সাত পুরসভার আসন্ন ভোটে আইনশৃঙ্খলার ভার থাকবে রাজ্য সরকারের উপরেই। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ। এর ফলে এক দিকে যেমন কমিশন তার দায় ঝেড়ে ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তেমনই ১৩ অগস্টের পুরভোট প্রহসনে পরিণত হবে বলে সরব বিরোধীরা।
সাধারণ দস্তুর হলো, ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে ভোটের এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ভার চলে যায় নির্বাচন কমিশনের হাতে। শাসক দল যাতে বাড়তি সুবিধা পেতে না পারে তার জন্যেই এই ব্যবস্থা। তার পরেও অবশ্য পক্ষপাতিত্বের বিস্তর অভিযোগ ওঠে। এ রাজ্যে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটও তার ব্যতিক্রম নয়।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন ভোটের সময় পুলিশ-প্রশাসনের উপরে নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করার বদলে কমিশন রাজ্য সরকারের হাতেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েক জন প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য, ‘‘এটা ঠিক যে, কমিশনের আইনে কোথাও লেখা নেই ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা কার হাতে থাকবে। কিন্তু সংবিধানে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাতে ভোট হচ্ছে এমন এলাকায় কমিশনই সর্বেসর্বা।’’ প্রাক্তন কমিশনাররা জানাচ্ছেন, কমিশন বরাবরই আইনশৃঙ্খলার উপর নজরদারি করে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা পাঠায়। এখন কমিশন হাত ধুয়ে ফেললে তার আর কী কাজ রইল, প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন কমিশনারদের কেউ কেউ।
দায়িত্ব কেন ঝেড়ে ফেলতে চাইছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন? অনেকের মতে, গত মে মাসে ৬ পুরসভার ভোটে শাসকদলের তাণ্ডব এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রচুর অভিযোগ জানিয়েছিল বিরোধী দলগুলি। অতীতে মীরা পাণ্ডে যে ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া পঞ্চায়েত ভোট করবেন না বলে অনড় ছিলেন বা শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলে সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় পদ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, সেই রকম দৃঢ়তা অমরেন্দ্রবাবু দেখাতে পারেননি বলেই অভিযোগ। এই অবস্থায় বিরোধীরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কমিশনকে যাতে দোষ দিতে না-পারে, সে জন্যই এমন পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। অমরেন্দ্রবাবু অবশ্য এ দিন বলেন, রাজ্য সরকারই নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে বলে তাঁকে জানিয়ে দিয়েছে। তবে কোথায়, কী ভাবে কত পুলিশ মোতায়েন করা হবে, সেই রিপোর্ট রাজ্য এখনও দেয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া নিয়েও কোনও মন্তব্য করেননি কমিশনার।
কমিশনের এ দিনের ঘোষণায় পুরভোট নিয়ে চিন্তিত বিরোধীরা। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যারা সুরক্ষা দেবে, তারাই তো অরক্ষিত! ফলে কমিশন নিজেই যদি ফেল করতে চায়, তা হলে মানুষকেই ভোটে রুখে দাঁড়াতে হবে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মতে, ‘‘ভোট তো আর হবে না! কমিশন ভোট লুঠের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘ডাইনের হাতে সন্তান তুলে দিলে যা হয়, এ ক্ষেত্রেও তাই হবে।’’
বিরোধীদের আশঙ্কাকে অবশ্য আমল দিতে নারাজ তৃণমূল। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য পুলিশ কাজ করবে। ফলে নিরপেক্ষ ভাবেই ভোট হবে বলে আমরা আশাবাদী।’’
এ দিন ধূপগুড়ি, বুনিয়াদপুর, কুপার্স ক্যাম্প, পাঁশকুড়া, হলদিয়া, দুর্গাপুর এবং নলহাটি পুরসভার নির্বাচন এবং চাঁপদানি ও ঝা়ড়গ্রাম পুরসভার ১২ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছে কমিশন। ১৭ জুলাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। ভোট হবে ১৩ অগস্ট এবং গণনা ১৭ অগস্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy