অনেক রাত পর্যন্ত চর্চায় ছিল মদনবাবুর প্রত্যাবর্তনই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madan mitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE